রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কংসাবতীর নদীখাত থেকে বেআইনি ভাবে বালি তোলার অভিযোগ নতুন নয়। অসাধু ব্যবসায়ী থেকে ক্ষেত্র বিশেষে সরকারি কাজ করা ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ একাধিক বার উঠেছে। এ বার বেআইনি ভাবে বালি তোলার অভিযোগ উঠল সরকারি সংস্থা ম্যাকিনটস বার্নের বিরুদ্ধে। এ জন্য পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর ওই সরকারি সংস্থাকে ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা জরিমানাও করেছে।
গত নভেম্বরে জরিমানার নির্দেশ জারি হয়েছে। এখনও টাকা আদায় হয়নি। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অরিন্দম দত্ত বলেন, “অনুমতি ছাড়া রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বালি তোলার জন্য জরিমানা করা হয়েছে।” তবে এ নিয়ে বিশদে জানাতে চাননি ম্যাকিনটস বার্ন কর্তৃপক্ষ। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অসীম দত্ত বলেন, “রাজস্ব নিয়ে একটা ঝামেলা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া যাবে বলে আশা করি। প্রয়োজনে সেচমন্ত্রীকে বলব।” |
বেআইনি ভাবে বালি তোলার অভিযোগে আটক যন্ত্রপাতি।—নিজস্ব চিত্র। |
কাঁসাই থেকে বেআইনি ভাবে বালি তোলার জেরেই ব্রিটিশ আমলের অ্যানিকেত বাঁধ ২০০৭ সালে ভেঙে গিয়েছিল। প্রখর গ্রীষ্মেও নদীতে জল ধরে রেখে মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শহর এবং খড়্গপুর আইআইটিতে পানীয় জল সরবরাহের জন্য এই বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল। অ্যানিকেতের পাশের সেচখাল থেকে খড়্গপুর-২, ডেবরা, পিংলা ও পাঁশকুড়া ব্লকের প্রায় ৮০ হাজার একর জমিতে সেচের জলও দেওয়া হত। ২০০৭ সালে অ্যানিকেত ভাঙার পরে বারবার তা সংস্কার হয়েছে। কিন্তু ফের বন্যার তোড়ে ভেঙে পড়েছে। এখন আর ওই বাঁধে জল ধরে রাখা যায় না। ফলে সেচের সুবিধে মেলে না। ভবিষ্যতে পানীয় জলেরও সঙ্কট দেখা দেওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে অ্যানিকেত তৈরিতে উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকার। একশোর কোটিরও বেশি টাকার প্রকল্পটির দায়িত্ব দেওয়া হয় সরকারি সংস্থা ম্যাকিনটস বার্নকে।
কাজ শুরু করতে না করতেই এই সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে বালি তোলার অভিযোগ ওঠায় শোরগোল পড়েছে। বড় অঙ্কের টাকা জরিমানা করায় ম্যাকিনটস কর্তৃপক্ষও ক্ষুব্ধ বলে জানা গিয়েছে। সংস্থা সূত্রে খবর, তারা বড়জোর ৫ লক্ষ টাকা রাজস্ব দিতে রাজি বলে জানিয়েছে। বাকি টাকা ছাড়ের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু তাতে রাজি নয় ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। জেলা ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি অনুমতি নিয়ে বালি তোলা হলে সংস্থাকে কমপক্ষে ১৭ লক্ষ টাকা রাজস্ব দিতে হত (১০০ কিউবিক ফুট বালিতে ১১৫ টাকা হিসেবে)। সরকারি সংস্থাটি সেই রাজস্বও দেবে না, আবার জরিমানাও দেবে না, তা হতে পারে না। তাছাড়া একটি সংস্থাকে ছাড় দিলে অভিযুক্ত অন্য ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন তুলবে। তাই জরিমানা আদায়ে প্রশাসন অনড়। ম্যাকিনটস সূত্রে খবর, বালি তোলার অনুমতি চেয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে লিখিত আবেদন পাঠিয়েছে। কিন্তু দফতর তার জবাব দেয়নি। সংস্থার ৫টি ট্রাকট্রর ও ২টি বালি তোলার যন্ত্র আটক এখনও আটক করে রাখা হয়েছে বলেও প্রশাসন সূত্রের খবর। |