বদলে যাচ্ছে কলকাতার ‘প্রবেশদ্বার’ হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকার চেহারা!
দীর্ঘদিন ধরে বসে থাকা দখলদার ও ভবঘুরেদের হঠিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে এলাকার পুরনো সৌন্দর্য। অন্য দিকে, স্টেশন সংলগ্ন রাস্তাগুলিতে যানজট এড়াতে সমস্ত বুলেভার্ড ভেঙে শুরু হয়েছে রাস্তা চওড়া করার কাজ।
হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকার পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গত কয়েক দশক ধরে ওই এলাকার রাস্তাঘাট, ফুটপাথ, গঙ্গার পাড় সবই চলে যায় বেআইনি দখলদারদের হাতে। রাস্তার পাশে গড়ে ওঠে ঝুপড়ি, খাবারের দোকান। ফুটপাথ চলে যায় হকারদের দখলে। যত্রতত্র গড়ে ওঠে উন্মুক্ত প্রস্রাবাগার। সব চেয়ে বড় কথা, বাসস্ট্যান্ড থেকে হাওড়া সাবওয়ে সর্বত্র বাজার বসা ছিল নিত্যদিনের কাজ। আর এই সব বেআইনি দখলদারদের বসতে দেওয়া ঘিরে তৈরি হয়েছিল বড়সড় একটি ‘তোলাবাজ’ চক্র। অভিযোগ, মোটা টাকার বিনিময়ে হকার ও ব্যবসায়ীদের প্রত্যেককে নির্দিষ্ট বসার ‘ডালা’ বিক্রি করত চক্রটি। চক্রটির নেতৃত্বেই হাওড়া স্টেশন চত্বর কার্যত হয়ে উঠেছিল অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল। |
হাল ফেরানোর কাজ শুরু। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার। |
রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেই হাওড়া স্টেশন চত্বরের ভোল পাল্টাতে উদ্যোগী হয় হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট। স্টেশন চত্বরে ট্রাফিকের দায়িত্ব পাওয়ার পরে ট্যাক্সি চালকদের হাতে যাত্রী-হয়রানি রুখতে কড়া ব্যবস্থা নেয় হাওড়া সিটি পুলিশ। শুরু হয় স্টেশন সংলগ্ন এলাকার পরিবেশের উন্নতি নিয়ে সামগ্রিক পরিকল্পনা তৈরির কাজ। যাতে অংশ নেয় হাওড়া সিটি পুলিশ, পূর্ব রেল ও কেএমডিএ।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, “কয়েক মাস আগে হাওড়ার ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারের অফিসে হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকার উন্নতি নিয়ে একটি বৈঠক হয়। রেল, হাওড়া সিটি পুলিশ ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন কেএমডিএর কর্তারা। সেখানেই হাওড়া স্টেশন চত্বর, সংলগ্ন বাসস্ট্যাণ্ডগুলির পরিবেশের উন্নতির জন্য একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়।”
কী সেই পরিকল্পনা?
কেএমডিএ সূত্রে খবর, বৈঠকে ঠিক হয়, প্রথমেই স্টেশন চত্বর থেকে হকার ও বেইআইনি দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। দ্বিতীয়ত, স্টেশন থেকে আসার ও বেরোনোর পথের উন্নতি করতে হবে। হঠাতে হবে সাবওয়েতে বসা হকার বা বাসস্ট্যাণ্ডে যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে থাকা ভবঘুরেদের। পরিকল্পনা মতো গত কয়েকদিন ধরে বেআইনি দখলদার ও হকার উচ্ছেদ অভিযান চলে গোটা স্টেশন চত্বর ও আশপাশের রাস্তাগুলিতে। ভেঙে দেওয়া হয় সমস্ত অস্থায়ী হোটেল ও দোকান। সাবওয়ের প্রতিটি গেটে ও ভিতরে বাজার বসাও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কেএমডিএ-র হাওড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অসীমকুমার তোপদার বলেন, “হাওড়া সিটি পুলিশের সাহায্যে ইতিমধ্যে সব বেআইনি দখলদার হঠিয়ে রাস্তা ও ফুটপাথ সাধারণ মানুষের হাঁটার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। হাওড়া ব্রিজ থেকে নামার পথে একটি বুলেভার্ড ভেঙে রাস্তা চওড়া করার কাজ শুরু হয়েছে। শীঘ্রই আরও কয়েকটি রাস্তা চওড়া করা হবে।” অসীমবাবু জানান, হাওড়া স্টেশন থেকে কলকাতায় যাওয়ার পথে হাওড়া ব্রিজে ওঠার সময়ে লোয়ার রোডে রাস্তার দু’পাশে দু’টি খোলা ভ্যাট ছিল। তার মধ্যে একটি পাঁচিল তুলে বন্ধ করে দেওয়া হবে। অন্য ভ্যাটটিকে এমন ভাবে তৈরি করা হবে যাতে তা না দেখা যায়। অসীমবাবু জানান, দীর্ঘ কয়েকদশক বাসস্ট্যান্ড ও সাবওয়েতে কোনও রং পড়েনি। সেগুলির ভগ্নদশা। যাত্রী শেডগুলির অবস্থাও একই। তাই সব সারিয়ে নীল-সাদা রং করা হচ্ছে। |