দিনের পর দিন রোগী-পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ জমা হচ্ছিল বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে। অভিযোগ যে সত্যি, তা সরেজমিন দেখেছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। সঙ্গে সঙ্গে তিনি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে বলেছিলেন হাসপাতাল সুপারকে। তার পরেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। শনিবার চিকিৎসকদের অনুপস্থিত নিয়ে বিক্ষোভ দেখান রোগীর আত্মীয় ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুদের চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন বোলপুর এবং নানুর এলাকার কয়েকজন মহিলা। অভিযোগ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক আসেননি। এর পরেই দুপুর ১২টা নাগাদ বিক্ষোভ শুরু হয় হাসপাতালে। অসীমা সাহা, সিপু সাহা, সাহানারা বিবি, নাজমা বেগম, সুমনা বিবি, ফুলকলি বেগমদের ক্ষোভ, “শিশুদের এই সময়টা ঠান্ডা, কাশি লেগেই থাকে। কোনও কোনও সময় শ্বাসকষ্টও হয়। এমনই বেশ কিছু শিশুর জ্বর, পায়খানা, বমি এবং শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলাম। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। বাধ্য হয়ে হাসপাতালের সুপারকে বিষয়টি জানাই।” তাঁদের অভিযোগ, শুধু শনিবারই নয়, সপ্তাহের প্রায় পাঁচ দিন এমনই রোগী পরিষেবা নিয়ে বেনজির কাণ্ড হয় বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, “চিকিৎসকেরা মাসের পর মাস নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন না। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ জায়গায় পর্যন্ত চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও সুরাহা হইনি।” তাঁদের আশঙ্কা, হাসপাতালের চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি, রোগী পরিষেবা নিয়ে যে কোনও সময়ে বড় ধরনের ঝামেলা হতে পারে। তাতে আইনশৃঙ্খলার অবনতিও হতে পারে।
চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির কারণে যে কোনও সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে শনিবার হাসপাতালের সুপার প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠকও করেছেন তাঁরা। তৃণমূল নেতা রাজা রায় বলেন, “চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকায় ওই দিন রোগীর আত্মীয়রা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। অবস্থা বেগতিক বুঝে আমরা হস্তক্ষেপ করেছি। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল সুপারের বিশদে কথা হয়েছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।” বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, “চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির অভিযোগ তুলে রোগীর আত্মীয়রা লিখিত ভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে দেখছি। পাশাপাশি গোটা ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।” |