|
|
|
|
শুধু ভিআইপি নয়, পুলিশ সুরক্ষা দিক মেয়েদেরও: কোর্ট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মাস ছয়েক আগে ভিআইপিদের দেহরক্ষায় যথেচ্ছ নিরাপত্তা কর্মীর ব্যবহার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার লালবাতির অপব্যবহার নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলার সূত্র ধরে ফের সেই প্রসঙ্গ টেনে এনেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তাদের মন্তব্য, দেশের তথাকথিত ভিআইপি নিরাপত্তায় যে নিয়মিত সংখ্যক পুলিশ ব্যবহার করা হয়, তাঁদের আরও বেশি গঠনমূলক কাজে, বিশেষ করে রাস্তায় মহিলাদের সুরক্ষায় ব্যবহার করা উচিত।
গত বছর ডিসেম্বরে দিল্লির চলন্ত বাসে এক যুবতীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পরে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেন উত্তরপ্রদেশের এক বাসিন্দা। তাঁর অভিযোগ ছিল, ভিআইপিদের নিরাপত্তাতেই পুলিশ বেশি ব্যস্ত থাকে। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা পান না। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই ভিআইপিদের নিরাপত্তা দেওয়ার প্রবণতায় অসন্তোষ প্রকাশ করে এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার লালবাতি ব্যবহার সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলায় ফের সেই প্রসঙ্গ তুলে আনল বিচারপতি জি এস সিঙ্ঘভির বেঞ্চ।
এই মামলার শুনানিতে আবেদনকারীর পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে আইনজীবী হরিশ সালভে প্রশ্ন তোলেন, ভিআইপিদের পিছনে দলে দলে নিরাপত্তা রক্ষীর ব্যবহার কি সংবিধানসম্মত? দেহরক্ষী দেওয়ার আগে কি সংশ্লিষ্ট ভিআইপির জীবনের ঝুঁকি খতিয়ে দেখা হয়, প্রশ্ন সালভের। রাজ্য পুলিশের একাধিক কর্তা সালভের এই সওয়াল পরোক্ষে মেনে নিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, “জেলাস্তরে তিন মাস অন্তর ভিআইপিদের বিপদ-সীমা খতিয়ে দেখা হয়। তারাই রাজ্যের গোয়েন্দা দফতরে (আইবি) নির্দিষ্ট সুপারিশ পাঠায়। সেই সুপারিশ মেনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্যের সিকিওরিটি রিভিউ কমিটি।” তবে মূলত রাজনৈতিক নেতাদেরই যে বিপদ-সীমা খতিয়ে দেখা হয়, পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরা অধিকাংশ সময় বিবোচনার বাইরে থাকেন, সে কথাও মেনে নিয়েছেন ওই পুলিশকর্তারা।
ওই জনস্বার্থ মামলায় শুধু ভিআইপি ডিউটিতে কেন এত পুলিশ থাকবে সেই প্রশ্ন তুলেই ক্ষান্ত হয়নি সুপ্রিম কোর্ট, সব রাজ্যের কাছে নোটিস পাঠিয়ে জানতে চেয়েছিল, আমজনতার জন্য কত পুলিশ ব্যয় করছে তারা। ভিআইপি নিরাপত্তাতেই বা কত রক্ষী রয়েছে? ফৌজদারি মামলা চলছে, এমন কত জন সরকারি খরচে নিরাপত্তা পাচ্ছেন, তা-ও জানতে চেয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত।
সেই নির্দেশ মেনে পশ্চিমবঙ্গও নিরাপত্তা রক্ষী সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য পাঠিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের কাছে। স্বরাষ্ট্র দফতরের সূত্র বলছে, এ রাজ্যের ১৬৯৮ জন ভিআইপি-র নিরাপত্তা দিতে ২৯৫২ জন রক্ষী বরাদ্দ করেছে সরকার। ওই তালিকায় যেমন প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিক ও বিচারপতিরা আছেন, তেমনই আছেন চাকুরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্তারাও। রাজ্য প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “সাধারণ প্রশাসনে (সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অধিকাংশ আমলাকে দেহরক্ষী দেওয়া হয় না। জেলায় কর্তব্যরত অবস্থাতেই নিরাপত্তা রক্ষী জোটে। কিন্তু পুলিশকর্তারা অবসরের পরেও এক বা দু’জন দেহরক্ষী রেখে দিয়েছেন।”
সরকারি হিসেবই বলছে, এ রাজ্যে প্রতি ১৬৫৮ জন মানুষের পাহারায় রয়েছে মাত্র এক জন পুলিশ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন ব্যুরো অব পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ ক্ষেত্রে বিহার, গুজরাত ও উত্তরপ্রদেশের চেয়েও পিছিয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “এই তথ্যই ইঙ্গিত দিচ্ছে, তুলনামূলক ভাবে এ রাজ্যের মানুষ অনেক কম পুলিশি নিরাপত্তা পান।”
রাজ্য পুলিশের এক কর্তা এ দিন বলেন, “নির্দিষ্ট আইন মেনেই ভিআইপিদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের পরে তাদের সরানো হলে ভালই হবে। কিন্তু কী ভাবে তা সম্ভব, তা রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরকেই ঠিক করতে হবে।” |
|
|
|
|
|