|
|
|
|
|
|
|
একটাভয়কষ্টলজ্জা[ঘেন্না] |
সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়
|
ম্যা গোওওওও!!! ছি ছি ছি, নাকে কাপড়... রাস্তায় বেরোলে প্রতি সাড়ে পাঁচ সেকেন্ড অন্তর আমার এই রকমই রিঅ্যাকশন হয়। রাস্তায় প্রিন্টেড কালারফুল গুটখা-পানের থুথু, উপচে পড়া ভ্যাট, নোংরার গাড়ি থেকে পড়তে পড়তে যাওয়া বিভিন্ন ময়লা আর তার গন্ধ এবং সর্বোপরি ইউরিনাল-শহর কলকাতার বিকট, জঘন্য গন্ধ। এখন কেউ আর নির্দিষ্ট শৌচাগারে হিসি করে না, গোটা শহরটাকেই বানিয়ে নিয়েছে একটা বড় ইউরিনাল। ভাল, এটাও এক ধরনের প্রথা ভাঙা। হয়তো এস্টাবলিশমেন্ট-এর মুখে র্যাঁদা, প্রকাশ্যে যেখানে সেখানে হিসি। প্রবলেম আমার, আমি জানি। আমার সবেতেই ঘেন্না লাগে, ওয়াক উঠে আসে। তির্যক বাক্যও জোটে— আমেরিকায় থাকা উচিত, মহারানি ভিক্টোরিয়ার নাতনি ইত্যাদি।
বাড়িতে হেভি পরিষ্কার থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু দিনকয়েক আগে খামকা ইন্টারনেট ঘাঁটতে ঘাঁটতে বেশ কিছু তথ্য জানতে পারলাম, যদিও সেগুলো লেখা হয়েছে পড়ে খুব খানিক অবাক হওয়ার জন্য আর বেশ কিছুটা হাসাহাসির জন্য, আমার তো সম্বচ্ছর সর্ব ক্ষণ নাকেমুখে রুমাল দিয়ে ঘোরার দশা।
পড়লাম, মাছি দিনে পাঁচ-ছয় বার অন্তত বিভিন্ন বাথরুমে উড়ে-ঘুরে আসে। আর কে না জানে, মূর্তিমান মাঝে মাঝেই এসে বসেন ডাইনিং টেবিলের খাবারে কিংবা দোকানের রসগোল্লায়। আমরা তার মানে তাদের পায়ে পায়ে নূপুরের মতো ঘিরে থাকা যাচ্ছেতাই জিনিস বেশ মন দিয়েই চাখি।
শুধু তাই নয়, ফাস্ট-ফুড খেতে পারঙ্গম যে সমাজ, তাদের জেনে রাখা ভাল, দুধের বাছারা বিভিন্ন দোকানের ভাজাভুজি ও রগরগে প্রোডাক্টের মধ্যে গোটা বছরে অন্তত গড়ে ১২টি করে যৌনাঙ্গের রোম খেয়ে থাকে। ওয়াক ওয়াক ওয়াক!!!
এখানেই গা গুলোনো শেষ নয়। বাথরুমে নাকি আমরা যখন সবাই হিসি করি, তখন সেই হিসিরই একটা অংশ স্যালাইভা গ্ল্যান্ড দিয়ে মুখে চলে যায়। নিজের থেকে নিজেকে দূরে কী করে রাখব!!! অতএব সেই মোরারজি দেশাই-এর মতোই সবাই একটু করে... ছ্যা ছ্যা... শিয়োর, পরের বার বাথরুম গেলে মুখ তো বন্ধ রাখবেনই, শ্বাসও বন্ধ রাখার চেষ্টা করবেন কি?
আরে ভায়া রোসো রোসো। দারুণ কেতা মেরে স্যুট-টাই পরা লোকের সঙ্গে হাত ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে হ্যান্ডশেক করে নিজেকে ধন্য মনে করছ নাকি? তা হলে শোনো, বছরে অন্তত ছ’জন এমন ছেলের সঙ্গে হাত মেলাও, যাঁরা একটু আগেই স্বমেহনে ব্যস্ত ছিলেন এবং হাত ধোননি। টিকটিকি, টিকটিকি।
না, আর ঘেন্নার কথা বলব না, শুধু এটুকু বলি, সাঁতার কাটার সময় মুখ খুলো না বাপু। এক ঘন্টা সাঁতার কাটলে মোটামুটি ১/১২ লিটার হিসি লোকে খেয়ে ফেলে। আচ্ছা, খাওয়ার কথাই যখন উঠল তখন বলি, রাতে বেশ ভোঁসভোঁস করে নাক ডাকার সময় বছরভর আমরা মাত্র ১৪টা পতঙ্গ নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরের ভেতর চালান করি। এ আর এমন কী! লোকে টেলিভিশনে কচকচ করে কত কী না খায় আর বছরে ১৪টা পতঙ্গের নাম শুনে পিলে চমকে গেল? তা হলে বাগানে যখন ঘোরাফেরা করেন আর ফুলের সুগন্ধে ম-ম করে চার দিক, বেশ জোরে একটা আআআঃ বলে টেনে শ্বাস নেন, তখন যে কত গন্ধ-গ্যাস পেটে যায়! সারা দিনে আপনি সুগন্ধের সঙ্গে এক লিটার গন্ধ-গ্যাস (বুঝতেই পারছেন কোন গ্যাসের কথা বলা হচ্ছে) বেশ করে টেনে নিচ্ছেন।
শুধু কি তাই? সারা দিনে অফিসে-দোকানে কত দরজা ঠেলেন, তার নব কিংবা হাতল ব্যবহার করেন কিংবা বাসের হ্যান্ডেল ধরেন। জানেন কি, আপনি অন্তত ১৫টি পুরুষ যৌনাঙ্গের সংস্পর্শে আসেন? মানে অনেকেই যৌনাঙ্গে হাত দিয়ে, তার পর হাত না ধুয়েই বিভিন্ন কাজ করতে থাকেন।
যাক গে, কী আর করা যাবে। এটাই তো জীবন কালীদা। ওয়াক তুলতে তুলতে, বমি চাপতে চাপতে, এবং গালাগাল দিতে দিতে মেনে নিতে হবে। শুধু একটাই প্রিকশান: নেট-সার্ফিং’এর সময় ঘেন্না-তথ্যে উঁকি দেবেন না! |
|
|
|
|
|