হলদিয়া পেট্রোকেমের আর্থিক স্বাস্থ্য ফেরার আশা সেই তিমিরেই। উল্টে আর এক প্রস্ত আইনি জটে জড়িয়ে গেল সংস্থার দুই প্রধান অংশীদার, রাজ্য সরকার ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, বিতর্কিত ১৫.৫ কোটি শেয়ার হস্তান্তর নিয়ে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যাওয়ার ব্যাপারে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি পেয়েছে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। ফলে রাজ্য সরকারের তরফে শেয়ার বিক্রি করে পেট্রোকেমের হাল ফেরানোর ক্ষেত্রে নতুন করে তৈরি হল আইনি জট।
এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য জানিয়েছে, পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে আইনি পরামর্শ নিচ্ছে তারা। শিল্পমন্ত্রী তথা হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের চেয়ারম্যান পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যেখানে অংশীদার হিসেবে ধুঁকতে থাকা সংস্থাকে বাঁচানোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য, সেখানে শুধু আইনি বিবাদে জড়িয়ে সময় ও অর্থ, দুইয়েরই অপচয় হচ্ছে।”
পেট্রোকেমে নিজেদের সাড়ে ৬৭ কোটি শেয়ারের মালিকানা বিক্রির জন্য অক্টোবরেই নিলাম ডেকেছিল রাজ্য। সেখানে একমাত্র দর দিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল। কিন্তু নিলামের আগে থেকেই চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর বক্তব্য ছিল, ওই সাড়ে ৬৭ কোটি শেয়ারের মধ্যে ১৫.৫ কোটির মালিকানা কার, তা নিয়ে এখনও মামলা ঝুলে আছে। তাই ওই শেয়ার নিজের বলে নিলামে চড়াতে পারে না রাজ্য। কার্যত ওই শেয়ারের অধিকারই দাবি করতে চায় চ্যাটার্জিরা।
২০১২-র মার্চে সংস্থার ওই ১৫.৫ কোটি শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়ে নিজস্ব অবস্থান জানতে ‘ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ আর্বিট্রেশন’ বা আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের দ্বারস্থ হয় চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। কাগজপত্রও জমা দেন প্যারিসের ‘ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ আর্বিট্রেশন’ -এ (যা ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্সের অন্তর্গত)। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে যায় সংস্থা। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল ও বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ ওই স্থগিতাদেশ দিয়ে জানিয়েছিলেন বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় শুনানির শেষে চুড়ান্ত রায় দেবেন।
গত ডিসেম্বরে আর্ন্তজাতিক সালিশি আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই বলে রায় দেন বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়। সেই রায়ের পরে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর তরফ থেকে দাবি করা হয়, কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, ‘টেকনিক্যাল’ কারণে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যাওয়া যাবে না। কিন্তু ১৫.৫ কোটি শেয়ারের অধিকার চেয়ে দেশের আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। অর্থাৎ তাদের দাবি, এই রায় চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর অধিকার নস্যাৎ করেনি।
এ দিকে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্য সরকার ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিতর্কিত ১৫.৫ কোটি শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না। ১৬ ডিসেম্বর ফের শুনানি হবে। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় ও শিল্প নিগমের পক্ষে আইনজীবী প্রতাপ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বাজার দরে শেয়ার বেচতে না-পারলে হলদিয়াকে বাঁচানো সম্ভব নয়। এখন সেই অনুমতিরই প্রতীক্ষায় সংস্থা ও রাজ্য সরকার।
|