হামিদ কারজাইকে লইয়া ওয়াশিংটনের সমস্যার অন্ত নাই। আগামী বছরে আফগানিস্তান হইতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন নেটো বাহিনীর ‘প্রত্যাহার’ সংক্রান্ত একটি চুক্তিপত্র প্রস্তুত হইয়াছে। বহুজাতিক সেনা সরাসরি সংঘাত হইতে অবসৃত হইবার পরেও সামরিক বাহিনীর আট হইতে বারো হাজার সদস্য আফগানিস্তানে নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণের কাজে নিয়োজিত থাকিবে। সেই পর্বান্তরের প্রক্রিয়াটি আইনসিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যেই এই চুক্তি। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট কারজাইয়েরই উদ্যোগে আয়োজিত ‘লয়া জিরগা’য় দেশের দুই সহস্রাধিক গোষ্ঠীপতি এই চুক্তির পক্ষে সায় দিয়াছেন। অথচ কারজাই সহসা জানাইয়াছেন, এই চুক্তি তিনি স্বাক্ষর করিতে চাহেন না, বরং আগামী বছরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরে ইহা সম্পাদিত হওয়া শ্রেয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নির্ধারিত হইয়াছে আগামী এপ্রিল মাসে। প্রথম দফার ভোটে মীমাংসা না হইতে পারে। নির্বাচন দ্বিতীয় পর্বে গড়াইলে আফগানিস্তানে নূতন প্রশাসন গদিয়ান হইতে আরও কয়েক মাস লাগিয়া যাইবে। তাহার পরে চুক্তি সম্পাদন ও সেই অনুসারে সেনা প্রত্যাহার ও পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলি ২০১৪ সালে শেষ করা কার্যত অসাধ্য। এখন আফগানিস্তানে যেটুকু স্থিতি রহিয়াছে, নির্বাচনের পরে তাহা থাকিবে কি না, বলা কঠিন। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমি বাহিনী প্রত্যাহারের পরিকল্পনাটি বিশ বাঁও জলে চলিয়া যাইতে পারে।
আফগানিস্তান হইতে ওবামা সরিয়া যাইতে চাহেন, কিন্তু আফগানিস্তানকে তাহার ভবিষ্যতের হাতে ছাড়িয়া নিশ্চিন্ত মনে চলিয়া যাইবার উপায় তাঁহার নাই। দেশে তালিবান গোষ্ঠীগুলি পুনর্গঠিত হইতেছে, প্রতিবেশী পাকিস্তানের পার্বত্য অঞ্চলে তাহাদের প্রভাব বাড়িতেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের অপসরণের পরে নব্বইয়ের দশকে যাহা ঘটিয়াছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাহার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি লইতে পারে না। সুতরাং চুক্তি না হইলে ‘শূন্য চুক্তি’ই মানিয়া লইতে হইবে, অর্থাৎ আফগানিস্তানকে সম্পূর্ণ অরক্ষিত রাখিয়াই চলিয়া যাইতে হইবে বারাক ওবামার এই চেতাবনিটি যে দর কষাকষির একটি কৌশলমাত্র, ইহাকে কাজে পরিণত করিবার দুঃসাহস বা নির্বুদ্ধিতা তাঁহার নাই, সে কথা কারজাই জানেন। ইতিপূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের সময়সীমা ধার্য করিয়াছিল, কিন্তু গত সপ্তাহে কাবুল সফরে গিয়া মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব বলিয়াছেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করিলেই চলিবে। ২০১৩ যদি ২০১৪ হয়, ফেব্রুয়ারি মার্চ নয় কেন? তাহার পরেও ক্যালেন্ডার থাকিবে।
স্পষ্টতই, হামিদ কারজাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিম দুনিয়ার এই উভয়সংকটের সুযোগ লইতে তৎপর। তিনি চাহেন, চাপ দিয়া যথাসম্ভব সময় এবং সুযোগ আদায় করিয়া লইতে। এই উদ্যোগে তাঁহার একটি নূতন অস্ত্রের নাম: ইরান। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব যখন কাবুলে, প্রায় একই সময়ে তিনি তেহরান সফর করিয়াছেন। সেখানে ইরানের সহিত সহযোগিতার নূতন নীল নকশার খসড়া রচিত হইয়াছে। এই সহযোগিতা ইরানের পক্ষেও গুরুত্বপূর্ণ, ভূ-রাজনীতিগত কারণে তাহার নিকট আফগানিস্তানের মতো প্রতিবেশীর গুরুত্ব বাড়িতেছে। এই জটিল পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক পদক্ষেপ করিতে হইবে। কারজাই-উত্তর আফগানিস্তানের সহিত সম্পর্ক কী ভাবে নির্মাণ করা যায়, তাহাই আপাতত ওয়াশিংটনের বিবেচ্য। |