বুঝে পাচ্ছি না, কী লিখব? বুঝে পাচ্ছি না, ভারতের কোন কোন দিকগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করা উচিত? দু’টো ম্যাচ থেকে কোন পজিটিভ তুলে আনব, যা থেকে কি না শেষ ম্যাচে অন্তত সম্মানরক্ষার স্বপ্ন দেখা যায়?
আমার কাছে উত্তর নেই।
কারণ, এই দু’টো হার থেকে কোনও পজিটিভই নেওয়ার নেই!
খেলায় হারা-জেতা থাকে। ক্রিকেটেও আছে। কিন্তু বরাবর দেখেছি, হারলেও একটা ম্যাচ থেকে কিছু-কিছু ইতিবাচক দিক নিতে পারে টিম। যেগুলো পরবর্তী ম্যাচে অক্সিজেন দেয়। জো’বার্গ আর ডারবানে যে দু’টো ম্যাচ দেখলাম, তাতে সে সবের কোনও জায়গা নেই। সত্যি বলতে, ভারতকে দেখে মনেই হচ্ছে না টিমটা ওয়ান ডে র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর! এটা এক নম্বরের নমুনা! আরে, দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনাররা যা রান তুলে দিচ্ছে, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা তো এগারো জন মিলেও সেটা তুলতে পারছে না! স্কোরবোর্ডটা দেখুন। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম উইকেটে তুলল ১৯৪। আর আমরা? ১৪৬ অল আউট! |
ডারবানে রোহিত বাঁচলেন রান আউট হতে হতে। ভারত কিন্তু বাঁচেনি। ছবি: এএফপি। |
দলটায় কিলার ইন্সটিঙ্কট্ বলে কোনও ব্যাপার নেই। মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়ার যেন ইচ্ছে নেই। পাল্টা লড়াইয়ের চেষ্টা নেই। স্টেইন-স্মিথদের দেশে আরও কঠিন টেস্ট সিরিজের আগে আতঙ্কিতই লাগছে সব কিছু দেখে! অনেকে বলতে পারেন, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এসে মাত্র দু’দিন নেট করে ভারতকে দু’টো ওয়ান ডে ম্যাচ খেলতে হল। ঠিক। এটা অন্যায়। কিন্তু কোনও ভাবেই সিরিজ হারের অজুহাত হতে পারে না। দক্ষিণ আফ্রিকায় তোমরা যখন নতুন এসেছ, তোমাদের উচিত ক্রিজে সময় কাটানো। বোঝা উচিত, এটা ভারতীয় উপমহাদেশের উইকেট নয়। যেখানে তুমি ছোট থেকে খেলে এসেছ। যেখানকার উইকেট তোমার চেনা, যেখানে প্রথম বল থেকে তুমি চালাতে পারো। সোজাসুজি বলছি, ভারতীয় টিমকে দেখে মনে হচ্ছে না, ওরা বুঝতে পেরেছে দেশটা ভারত নয়, দক্ষিণ আফ্রিকা। রবিবার সামনে সাড়ে তিনশো রানের টার্গেট ছিল না। ২৮০ ছিল। যেটা ওয়ান ডে ক্রিকেটে খুব একটা আহামরি রান নয়। রবিবার ইচ্ছে করলে ভারতীয়রা সময় নিতে পারত। ক্রিজে আগে ‘সেটল্’ হতে পারত। আমি বলছি না, নেমে পুরো খোলসে ঢুকে যাও। কিন্তু তুমি ১০ বলে ১ রান করো না, পিচটাকে বুঝে নাও না কে বারণ করেছে? ক্রিজে থাকলে পরে তো এমনিই রান উঠবে। কিন্তু সে সব না করে ভারত বেসিকটাই ভুলে যাচ্ছে।
সবচেয়ে খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে, ডেল স্টেইন বা মর্নি মর্কেলরা এ দিন এমন কিছু বল করেনি যা খেলা যায় না। সব ক’টা ‘সফট্ ডিসমিসাল’। শিখর ধবনকে দেখুন। ওপেন করতে নেমে দ্বিতীয় বলেই অপ্রয়োজনীয় শট খেলে ক্যাচ তুলে চলে গেল। বিরাট কোহলিকে দেখলাম থার্ডম্যানে সিঙ্গলস নিতে গিয়ে খোঁচা দিতে। যেমন ব্যাটিং, তেমন বোলিং। দক্ষিণ আফ্রিকার ডি’কক পরপর দু’টো ম্যাচে সেঞ্চুরি করে চলে গেল। সবচেয়ে দুশ্চিন্তার ব্যাপার, ওদের ওপেনিং জুটিকেই আমাদের বোলাররা ভাঙতে পারছে না। ব্যাটিং বিপর্যয় নিয়ে ধোনিকে আমি দোষ দেব না। ক্রিজে গিয়ে ব্যাটসম্যান নিজে গেমপ্ল্যান তৈরি করে। সেই অনুযায়ী খেলে। সে ওখানে একা। সে কোন শট খেলবে, অধিনায়ক ঠিক করে দিতে পারে না। কিন্তু বোলিংয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই করতে পারে। বোলারদের ধোনির বলা উচিত যে, দক্ষিণ আফ্রিকায় ওভারে চারটে ভাল করলে চলে না। বাকি দু’টোয় বাউন্ডারি খেয়ে যাবে। এখানে তোমাকে ছ’টার মধ্যে ছ’টাই ভাল বল করতে হবে। তা ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনারদের কী ভাবে ফেরাবে, সেটা ধোনিকেই বার করতে হবে ভেবে।
ওয়ান ডে সিরিজ নিয়ে আর কথা বলে লাভ নেই। সিরিজ শেষ। কিন্তু যদি দ্রুত ব্যাপারগুলো শুধরে না নেওয়া যায়, টেস্ট সিরিজে কোনও আশা দেখছি না।
যাবতীয় বিপর্যয়ের মধ্যে আশা বলতে শুধু বাংলার মহম্মদ শামি। জো’বার্গের পর এ দিনও তিনটে উইকেট নিল। একমাত্র ওকে দেখেই মনে হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য তৈরি হয়ে এসেছে।
কিন্তু এক জন দিয়ে আর কবে এগারো জনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জেতা গিয়েছে? |