ব্যাঙ্কের পাওনা আদায়ে বন্দুক হাতে বাউন্সার
নাদায়ী ঋণের টাকা আদায় করতে গিয়ে গৃহকর্ত্রীর মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে গয়না খুলে নেওয়া, নগদ টাকা লুঠ ও মারধরের অভিযোগ উঠল ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (ইউবিআই) পাঠানো ‘রিকভারি এজেন্সি’র কিছু লোকজনের বিরুদ্ধে। বর্ধমান শহরে ভাঙাকুঠি এলাকার ওই ঘটনায় সাত জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
ঠিক এক মাস আগে কলকাতার শর্ট স্ট্রিটে জমি দখল করতে গিয়ে বিরাট ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিল এমনই একটি ‘এজেন্সি’র বাউন্সারেরা। বর্ধমানে যাদের ধরা হয়েছে, শর্ট স্ট্রিটের বাউন্সারদের মতো তারাও প্রায় সকলেই কমবয়েসী। প্রত্যেকের পরনে কালো জামা বা টি-শার্ট ও ট্রাউজার্স, মাথায় কালো ফেট্টি, চোখে কালো চশমা। বেশির ভাগেরই বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনায়। পুলিশ জানায়, তাদের কাছ থেকে দু’টি দেশি ‘ওয়ান শটার’ বন্দুক ও দু’রাউন্ড গুলি পাওয়া গিয়েছে। মঙ্গলবার বর্ধমান সিজেএম আদালতে তোলা হলে তাদের তিন দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বর্ধমান আদালতে ধৃতেরা। ছবি: উদিত সিংহ।
ব্যাঙ্কের ঋণ আদায় করতে সশস্ত্র ‘মাসলম্যান’ পাঠানো চলবে না বলে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে আদালতের। সে ক্ষেত্রে কী করে ব্যক্তিগত সশস্ত্র বাহিনী পাঠানো হল? ইউবিআই কর্তৃপক্ষের দাবি, সোমবার বর্ধমান জেলাশাসকের অনুমতি নিয়েই তাঁরা সম্পত্তির দখল নিতে গিয়েছিলেন। এক ব্যাঙ্ককর্তার কথায়, “অনুমোদিত রিকভারি এজেন্টের লোকেদের নিয়েই আমাদের দুই অফিসার বন্ধক রাখা সম্পত্তির দখল নিতে গিয়েছিলেন। আমরা গুন্ডা নিয়ে যাইনি। কাউকে হেনস্থাও করা হয়নি।”
বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন কিন্তু বলছেন, “ব্যাঙ্কটিকে সম্পত্তির দখল নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ-ও বলা হয়েছিল যে, আইন অনুযায়ী পুলিশের সাহায্য নিয়ে তা করতে হবে। পুলিশ আমায় জানিয়েছে, ব্যাঙ্কটিকে সম্পত্তি দখলের জন্য জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। তারা পুলিশের জন্য অপেক্ষা না করে মস্তান নিয়ে যাওয়াতেই গোলমাল হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাড়ি লাগোয়া মোটরবাইকের শো-রুম করার জন্য ইউবিআই থেকে ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ভাঙাকুঠির শেখ আকবর। তাঁর দাবি, ইতিমধ্যে ৩৫ লক্ষ টাকা শোধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখন ব্যাঙ্ক বলছে, আবার নতুন করে সব টাকা শোধ করতে হবে। ইউবিআই সূত্রে অবশ্য বলা হয়েছে, আকবর মাত্র ৫ লক্ষ টাকা শোধ করেছেন। ২০০৮ সালের জুন থেকে ওই ঋণ অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ) হয়ে পড়ে রয়েছে। ব্যাঙ্কের মোট পাওনা প্রায় ৫১ লক্ষ টাকা।
আকবরের স্ত্রী আলমা বেগমের অভিযোগ, “সোমবার দুপুরে কালো জামা-প্যান্ট-চশমা-ফেট্টি পরা ১৪-১৫ জন যুবক বাড়িতে ঢুকে মারধর ও লুঠপাট শুরু করে। আমার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে হাত, গলা ও কানের সোনার অলঙ্কার ছিনিয়ে নেয়। আমার স্বামীকে রড দিয়ে মারা হয়। কেড়ে নেওয়া হয় বাড়িতে থাকা নগদ সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা। শো-রুমেও লুঠপাট চালানো হয়।” আলমার চিৎকার শুনে পাড়াপড়শি ছুটে আসেন। পুলিশে খবর যায়। পুলিশ গিয়ে সাত জনকে গ্রেফতার করে। যদিও ব্যাঙ্কের কোনও কর্মীকে ধরা হয়নি।
পুলিশ জানায়, ‘রিকভারি’ দলের নেতা জিয়ারুল হকের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনায় বারাসত থানার জয়পুর মেটেপাড়ায়। আর এক ধৃত সরিফুল মণ্ডলের বাড়িও সেখানেই। প্রসেনজিৎ ঘোষ, সুদীপ মণ্ডল, বুবাই শীল নামে তিন জনের বাড়ি কেষ্টপুরে। ভব দাস নামে এক জনের বাড়ি বীজপুর থানার হালিশহরে, গৌর প্রামাণিকের বাড়ি তপসিয়ার গোবরায়, সমৃদ্ধ ভাদুড়ির বাড়ি বাগুইআাটিতে। জেরায় তারা জানিয়েছে, কাজে সফল হলে তাদের মোটা টাকা ‘কমিশন’ পাওয়ার কথা ছিল। ইউবিআই-এর বর্ধমান শাখা অবশ্য দাবি করেছে, বিষয়টি তাদের জানা নেই।
ইউবিআই কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেন, জেলাশাসকের অনুমতি নিয়ে সোমবার ব্যাঙ্কের লোকেরা সম্পত্তির দখল নিতে গিয়ে দেখেন, বাড়িতে তালা মারা। তখন ব্যাঙ্কের অফিসাররা আকবরকে টেলিফোন করে জানান যে, তাঁরা বন্ধক রাখা সম্পত্তির দখল নিতে এসেছেন। খানিক বাদে আকবর তাঁর উকিল ও কয়েক জন কনস্টেবল নিয়ে হাজির হন। ব্যাঙ্কের এক কর্তার অভিযোগ, “ব্যাঙ্কের অফিসারদের পুলিশ কোনও সাহায্য তো করেইনি, উল্টে তাঁদের থানায় নিয়ে যায়। তবে ব্যাঙ্কের কোনও অফিসারের নাম এফআইআর-এ নেই।”
ইউবিআই কর্তৃপক্ষের আরও অভিযোগ, বন্ধক রাখা সম্পত্তির দখল নেওয়ার জন্য জেলার পুলিশ সুপারের কাছে এক বছর ধরে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের কাছ থেকে কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। যা উড়িয়ে দিয়ে বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “এক বছর আগে নয়, জেলাশাসকের অনুমতি পেয়ে নভেম্বরের শেষে ওরা আমার কাছে অনুমতি চেয়েছিল। তখন পুলিশ কম থাকায় বলেছিলাম, জানুয়ারিতে সাহায্য করব।”
একই কথা জানিয়ে বর্ধমান থানার আইসি দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের পাল্টা প্রশ্ন, “তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে এক বছর আগে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল, তাতেও কি বাউন্সার নিয়ে সম্পত্তি দখল নিতে যাওয়া সঙ্গত?” পুলিশ সুপার বলেন, “আমরা যদি জানতে পারি, ব্যাঙ্কের কোনও অফিসার এই ঘটনায় জড়িত, তাঁকেও গ্রেফতার করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.