সম্পাদক সমীপেষু...
নিয়ম ভাঙব বলেই ভাঙা ভাল নয়
তসলিমা নাসরিনের ‘পুং পুজো’ (রবিবাসরীয়, ২৭-১০) প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে চারটি চিঠি প্রকাশিত হয় (সম্পাদক সমীপেষু, ৭-১১)। ‘পুরুষের প্রতি এতটা বিদ্বেষ কেন’ শিরোনামে প্রথম চিঠিটি ছিল এই পত্রলেখকের। এর পর আরও তিনটি চিঠি প্রকাশিত হল (সম্পাদক সমীপেষু, ১৯-১১)। প্রথম দুটি চিঠির রচয়িতারা আমার লেখায় প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত।
প্রথম প্রতিবাদপত্রের লেখক শ্যামল মৈত্র। তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘শুধু চাকুরিরত পুরুষই কি পরিশ্রম করেন’? না। আমার লেখায় কোথাও কি তিনি এ রকম ইঙ্গিত পেয়েছেন? আমি স্পষ্ট ভাবেই উল্লেখ করেছি, ‘নিরক্ষর, চাকুরিহীনা, স্বেচ্ছায় স্বাবলম্বী না-হওয়া’ মহিলাদের সম্পর্কে। এর জন্য কে দায়ী, সে প্রসঙ্গ আমার ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। তসলিমা প্রশ্ন তুলেছেন, কী কারণে ‘বিবাহিত পুরুষেরা শাঁখা-সিঁদুর পরছে না’। আমি নিতান্ত ঠাট্টাচ্ছলেই সংযোজন করেছিলাম, শাড়িটাও জুড়ে দিতে পারতেন তো!
দ্বিতীয় চিঠির লেখিকা সুস্মিতা ভট্টাচার্য ৭-১১-র চিঠিগুলোতে একদেশদর্শিতার প্রমাণ পেয়েছেন। তসলিমার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত্‌পর্বে তিনি ‘অধিকারতন্ত্রের’ বিরোধী মনোভাবের পরিচয় দিয়েছিলেন, যার পরিচায়ক তাঁর নিবন্ধটি।
তসলিমাপক্ষীয়দ্বয়ের মতামত জানতে পেরে এটুকুই জ্ঞানলাভ হল নারী পুরুষে ‘অসাম্যমূলক অধিকারতন্ত্র’গুলোই সর্বাংশে দায়ী। অধিকাংশ শহুরে এবং গ্রাম্য মহিলা এই সব প্রথা পালন করেন স্বতোত্‌সারিত ভক্তি থেকে। অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য যদি থাকে স্বামী-সন্তানের মঙ্গল কামনা, দোষের কি?
সুস্মিতা ভট্টাচার্য লিখেছেন, ‘শতকরা নব্বই জন স্বামী স্ত্রীকে পেটান না’, এ তথ্য আমি কোথা থেকে পেয়েছি। তাঁর জ্ঞাতার্থে জানাই, এ তথ্য দেওয়ার জন্য আমাকে কোনও পরিসংখ্যানবিদের দ্বারস্থ হতে হয়নি। আমি একটা আবাসনের বাসিন্দা। এখানে ৩২০টি ফ্ল্যাট। নিদেনপক্ষে শতকরা পঁচাত্তরটি ফ্ল্যাটে আবাসিকরা বসবাস করেন। মূলত বিভিন্ন পেশার মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত চাকুরেরা এখানে থাকেন। অনেকেই যৌথ চাকুরে। শিক্ষিত। দীর্ঘ বসবাসের কারণেই জানি, এঁদের কারওরই স্ত্রীকে পেটানোর অভ্যেস নেই। পাশাপাশি, এই বিশাল আবাসনে দৈনন্দিন যে কাজের মহিলা পরিষেবা প্রদানকারীরা আসেন, তাঁরা উদয়াস্ত পরিশ্রম করেও স্ত্রীর যথোচিত মর্যাদা অনেকেই পান না। স্বামী ছেড়ে গিয়েছে অনেকের। নির্যাতনও নিত্যসঙ্গী বহু জনের।
উচ্চকোটির বহু পরিবার পণের জন্য বধূ নির্যাতন করে, পুড়িয়েও মারা হয়। এ সব তো দৈনন্দিন তথ্য। প্রথা মেনেও যে আধুনিকমনস্ক হওয়া যায়, এই সত্য স্বীকার করতে দ্বিধা কেন?
নিয়ম ভাঙার আনন্দ পেতে বেপরোয়া হওয়াটা সমাজের পক্ষে হিতকর নয়।
নিয়ম শিথিল হোক
সম্প্রতি দক্ষিণ ভারত বেড়াতে গিয়ে সাইক্লোন পিলিনের জন্য আমাদের বিশাখাপত্তনম থেকে ফেরার ট্রেনটি বাতিল হয়। বিশাখাপত্তনম স্টেশনে যোগাযোগ করলে বলা হয়, টিকিটের টাকা আমাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে স্বয়ংক্রিয় ভাবেই জমা পড়ে যাবে (পি এন আর নং ৪৭০৮২৯৩২৮৫, তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৩)। এরপর ওই প্রবল দুর্যোগের মধ্যে আমরা সপরিবার একাধিক ট্রেন পাল্টে কোনও রকমে ফিরে আসি। কিন্তু আমার অ্যাকাউন্টে টাকা না-আসায় আই আর সি টি সি-র গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে ফোন এবং ই মেল মারফত যোগাযোগ করি। কিন্তু প্রতি বারই আমাকে জানানো হয় যে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আবেদন না-করায় কোনও টাকা ফেরত দেওয়া যাবে না। আমার প্রশ্ন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং যাত্রীদের অসহায়তার কথা চিন্তা করে এই নিয়মটিকে কি একটু শিথিল করা যেত না? প্রসঙ্গত, আমি যে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থায় কাজ করি, তারা কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে নিয়ম প্রয়োজনে শিথিল করেই দাবির নিষ্পত্তি করে।
শিশু শ্রমিক ও স্কুল
জাতীয় শিশুশ্রম প্রকল্পের অধীন এ রাজ্যে ৯৬৩টি স্কুল চলে। এগুলি মূলত স্কুলছুট শিশু শ্রমিকদের শিক্ষার মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে স্থাপন করা হয়েছিল। শিক্ষার অধিকার আইনে ৬ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুদের স্কুলমুখী করা বাধ্যতামূলক। এমতাবস্থায় ‘জাতীয় শিশুশ্রম প্রকল্পে’র (NCLP) অন্তর্গত চালচুলোহীন স্কুলগুলি যখন শিশু শ্রমিকদের শিক্ষার মূল অঙ্গনে আনার চেষ্টা করছে, তখন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে স্কুলগুলি উঠে যাওয়ার অবস্থা। কেননা, ছাত্রছাত্রীদের ভাতার টাকা সঠিক সময়ে আসে না। ফলে, বাড়ছে স্কুলছুটের সংখ্যা। বিগত ২০০৯ থেকে ২০১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রছাত্রীদের ৯ মাসের ভাতা বাকি। ফলে, অর্থাভাবে অনেকে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। চলতি ২০১২২০১৫ বর্ষের টাকা ‘বিশ বাঁও জলে’। বাকি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ১০ মাসের সাম্মানিক ভাতাও। এই আগুন-ঝরা বাজারে শিক্ষককুল দিশেহারা। কমছে শিক্ষাদানে আগ্রহ। এই প্রকল্প যাঁরা দেখভাল করেন তাঁদের কাছে অনুরোধ, প্রকল্পটির সার্থক রূপায়ণে সঠিক সময়ে ছাত্রছাত্রীদের এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভাতার টাকা অনুমোদনের ব্যবস্থা হোক। প্রকল্পের তৃণমূল স্তরে যে সমস্ত শিক্ষাকর্মী কাজ করেন তাঁদের সাম্মানিক ভাতা মাত্র চার হাজার টাকা প্রতি মাসে। তাঁদের কথাও বিবেচনা করা উচিত।
সরকার অন্তত তার কাজটা করুক
চৈতন্যময় নন্দ (‘দিবস আসে যায়’, ৩-১২) খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলেছেন। বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে এ বারেও কলকাতার রাস্তায় মিছিল দেখলাম, বক্তৃতা শুনলাম, কিছু মানুষ হয়তো নানা ভাবে উপকৃতও হলেন।
এস সি আর এস-এর উদ্যোগে প্রতিবন্ধী মানুষের পদযাত্রা। কলকাতা, ৩ ডিসেম্বর। ছবি: সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু সরকার যদি নিজের পরিসরের মধ্যেও প্রতিবন্ধীদের প্রাপ্য সুযোগগুলি না দেয়, তা হলে আর আমরা এগোব কী করে? দিবস আসবে এবং যাবে, ওই পর্যন্তই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.