বছর শেষ হতে চলল। অথচ, হাওড়া জেলায় ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে আগামী অর্থবর্ষের (২০১৪-১৫) প্রস্তাবিত শ্রম বাজেট তৈরির কাজ এখনও শেষই হল না। ওই বাজেটের উপরে ভিত্তি করেই আগামী অর্থবর্ষে কত টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে চাওয়া হবে তা ঠিক করা হয়। জেলাভিত্তিক ওই বাজেট তৈরির কাজটি শুরু হয় পঞ্চায়েত স্তর থেকে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ওই বাজেট পঞ্চায়েত স্তর থেকে ব্লক প্রশাসনের কাছে পৌঁছনোর কথা। কিন্তু হাওড়ায় এখনও যে তা হয়নি তা মেনে নিয়েছেন প্রকল্পের জেলা আধিকারিকেরা।
ওই প্রকল্পের এক জেলা আধিকারিক বলেন, “চলতি বছরে পঞ্চায়েত ভোটের পরে নতুন বোর্ড গঠন হয়েছে। প্রধান ও সদস্যেরা বেশির ভাগই নতুন। তাঁদের বিষয়টি বুঝতে কিছুটা সময় লাগছে। তা ছাড়া, আগামী অর্থবর্ষে ওই প্রকল্পের কিছু গুণগত পরিবর্তন হচ্ছে। সেই কারণে বাজেট তৈরিতে দেরি হচ্ছে।” একই বক্তব্য জেলার বহু পঞ্চায়েতের প্রধানেরও।
প্রকল্পের রাজ্য কমিশনার দিব্যেন্দু সরকারও সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “আগামী অর্থবর্ষে প্রকল্পের বেশ কিছু গুণগত পরিবর্তন হওয়ায় বাজেট তৈরিতে সময় লাগছে।” একই সঙ্গে অবশ্য তাঁর আশ্বাস, “ওই কাজ যাতে দ্রুত শেষ হয় তার জন্য প্রধানদের জোর দেওয়া হচ্ছে। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষের জন্য প্রস্তাবিত শ্রম বাজেট পাঠাতে পারব।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম হল আগামী অর্থবর্ষের টাকার জন্য প্রতি বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে প্রস্তাব ও বাজেট তৈরি করে তা ব্লক প্রশাসনের কাছে পাঠাবে পঞ্চায়েতগুলি। ব্লক প্রশাসন সেগুলি খতিয়ে দেখে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পাঠিয়ে দেবে জেলা প্রশাসনের কাছে। জেলা প্রশাসন নভেম্বরের শেষে সেই সব প্রস্তাব পাঠাবে রাজ্য সরকারের কাছে। রাজ্য সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে তা পাঠিয়ে দেবে কেন্দ্রের কাছে। ওই প্রস্তাব ও বাজেট দেখে টাকা বরাদ্দ করবে কেন্দ্র। কিন্তু হাওড়াতে প্রথম ধাপের কাজই এখনও অসমাপ্ত।
কী ভাবে তৈরি হয় শ্রম বাজেট?
পঞ্চায়েত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও প্রকল্পে কত টাকার কাজ হবে, তাতে কত জন শ্রমিক কাজ করবেন এবং তার জন্য কত টাকা খরচ হবে এই সব বিষয়ই-ই থাকে শ্রম বাজেটে। কিন্তু জেলার অধিকাংশ পঞ্চায়েতই এখনও সেই কাজ করে উঠতে না পারায় চিন্তায় রয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
চলতি বছরে পঞ্চায়েত ভোটের পরে নির্বাচিত প্রধান ও পঞ্চায়েত সদস্যদের ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প-সহ নানা ধরনের প্রশিক্ষণ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। তার পরেও বাজেট তৈরিতে প্রধানদের অধিকাংশেরই তেমন উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না বলে মেনে নিয়েছেন প্রকল্পের জেলার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিককেরা।
কেন বাজেট তৈরিতে দেরি হচ্ছে?
বহু পঞ্চায়েতের প্রধানরাই এ জন্য আগামী অর্থবর্ষে প্রকল্পের কিছু গুণগত পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ওই সব পরিবর্তনের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখতেই সময় লাগছে তাঁদের। তবে, তাঁদের আশা, কিছু দিনের মধ্যেই ব্লক প্রশাসনের কাছে বাজেট জমা দিতে পারবেন।
রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী অর্থবর্ষে ১০০ দিনের কাজে এমন প্রকল্প তৈরিতে জোর দেওয়া হচ্ছে, যাতে একটি পরিবারের যত জনের ‘জব কার্ড’ রয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই যেন কাজ পান এবং পারিবারিক সম্পদ তৈরি হয়। যেমন, শৌচাগার নির্মাণ। বর্তমানে দেশ জুড়ে প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য ‘নির্মল ভারত’ অভিযান চলছে। ওই অভিযানকেও এ বার ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে। প্রকল্পে বলা হয়েছে, শৌচাগার তৈরির জন্য বরাদ্দ হচ্ছে মোট ১২ হাজার টাকা। ৮০০০ টাকার উপকরণ সরকার থেকে দেওয়া হবে। বাকি চার হাজার টাকা শ্রমিকেরা ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে পেয়ে যাবেন। এই ভাবে পারিবারিক স্থায়ী সম্পদও তৈরি হবে। |