চরভাসি/১
বন্যার পূর্বাভাস না মেলাই বড় সমস্যা ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে
কাশে কালো মেঘ দেখলেই আঁতকে ওঠেন রুকসানা বিবি! আবার কি তল্পি-তল্পা গুটিয়ে পালানোর সময় এল!
গত দেড় দশকে কমপক্ষে ছ’-সাতবার খাপরা-দরমার দু’কামরার ঘর গিলে নিয়েছে ব্রহ্মপুত্র। বিশেষ করে ২০০৮-এর বন্যার কথা এখনও ভুলতে পারেন না মধ্য তিরিশের রুকসানা। ঘন অন্ধকারে স্বামী-সন্তানের হাত ধরে প্রাণটা বাঁচাতে পারলেও গরু-ছাগল, বাস্তুভিটে, ধানিজমি সবই হারিয়েছে ব্রহ্মপুত্রের গভীরে। রুকসানাদের ভরসা এখন প্রতিবেশী, আত্মীয়রাই। তাঁদেরই আনুকূল্যে চর বীরসিংহের এক কোণায় মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন। কিন্তু ফি বছর বর্ষা আসতেই রাতের ঘুম উবে যায় তাঁর।
অসমে মোট চরভূমির আয়তন প্রায় সাড়ে তিন হাজার বর্গ কিলোমিটার। তারই মধ্যে এই বীরসিংহ। বছরে অন্তত দু’বার বানভাসি হয়। অসম সরকারের তথ্য বলছে, এ বার প্রথম বন্যাতে কেবল ধুবুরি জেলাতেই ক্ষতিগ্রস্ত কম-বেশি কুড়ি হাজার মানুষ। নষ্ট হয়েছে প্রায় ৭০০ হেক্টর জমির ফসল।
কেন এত বন্যা? পলি সমস্যা তো রয়েছেই, ভূতত্ত্ববিদদের একাংশের মতে পঞ্চাশের দশকের ভূমিকম্পের পর থেকে নদী তার রাস্তা পরিবর্তন করেছে। তার পর থেকেই উজানি অসমে তীব্র হয়েছে বন্যার সমস্যা। অসম সরকারের মতে, রাজ্যের প্রায় ন’লক্ষ হেক্টর কৃষিজমি প্রতি বছর বন্যার কবলে পড়ে। ফি বছরে ফসল নষ্ট হয় ১২৫ কোটি টাকার কাছাকাছি।
স্কুল থেকে ডাকঘর! মায় পুলিশ স্টেশন। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন বেবাক গিলে নেয় সব কিছু। ললাট লিখন মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন প্রান্তিক মানুষগুলি। একশো দিনের কাজ, খাদ্য সুরক্ষার গন্ডির অনেক দূরে বাস তাঁদের। বর্ষায় সামান্য যা ধান হয়, তা-ও প্রায় প্রতি বছরই বন্যায় নষ্ট হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় ধুবুরি শহর-নির্ভর মজদুরিও। ফলে অভাবের চরে মলিনতা ছড়িয়ে থাকে সারা বছরই।
অথচ রুকসানাদের জীবনে ব্রহ্মপুত্রের বিরাট ভূমিকা। ব্রহ্মপুত্র এঁদের সব দিয়েছে। আবার ব্রহ্মপুত্রই সব কিছু কেড়ে নেয়। সেই অনিশ্চয়তা থেকে কবে মুক্তি পাবেন, জানেন না রুকসানারা। যদিও স্থানীয় বাসিন্দা থেকে সরকারি অফিসার সকলেই মনে করেন বন্যার সঠিক পূর্বাভাস পেলে অনেকাংশে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচা যেত।
১৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রহ্মপুত্র তিব্বত থেকে চিন হয়ে অরুণাচলের কাছে ভারতে ঢুকেছে। অসম হয়ে চলে গিয়েছে বাংলাদেশে। প্রতিবেশী দেশগুলি কিন্তু নদী সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়ে মোটেই আন্তরিক নয় বলে অভিযোগ বিভিন্ন মহলের।
গত মে মাসে চিনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াং-র ভারত সফরের সময় এ বিষয়ে দিল্লি ও বেজিং-র মধ্যে একটি মউ স্বাক্ষর হয়েছে। বলা হয়েছে, বর্ষায় বিশেষ করে বন্যার সময় (১ জুন-১৫ অক্টোবর) ভারতকে ব্রহ্মপুত্রের জলের গতিবিধি নিয়ে ফি দিন তথ্য জোগাবে চিন। কেন্দ্রীয় জলসম্পদমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত বলেন, “ব্রহ্মপুত্রের জলের স্তর, তাদের এলাকায় কী পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে বা চিন কী পরিমাণ জল ছাড়ছে, সে বিষয়ে প্রতি দিন সকাল ও সন্ধ্যায় আটটায় সর্বশেষ তথ্য দেওয়ার কথা।” কিন্তু মন্ত্রকের অভিযোগ, নিয়মিত ভাবে তথ্য আসেনি ভারতের কাছে।
মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, শুধু বর্ষা নয়, সারা বছরের জন্য ব্রহ্মপুত্র সম্পর্কিত তথ্য প্রয়োজন। নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রের ব্যাখ্যা, “একটি নদীর চরিত্র বুঝতে গেলে সারা বছরের তথ্য প্রয়োজন। বিশেষ করে গরমের সময়ে নদীর জলের পরিমাণ কী থাকছে, নদী অববাহিকাতেও বা এর প্রভাব কী পড়ছে তা জানা প্রয়োজন।” তবেই বন্যা রোধে সার্বিক পরিকল্পনা করা সম্ভব। যত দিন তা না হচ্ছে, তত দিন অদৃষ্টের হাতে নিজেদের সঁপে দেওয়া ছাড়া অন্য রাস্তা বোধহয় খোলা নেই রুকসানাদের!

(চলবে)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.