শহরের লোক সংখ্যা বাড়লেও, বাড়েনি শহরের আয়তন। ফলে সরু রাস্তা দিয়ে শহরে ঢোকার সময় নাজেহাল অবস্থা হচ্ছে, এমনই অভিযোগ কালনা শহরবাসীর। দিন দিন বাড়ছে যানজট। বাসিন্দাদের দাবি, সমস্যা সমাধানে কড়া পদক্ষেপ করা হোক প্রশাসনের তরফে।
কালনা শহরের পুরাকীর্তি দেখতে শুধু জেলার মানুষরাই নয়, জেলার বাইরে থেকেও প্রচুর মানুষ আসেন, এমনটা জানিয়েছেন কালনার বাসিন্দারা। অথচ শহরে ঢোকার বেশির ভাগ রাস্তাই অত্যন্ত সরু। আদালত, মহকুমাশাসকের অফিস, ভূমি সংস্কার দফতর, মুখ্য ডাকঘর, স্টেডিয়াম, পাইকারি বাজার, মৎস্য দফতর-সহ বহু সরকারি কার্যালয় এই শহরেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বছরের পর বছর নানা ধরনের নির্মাণ কাজের জন্য ক্রমশ সরু হয়ে এসেছে দু’পাশের রাস্তা। এমন অবস্থায় সরু রাস্তা দিয়ে পাশাপাশি দু’টো গাড়ি চলাচল করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। শহরের চকবাজার, শাহু সরকার মোড়, কলেজ চত্বর, ব্যাঙ্ক বাজার-সহ বেশ কিছু এলাকায় সকাল হতে না হতেই শুরু হয়ে যায় যানজট। এ ছাড়া সকাল ৯টার পর শহরে লরি, ম্যাটাডরের ঢোকার নিয়ম নেই। কিন্তু সেই নিয়মকে তোয়াক্কা না করে সারা দিনই চলাচল করে লরি, ম্যাটাডর। ফলে সরু রাস্তায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে যানগুলি। |
কালনা শহরের এক বধূ রূপা ঘোষের অভিযোগ, মাঝেমাঝে যানজট এমন আকার নেয় যে রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। রাস্তার ধারে বেআইনি নির্মাণ রুখতে প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে, কমতে পারে নিত্য যানজট, এমনটাই মনে করেন তিনি। আর এক বাসিন্দা অচিন্ত্য বর্মন বলেন, “শহরের পুরাকীর্তির জন্য প্রচুর মানুষ বাইরে থেকে আসেন এ শহরে। তাঁদের সামনে মাথা হেঁট হয়ে যায়।” বাসিন্দাদের অভিযোগ, তিন বছর আগে মহকুমা প্রশাসন রাস্তার উপর বেআইনি নির্মাণ রুখতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে একটি মিছিল করে। তাতে শহরকে দখলমুক্ত করার আহবান জানানো হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ফের শহরে বেআইনি নির্মাণ রুখতে কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পুরসভা, পূর্ত দফতর, পুলিশ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মহকুমাশাসক শশাঙ্ক শেঠি বলেন, “পরিকল্পনা অনুযায়ী ধাপে ধাপে বিষয়টি কার্যকরী করা হবে। প্রথমে প্রশাসনিক আধিকারিক নিয়ে মিছিল করে রাস্তা দখলমুক্ত করার কথা জানানো হবে। রাস্তার পাশে বসা ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হবে। এতেও কাজ না হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” শহরের স্টেডিয়ামের সামনে থেকেই দখলমুক্ত করার কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কালনা শহর হকার্স উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ইন্দ্রনীল বসু জানান, শহরে প্রচুর মানুষ রয়েছেন যাঁরা গুমটি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। রাস্তার পাশে দোকান তুলে দেওয়া হলে বিপাকে পড়বেন তাঁরা। সে জন্য সংগঠনের তরফে তিন দফা দাবি জানানো হয়েছে। সেগুলি হল, শহরের কোনও বিশেষ অংশে উচ্ছেদ চলবে না। সঠিক বাজার এলাকায় স্থায়ী পুনর্বাসন। এ ছাড়া, হকারদের উচ্ছেদের কথা না ভেবে শহরের রাস্তায় পাকা বাড়ি, শপিং মলের মতো স্থায়ী প্রতিষ্ঠান আগে ভাঙার কথা ভাবা হোক। এই বিষয়গুলি উপেক্ষা করা হলে আন্দোলন হবে, দাবি তাঁর। |