বাংলোর জন্য কি বিবেকও বিসর্জন, প্রশ্ন বিচারপতির
পুলিশের ভূমিকায় ফের ক্ষোভ প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট। বোলপুরের কসবা এলাকায় তৃণমূলকর্মী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষ খুনের ঘটনায় সিআইডি তদন্তের আর্জি সংক্রান্ত মামলায় পুলিশের বিবেক নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ভর্ত্‌সনার মুখে পড়ে সরকারি আইনজীবী এজলাসেই স্বীকার করলেন, এই ঘটনায় ‘লোভ’ কাজ করেছে।
পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগে বীরভূমের পারুই থানার বাঁধ নবগ্রামে খুন হন সাগরবাবু। তাঁর ছেলে হৃদয় স্থানীয় কসবা পঞ্চায়েতে নির্দল প্রার্থী (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) হিসাবে লড়ছিলেন। ঘটনায় প্রথম থেকেই জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। নিহতের পুত্রবধূ শিবানী ঘোষের দায়ের করা অভিযোগে নাম রয়েছে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলেরও। নিহতের পরিবারের আরও দাবি, প্রকৃত দোষীদের না ধরে পুলিশ নিরপরাধদেরই গ্রেফতার করেছে।
সম্প্রতি এই ঘটনার সিআইডি তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন অন্যতম তিন অভিযুক্ত নেপাল রায়, নবকৃষ্ণ রায় ও মানস রায়। তাঁদের দাবি, পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা শুরু করেছে। ঘটনার রাতেই পুলিশ যে চার জনকে গ্রেফতার করেছিল, তাঁরা হলেন নিহত সাগরবাবুর নাতি, স্কুলছাত্র প্রিয়রঞ্জন ঘোষ এবং ওই গ্রামেরই বাসিন্দা নেপালবাবু, তাঁর ভাই নবকৃষ্ণ ও ছেলে মানস। তাঁদের নাম অবশ্য শিবানীদেবীর অভিযোগপত্রে ছিল না।
এ দিন মামলার শুনানিতে বিচারপতির নির্দেশে এজলাসে হাজির হন সাগরবাবুর স্ত্রী সরস্বতী ঘোষ, ছেলে হৃদয় ও বউমা শিবানী। বিচারপতি সরস্বতীদেবীর কাছে জানতে চান, আততায়ীদের কাউকে তিনি দেখেছিলেন কিনা। সরস্বতীদেবী বিচারপতিকে জানান, খুনের সময়ে ঘরের ভিতর যারা ঢুকেছিল, তিনি তাদের মধ্যে দু’জনকে চেনেন। তিনি আরও জানান, খুনের ঘটনার পরে পাড়ুই থানার পুলিশ তাঁকে দিয়ে সাদা পাতায় সই করিয়ে নিয়ে যায়। পরে তাতে পুলিশ নিজেদের মতো করে এফআইআর লেখে। হামলাকারীদের মধ্যে আরও দু’জনকে তিনি চিনতে পেরেছিলেন বলে শুনানির সময় দাবি করেন শিবানীদেবীও।
তখন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় ভর্ত্‌সনার সুরে সরকারি আইনজীবী শাক্য সেনের উদ্দেশে মন্তব্য করেন, “প্রতি দিন পুলিশের বিরুদ্ধে এমন সব অভিযোগ কেন শুনতে হচ্ছে? এমন হচ্ছে কেন, তা বলতে পারেন?” উত্তরে সরকারি আইনজীবী বলেন, “সর্বত্র একটা সামাজিক অবক্ষয় চলছে। সব জায়গাতেই কিছু পরজীবী ঢুকে পড়েছে। এটা সার্বিক অবস্থার লক্ষণ। এখানে লোভ কাজ করছে।” এর পরেই বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় শাক্যবাবুকে বলেন, “বাড়ি বা বাংলোর জন্য নিজের বিবেককে বিসর্জন দিতে হবে? মনে রাখবেন, এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
হৃদয়বাবু এ দিন মন্তব্য করতে চাননি। বর্তমানে জামিনে মুক্ত নেপালবাবুর দাবি, “আমরা নির্দোষ। পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করছে। আমরা তাই সিবিআই বা সিআইডি-র মতো কোনও সংস্থাকে দিয়ে ঘটনার তদন্ত ভার দেওয়ার দাবি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।” অন্য দিকে, এ দিন আদালতে যে চার জনের নাম সরস্বতীদেবী ও শিবানীদেবী নিয়েছেন, তাঁদের এক জনেরও দাবি, “আমি ওই ঘটনায় কোনও ভাবেই যুক্ত নই। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।” বীরভূমের এসপি সি সুধাকর বলেন, “তদন্তের বিষয়ে মন্তব্য করব না।” কাল, বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.