প্রবন্ধ ২...
পুরুষ বলে ভয় হচ্ছে
যে আইনের বলে তরুণ তেজপাল গারদের ও পারে, সেই আইন কতটা ‘কালা’, সে কূটতর্ক এই নিবন্ধের মূল প্রতিপাদ্য নয়। তা ছাড়া, দীর্ঘ কাল ধরে এ দেশের নারী ঘরে-বাইরে যে ভাবে অত্যাচারিত তাতে তার হাতে এই অস্ত্র তুলে দেওয়াটা সুস্থ গণতন্ত্রের স্বার্থেই প্রয়োজন ছিল। তেজপাল বা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় যে অভিযোগে অভিযুক্ত, তার সারবত্তা খতিয়ে দেখবে আদালত।
কিন্তু তার আগে জনতার আদালতে একাকার হয়ে গিয়েছে মুড়ি আর মিছরি! যেমন, রাস্তাঘাটে-মেট্রো রেলে-ভিড়ের বাসে যে পুরুষপুঙ্গবেরা মেয়েদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করে থাকে, তাদের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলা হচ্ছে সামগ্রিক ভাবে পুরুষদেরই। রাস্তাঘাটে-পরিচিত মহলে ইতিউতি মন্তব্য শোনা যাচ্ছে, ‘পুরুষদের চিনতে কি আর বাকি আছে? কত তেজপাল চার দিকে!’
নারীমাত্রেই এ কথা বলছেন, তা নয়। এটাও ঘটনা যে, পুরুষ মাত্রেই ‘তেজপাল’, এ কথা মেয়েরাও বিশ্বাস করেন না! কিন্তু ভয় হয়, কোথায় যেন নারী ও পুরুষের মধ্যে বিশ্বাসের ভিতটা নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে! মিথ্যে ভয়? তা যদি হয়, পুরুষ হিসেবে, সুস্থ পুরুষ হিসেবে সুখী হব। কিন্তু তা যদি না হয়? এত কাল যে বন্ধুদের হাত ধরেছি নির্দ্বিধায়, চুল ধরে টেনেছি, যাদের পিঠে চাপড় মেরে বলেছি, ‘চল, চা খেয়ে আসি’ (তারা নারী, স্রেফ সে জন্য এই কাজ করিনি), সেই তারাই যদি কাল ভাবে...!
জানি, সেই বন্ধুরাই এ বার বলবে, এত দিন ধরে তা হলে কী চিনলে? তোমার নিজের ভাবনাই তা হলে নড়বড়ে, তাই তোমার এমন আশঙ্কা হচ্ছে! না হলে ভয় পাবে কেন? কেন পাচ্ছি, জানি না। আসলে, নারীর যেমন ‘চয়েস’ আছে, সে কার সঙ্গে কতটা ঘনিষ্ঠ ভাবে মিশবে, তেমনই এক জন পুরুষেরও তো সেই ‘চয়েস’ আছে সে কোন নারীর সঙ্গে মেলামেশা করবে, কতটা ঘনিষ্ঠ হবে বা হবে না! ‘ঘনিষ্ঠতা’র অর্থ অবশ্যই ‘তেজপাল ফর্মুলা’ মেনে নয়! এই ঘনিষ্ঠতার অর্থ অবাধ মেলামেশার, একসঙ্গে পছন্দের পানীয়ে চুমুক দেওয়ার, লিফটে একাকী দু’জনে দিব্যি উঠে যাওয়ার! এই ঘনিষ্ঠতার অর্থ, ‘এই, মেয়েরা আছে, এখন কোনও বাজে কথা নয়’ ধাঁচের ন্যাকামি-বর্জিত কথা বলার! এই ঘনিষ্ঠতার অর্থ, উল্টো দিকে নারী, স্রেফ এই কথা ভেবে স্বতঃস্ফূর্ততায় লাগাম না পরানো!
তা যদি না হত, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাসঘরে, ক্যান্টিনে, লবিতে, করিডরে, ক্যাম্পাসে প্রতি দিন, দু’বেলা ‘যৌন হেনস্থা’র অভিযোগ উঠত! সহপাঠীরা তাদের সামনে, তাদের উদ্দেশে অশ্লীল গালিগালাজ করেছে বলে সহপাঠিনীরাই অভিযোগ আনত! কিন্তু তা ওঠে না। কেন? কারণ, বন্ধুদের সামনে, একমাত্র বন্ধুদেরই অবলীলায় গালিগালাজ করা যায়! যারা ছোট্টবেলা থেকে একসঙ্গে ক্লাসঘরে যায়, অথবা ক্লাসঘরে গিয়ে বড়বেলার বন্ধু হয়, তারা আলাদা করে ভাবে না, তারা ছেলে না মেয়ে!
কর্মক্ষেত্রে, বাইরের পৃথিবীতে এই ভাবনা আসে। অভিযোগ ওঠে। কারণ কর্মক্ষেত্রে পদের বা ক্ষমতার অপব্যবহার করা যায়। সেই পদে আসীন ব্যক্তিরা ইচ্ছে করলে অধস্তনকে নানা ভাবে প্রলোভিত করতে পারেন বা ভয়ও দেখাতে পারেন। আর তাঁদের পাশাপাশি বাইরের পৃথিবীতে থাকে দিল্লি বা কামদুনির ধর্ষক, হত্যাকারীরা।
কিন্তু এর বাইরেও যে পুরুষরা থাকেন? মেট্রোয় বা ভিড়ের বাসে, রাস্তাঘাটে মহিলা দেখলেই যাঁদের চোখ কামার্ত হয় না, যাঁদের ইচ্ছা হয় না মেট্রোয় মেয়েদের নামা-ওঠার জায়গায় বিশেষ কায়দায় দাঁড়াতে বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যবহার করতে? ক্ষমতা থাকলেই তার অপব্যবহার করা যাঁদের লক্ষ্য নয়? এই ভয়ঙ্কর অবিশ্বাসের পরিবেশে তাঁদের কথাও একটু ভাবতে বলি। মনে রাখতে বলি, অভব্য পুরুষের থেকে ভব্য পুরুষের সংখ্যাই এই পৃথিবীতে অ-নে-ক বেশি। এখনও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.