নতুন নজির না-গড়লেও গত সপ্তাহে সেনসেক্স ২১,০০০ ছাড়িয়েছিল। এক চুল কমে শুক্রবার সূচক বন্ধ হয়েছে ২০,৯৯৭ অঙ্কে। ওই দিন নিফ্টির অবস্থান ছিল ৬,২৬০ পয়েন্টে। যেমন আমরা আশা করেছিলাম, বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচন সম্পর্কে বুথ ফেরত সমীক্ষা বাজারের মনে ধরায় তেতে উঠেছে শেয়ার বাজার। সমীক্ষার সঙ্গে ফলাফল অনেকটাই মিলে যাওয়ায় সেনসেক্স এবং নিফ্টির সর্বকালীন রেকর্ড গড়ার একটি সম্ভাবনা থাকছেই। মাসখানেক আগে সেনসেক্সের সর্বোচ্চ অবস্থান ছিল ২১,৩২২ পয়েন্টে। ২০১০ সালের ৮ জানুয়ারি নিফ্টি উঠেছিল রেকর্ড উচ্চতায়। স্পর্শ করেছিল ৬,৩৫৭ পয়েন্ট।
অবশ্য শুধু মাত্র রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের প্রভাবই নয়, অর্থনীতির দিক থেকেও কয়েকটি ভাল খবর প্রভাবিত করেছে বাজারকে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে জাতীয় উৎপাদন বেড়েছে ৪.৮ শতাংশ হারে। নেমে এসেছে বৈদেশিক মুদ্রার চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতি। রফতানি বাড়ছে, কমছে আমদানি। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির হারও বেশ সন্তোষজনক। সর্বক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়লে পণ্যমূল্য কমবে বলেই আশা করা যায়। সরকার যদি বিমা বিল এবং প্রত্যক্ষ কর বিধি সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে পাশ করিয়ে নিতে পারে, তবে তা উৎসাহিত করবে বিদেশি লগ্নিকারীদের। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও একটু একটু করে আশা জাগানোর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বাজারে। এর প্রভাব পড়েছে বিদেশি মুদ্রার বাজারেও। গত সপ্তাহে টাকার দাম বেড়েছে। প্রতি ডলারের দাম নেমে এসেছে ৬১.৪০ টাকায়। ভাল খবর আছে মার্কিন অর্থনীতি থেকেও। আশা করা হয়েছিল সে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি হতে পারে ৩.২ শতাংশ, হয়েছে ৩.৬ শতাংশ হারে। ভারতের কাছে এটি একই সঙ্গে ভাল এবং খারাপ খবরও। ভাল এই কারণে, এতে মার্কিন মুলুকে ভারতের রফতানি বাড়বে, ব্যবসা বাড়বে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির। খারাপ এই কারণে, অর্থনীতি ভাল জায়গায় পৌঁছলে মার্কিন সরকার বন্ড ক্রয় কমানোর মাধ্যমে আর্থিক ত্রাণ সঙ্কুচিত করতে পারে এবং তা হলে ভারতের শেয়ার বাজারে মার্কিন লগ্নি সংস্থাগুলির তরফে বিনিয়োগ কমানোর আশঙ্কা থাকবে। ফলে কমতে পারে ভারতে ডলার প্রবাহ।
ভাল বাজারের সুবাদে বড় মাপের শেয়ারগুলির অনেকে ভাল উচ্চতায় উঠে এলেও তেমন উত্থান এখনও দেখা যায়নি ছোট এবং মাঝারি শেয়ারগুলির মধ্যে। বিভিন্ন শেয়ারের কমবেশি উত্থানে ভর করে ন্যাভ্ খানিকটা করে বেড়েছে বেশির ভাগ ইক্যুইটি নির্ভর মিউচুয়াল প্রকল্পের। ভবিষ্যতে বাজার ভাল থাকবে এই আশায় নতুন নতুন প্রকল্প আনতে শুরু করেছে কোনও কোনও মিউচুয়াল ফান্ড। ইস্যু খোলার প্রথম দিনেই ভাল সাফল্য পেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাওয়ার গ্রিডের দ্বিতীয় পাবলিক ইস্যু। অন্য দিকে ভাল লগ্নি টানছে করমুক্ত বন্ড ইস্যুগুলিও।
অল্প অল্প করে হলেও আস্থা ফিরতে শুরু করেছে লগ্নিকারীদের মনে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় অর্ধে বাজারে আত্মপ্রকাশ করার কথা মূল্যবৃদ্ধি-সূচক বন্ডের। সোনায় লগ্নির পরিবর্ত হিসেবে এই বন্ড আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সোনায় লগ্নিতে স্বস্তি পাচ্ছেন না অনেকেই। এর উত্থান-পতন এখন অনেকটা শেয়ার বাজারের মতোই। কখন কিনলে ভাল হবে, তা সাধারণ মানুষ ঠিক বুঝতে পারছেন না। একই দিনে বিভিন্ন শহরে দাম বিভিন্ন রকমের।
২০১৩-’১৪ আর্থিক বছরের অনেকটাই আমরা পেরিয়ে এসেছি। কর সাশ্রয়ের লক্ষ্যে লগ্নির জন্য খুব বেশি সময় হাতে নেই। আগে করা হয়ে না-থাকলে লগ্নি শুরু করতে হবে এখনই। মিউচুয়াল ফান্ডগুলি ইতিমধ্যেই তৎপর হয়ে উঠেছে ইএলএসএস ইউনিট বিক্রির ব্যাপারে। সুদের হার এখন বেশ আকর্ষণীয় জায়গায় থাকায় কর সাশ্রয়ের জন্য ৫ বছর মেয়াদি ব্যাঙ্ক জমার কথাও ভাবা যেতে পারে। কর সাশ্রয়কারী অন্য প্রকল্পগুলির আকর্ষণ এখন কিছুটা কম। অনেক পুরনো বিমা পলিসি বিক্রি বন্ধ হবে ৩১ ডিসেম্বর। এর পর চালু হবে নতুন পলিসি। সে জন্য বর্তমানে চালু কোনও পলিসি ভাল লাগলে তা নিয়ে নিতে হবে পলিসি প্রত্যাহার হওয়ার আগেই। |