|
|
|
|
ইচ্ছেমতো |
তাঁর প্রথম ছবি ‘ইচ্ছে’। পাঁচ-ফিল্ম কেরিয়ারে যা করেছেন নিজের ইচ্ছেমতো। এ বার
ঋতুপর্ণাকে বাদ দেওয়াও তাই? পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-কে
জিজ্ঞেস করলেন ইন্দ্রনীল রায়। |
লিয়েন্ডার পেজ আর মহেশ ভূপতির ব্যাপারটা জানেন তো?
হ্যাঁ, অবশ্যই।
এক সময় ছিলেন বেস্ট ফ্রেন্ড। আর এখন বিটার এনিমি।
ও, বুঝতে পারছি কোন দিকে বল যাচ্ছে।
বল ঠিক দিকেই যাচ্ছে। কারণ অনেকের মতেই ইন্ডাস্ট্রির লিয়েন্ডার আর মহেশ ভূপতি হচ্ছেন আপনি আর ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। এক সময়ের বেস্ট ফ্রেন্ড এখন কথাবার্তা বন্ধ।
কী বলব বলুন!
বলুন কী হল যে শেষ মুহূর্তে আপনার পরের ছবি ‘রামধনু’ থেকে বাদ দিলেন ঋতুকে।
আপনি ভুল বলছেন। আমি তো ঋতুকে বাদ দিইনি! ঋতুই তো আমাকে বাদ দিয়েছিল।
কী সমস্যা হয়েছিল?
ডেট নিয়ে ঋতুর সমস্যা হচ্ছিল।
প্লিজ এ রকম নিরামিষ উত্তর দেবেন না!
না না সত্যি। দেখুন এই ছবিটা হচ্ছে বাচ্চাদের স্কুলের অ্যাডমিশন নিয়ে। সেই জন্য আমাদের ফিল্মে প্রচুর বাচ্চা দরকার। সেই সময়টা আমরা একমাত্র পাচ্ছি ২৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। যখন উইন্টার ভ্যাকেশন চলবে। ওই সময়টায় না করলে আমাকে আর নন্দিতাদিকে ছবিটা সামার ভ্যাকেশনে করতে হবে, যেটা ডিফিকাল্ট। কিন্তু ২৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ঋতু ডেট দিতে পারছিল না। |
|
আগে থেকে ঋতুকে জানাননি আপনি যে ওই সময় শ্যুটিং হবে?
হ্যাঁ, জানিয়েছিলাম।
তার পর?
তার পর ভেবেছিলাম ঋতু অ্যাডজাস্ট করতে পারবে। কিন্তু দেখলাম হল না।
ঋতু ‘না’ বলার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই তো আপনি রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাইন করলেন...
হ্যাঁ, আমি রচনার কাছে গ্রেটফুল ও আমাকে ‘হ্যাঁ’ বলেছে বলে। এটা ওর মহানুভবতা।
‘রামধনু’ ছবির বিষয়বস্তু কী?
এটা বাচ্চাদের স্কুলের অ্যাডমিশন নিয়ে যে সমস্যা হয় তাই নিয়ে গল্প। গার্গী এই ছবিতে আমার স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করছে।
ইনফ্যাক্ট আমি কাস্ট নিয়ে খুব খুশি। গার্গী অনেক দিন পর একটা লিড রোলে রয়েছে। ‘তিন ইয়ারি’-র পর ওর মতো অভিনেত্রীকে ইন্ডাস্ট্রি ব্যবহার করেনি ভেবেই আমার খারাপ লাগত। তাই এই রোলটার সময় ওর কথাই ভেবেছিলাম। শি ক্যান বি আ সারপ্রাইজ প্যাকেজ। আমার সব ছবির মতো এই ছবিতেও একটা সোশ্যাল মেসেজ আছে।
সোশ্যাল মেসেজটা কী?
দেখুন, আমাদের দেশে বাবা-মা’র কাছে বাচ্চার স্কুলের অ্যাডমিশনটা বিরাট ব্যাপার। প্রত্যেক বাবা-মা’র অ্যাডমিশন নিয়ে একটা করে গল্প থাকে। অ্যাডমিশনটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘রামধনু’র মতো। আর এখন ব্যাপারগুলো বদলে গিয়েছে। আগে বলা হত বাবা-মা’র ইন্টারভিউ হবে। এখন তা বদলে পেরেন্টস ইন্ট্যার্যাকশন উইথ স্কুল। এই ছোট ছোট চেঞ্জগুলো দেখানোর চেষ্টা করব। আর সোশ্যাল মেসেজটা না হয় ছবি দেখেই দর্শক জানলেন।
আর রচনার রোল-টা?
রচনা একজন টিচারের ভূমিকায়। বাকিটা বললে ছবির মজাটা চলে যাবে।
মানে রচনা ‘তারে জমিন পর’য়ের আমির খান?
(হেসে) দেখেই ডিসাইড করুন না...
|
|
শিবপ্রসাদের নতুন ছবি। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল। |
আচ্ছা, যে গতিতে আপনি রচনাকে সাইন করালেন, তাতে অনেকেরই মনে হয়েছে আপনারা নাকি প্রথম থেকে চাইছিলেন না ঋতুকে। ঋতু ডেট-য়ের সমস্যা বলাতে আপনাদের কাজটা সহজ হয়ে যায়। আপনাদের ব্যাক-আপ প্ল্যান তাই রেডি ছিলই!
একটা কথা বলি তা হলে। আমি আজ যে পরিচালক হয়েছি, তার জন্য দায়ী একজনই। তার নাম ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। আমাকে সব জায়গায় নিয়ে যাওয়া থেকে সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেওয়া সবটাই ঋতু করেছে। ও যে এই ছবিটা করল না, তাতে সব চেয়ে বেশি দুঃখ আমি পেয়েছি।
ঋতুও নিশ্চয়ই পেয়েছেন।
হ্যাঁ, পেয়েছে নিশ্চয়ই। আমার সব চেয়ে খারাপ লেগেছে একটাই জিনিস। আমি শেষ দিন যখন ওর সঙ্গে মিটিং করতে গেলাম...
ঋতুর লেক গার্ডেন্স-য়ের বাড়ি গিয়েছিলেন?
বাবা! এ তো পুলিশের জেরা। হ্যাঁ, লেক গার্ডেন্স-য়ে গিয়েছিলাম। প্রত্যেক বার ছবি শুরু করার আগে আর্টিস্টদের স্ক্রিপ্ট দেওয়ার সময় আমি সেটার ওপর একটা কিছু লিখে দিই। একটা ছোট মেসেজ লিখে সেই আর্টিস্টের হাতে দিয়ে বাড়ি থেকে বেরোই। ঋতু ‘না’ বলার পরও আমি বুঝিনি ও ডেট অ্যাডজাস্ট করতে পারবে না। আমি যখন ওকে বলি, ঋতু স্ক্রিপ্টটা কি তা হলে আমি তোমার এখানেই রেখে যাব (ইন দ্য হোপ যে ও ছবিটা করবে), তখন ও আমাকে বলে, না শিবু, স্ক্রিপ্টটা নিয়ে চলে যাও। আমার অত খারাপ কোনও দিন লাগেনি যা সে দিন লেগেছিল। আমি ওখানে দাঁড়িয়েই কেঁদে ফেলেছিলাম। বাট দেন, লাইফ গোজ অন...
হঠাৎ কেঁদে ফেললেন কেন? এ রকম তো প্রায়ই হয় ইন্ডাস্ট্রিতে।
না, প্রায়ই হয় না। আমার সঙ্গে এই প্রথম বার হল। এগারো বছরে এই প্রথম বার কেউ আমাকে না বলল। তাই আরও বেশি খারাপ লেগেছিল।
তার পর আর ঋতুর সঙ্গে কথা হয়নি?
না, আর কথা হয়নি।
ঋতু ‘না’ করার পর রচনা ছাড়াও কি অন্য কারও নাম ভেবেছিলেন?
না। রচনার কথাই ভেবেছিলাম। ওই যে বললাম, রচনা এত ব্যস্ততার মধ্যেও যে আমাকে ‘হ্যাঁ’ বলেছে আমি ওর কাছে সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব।
এ বার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি?
নিশ্চয়ই।
ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার ট্র্যাক রেকর্ড ব্রিলিয়ান্ট। ‘ইচ্ছে’ সুপারহিট, ‘মুক্তধারা’ সুপার হিট এবং চার দিকে আলোচিত। ‘অলীক সুখ’ও বক্স অফিসে খারাপ চলেনি। ‘হ্যালো মেমসাহেব’ আর ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ ফ্লপ। পাঁচটার মধ্যে তিনটে হিট মানে ৬০ পারসেন্ট স্ট্রাইক রেট। কিন্তু তাও বিগ লিগে আপনাকে নিয়ে আলোচনা কেন কম হয়?
সেটা তো আমি বলতে পারব না। তবে আমি এই ভেবেই ভাল আছি, নিজের মতো করে ছবি করি। মানুষ চান আমি ভাল ছবি বানাই। আমি যদি তাঁদের স্যাটিসফাই করতে পারি, তার থেকে বেশি আর কিছু চাই না। আর শুনুন, আমাদের এখানে পরিচালক হওয়া যে কী পরিমাণ চাপের, সেটা আমরা ডিরেক্টররাই বুঝি। এই যে সৃজিত অসুস্থ, কমলদার অ্যাঞ্জিও হল, এগুলো শিয়ার প্রেশার। ‘মুক্তধারা’ করার সময় আমার ট্রাইগ্লিসারাইড ১০০০ ছাড়িয়েছিল। বিগ লিগ ভেবে কাজ নেই। শরীর সুস্থ রেখে কাজ করে যেতে চাই।
আচ্ছা, আজ যে আপনি নাটক থেকে অভিনেতা এনে তাঁদের স্টার বানিয়ে দিলেন, এর পিছনে কী কারণ? ‘ইচ্ছে’-তে সোহিনি, ‘মুক্তধারা’, ‘অলীক সুখ’য়ে দেবশঙ্কর।
এটা আমার থিয়েটারের ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্য। আমার নিজের তো ‘নান্দীকার’য়ের ব্যাকগ্রাউন্ড। খুব ছোটবেলা থেকেই আমার মা’র থিয়েটারের ওপর ফ্যাসিনেশন। সেটা আমার মধ্যে রয়ে গিয়েছে। আর আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি ফিল্মের অ্যাক্টিংটা তারাই ভাল করতে পারে, যাদের থিয়েটারের ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। আই সিনসিয়ারলি বিলিভ দ্যাট। একটা গল্প বলি...
বলুন?
এই বারে পুজোর অষ্টমীর সকালবেলার ঘটনা। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। উনি তার আগের দিন ‘লাঞ্চবক্স’ ছবিতে ইরফান খানের অভিনয় দেখে ইরফানকে ফোন করে কনগ্র্যাচুলেট করেছিলেন। তাতে ইরফান বলেছেন যে এটা ওঁর জীবনের সব চেয়ে বড় গিফ্ট কারণ সৌমিত্র ওঁর আইডল। এই গল্প বলতে বলতেই সৌমিত্রদা বলছিলেন কী ভাবে নাসিরুদ্দিন শাহ্-ও ওঁকে নিজের আইডল মনে করেন। তার পর গলা নামিয়ে বলেন, শিবু, ইরফান, নাসিররা আমাকে আইডল বলে।
কিন্তু কী আশ্চর্য, বাংলার কোনও অভিনেতার আমি আইডল হতে পারলাম না। এর কারণ কী, জিজ্ঞেস করাতে উনি বলেন, যেহেতু ইরফান আর নাসির থিয়েটারের লোক, তাই হয়তো ওঁরা রিলেট করতে পারেন তাঁর সঙ্গে। উনিও মনে করেন থিয়েটার না জানলে সিনেমার অভিনয় হয় না।
লোকে কিন্তু আপনার আরও একটা বদনাম দেয়।
কী?
যে আপনি নাকি অসম্ভব ম্যানিপুলেটিভ?
কী ম্যানিপুলেশন করলাম বলুন? |
|
‘মুক্তধারা’ রাষ্ট্রপতি ভবনে দেখানো হল, কিন্তু মিডিয়ার কাছে আপনি সেই ছবিগুলোই পাঠালেন যেখানে আপনি ফোরফ্রন্ট-য়ে। ঋতু নয়।
একদমই তা নয়। এগুলো লোকের ভুল। কোনও দিন আমি সেটা করার কথা ভাবতেও পারিনি।
কিন্তু হয়েছিল তো এ রকম?
একটা কোনও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল নিশ্চয়ই।
লোকে কিন্তু আপনাকে খুব পাবলিসিটি ক্রেজি বলে। বদনাম হয় ঋতুপর্ণার।
ভাই, ঋতুপর্ণার জন্য তো পুরো মিডিয়া বসে আছে। আমাকে তো আমার অ্যাক্টরদের দিকটাও দেখতে হবে। ‘মুক্তধারা’-তে তো আমাকে নাইজেল ও দেবশঙ্করদার পাবলিসিটির কথা ভাবতে হবে। আমি না ভাবলে কে ভাববে! ঋতুর পাবলিসিটি তো হতেই থাকবে। আর আমাকে যে পাবলিসিটি ক্রেজি বলছেন, আমার ক’টা ইন্টারভিউ দ্যাখেন? লোকে ‘মুক্তধারা’র রিলিজের আগে কি জানত হ্যাপি সিংহ বলে কোনও চরিত্র আছে? আমি ও সব করি না।
কিন্তু কান-য়ে তো করেছিলেন?
কী করেছিলাম কান-য়ে?
কান-য়ে আপনারা ছবিটা যে বিভাগে দেখিয়েছিলেন, সেখানে টাকা দিয়ে যে-কোনও ছবি দেখানো যায়।
যাঁরা এ সব কথা বলছেন, তাঁদের আমি একটাই কথা বলব। আপনারা যখন এত কিছু জানতেন, তা হলে নিজেদের ছবি কেন নিয়ে যাননি সেখানে? আজ এগুলো বলা সহজ। আমি তো চাই, পরের বছর আরও অনেক বেশি বাংলা ছবির কান-য়ের মার্কেট সেকশনে প্রিমিয়ার হোক।
কান-য়ের প্রচার কি ব্যাকফায়ার করেছিল?
না, একেবারেই না। আর কান-য়ে যে স্ক্রিনিং হয়েছিল, তাতে লোকে কিন্তু স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিয়েছিল।
আচ্ছা, এই যে আপনার সঙ্গে পরিচালনা করেন নন্দিতা রায়, কোনও জায়গায় তো তাঁর নাম করেন না আপনি?
ভুল কথা। আমার তো মনে হয় উল্টো। আপনি যে বসে আছেন, একটু ঘাড় ঘুরিয়ে দেখুন পিছনে পোস্টারগুলো। পরিচালক হিসেবে কার নামটা আগে? নন্দিতাদি এমনিতেই লাজুক। তাই মিডিয়ার সামনে কথা আমাকেই বলতে হয়। আর জানেন তো, সেই কবিতার লাইনটা: ‘তুমি তাই, মিডিয়া যা বানায় তোমায়।’
আচ্ছা, আজ না হয় আপনার ঋতুপর্ণার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন ঋতুপর্ণার সঙ্গে আপনি ছবি বানাচ্ছেন, আবার কাউকে না বলে প্রসেনজিতের সঙ্গে মিটিংও করছেন।
আমি তো কবে থেকেই বলেছি প্রসেনজিতের সঙ্গে কাজ করাটা আমার ড্রিম। এটা ঋতু জানে। এবং ইন্ডাস্ট্রির এত বড় একজন স্টারের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে থাকবে নাই বা কেন?
সৃজিত তো টিম প্রসেনজিৎ। সৃজিত তো ঋতুপর্ণার সঙ্গে কাজ করার প্ল্যান করেন না...
সেটা ওর ব্যাপার। আমি বুম্বাদার সঙ্গে কাজ করতে ভীষণ ভীষণ আগ্রহী।
আচ্ছা, এই যে এত দিন আপনি ভেঙ্কটেশের ছবি করেননি, তার একটা কারণ কি ঋতুপর্ণার সঙ্গে ওঁদের ভুল বোঝাবুঝি?
সেটা আমি বলতে পারব না। এটার উত্তর শ্রীকান্ত এবং ঋতু দিতে পারবে। আমি এটুকুই জানি আমাকে শ্রীকান্তদা অসম্ভব স্নেহ করে। ওরা আমার ট্রেলর দেখে এসএমএস করে, সঙ্গীত বাংলায় আমার ছবির প্রোমো চালানোর জন্য ওরা কোনও টাকা নেয় না। এবং আমাকে ওপেন অফার দিয়েও রেখেছে শ্রীকান্ত এমন কিছু ভাবতে, যার স্কেলটা বড়। যদি ওর পছন্দ হয়, সেই গল্প ও সঙ্গে সঙ্গে প্রোডিউস করবে। ঋতুর সঙ্গে ভেঙ্কটেশের সম্পর্ক কী, তা দিয়ে আমার সঙ্গে ওদের সম্পর্কের তুলনা করবেন না। এ বার বলুন এটাও আমার ম্যানিপুলেশন...
মানে ভবিষ্যতে আপনাকে ভেঙ্কটেশের ছবি করতে দেখা যাবে, তাই তো?
হা হা হা হা হা হা। |
|
|
|
|
|