স্বতন্ত্র বিশ্বভারতী, নিয়মের অনুশাসনে সায় নেই প্রণবের
দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিশ্বভারতীর স্বাতন্ত্র বোঝাতে সেখানে সরকারি নিয়মকানুনের নমনীয়তা কাম্য বলেই মনে করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
শনিবার বিশ্বভারতীর ৪৮-তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রণববাবুর মন্তব্য, “যদি আমরা এই প্রতিষ্ঠানের (বিশ্বভারতীর) মৌলিকত্বকে স্বীকৃতি দিই তা হলে তাকে নিষ্প্রাণ বস্তু বলে গণ্য করা যাবে না। রবীন্দ্রনাথ সর্বদাই প্রাচীনপন্থী চিন্তাভাবনার বিরোধী ছিলেন। সুতরাং সবাইকে যে নিয়মের এক ধাঁচে ফেলতেই হবে, তার খুব প্রয়োজন নেই।” তিনি মনে করেন, রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শ থেকে সরে না এসে নিজস্ব সত্তা বজায় রেখেই বিশ্বভারতীকে এগিয়ে চলতে হবে।
এ দিন রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের সুর অবশ্য বেঁধে দিয়েছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত। সুশান্তবাবু বলেন, “বিশ্বভারতীর কিছু বিশেষ গুণই তাকে শিক্ষা এবং সৃজনশীল প্রচেষ্টার এক অদ্বিতীয় জায়গা করে তুলেছে।” আর সে জন্যই ‘নেট’ পরীক্ষায় বসার যোগ্যতা অর্জন করা, পিইচডি ডিগ্রির প্রয়োজনীয় শর্ত বা সেমেস্টার ব্যবস্থার উপর বিশ্ববারতী যে নির্ভরশীল হবে না তা-ও জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, “সঙ্গীত ভবন এবং কলা ভবনের শিল্পীদের থেকে কী করে আশা করা যায় যে, চেনা পথে গিয়ে তাঁরা নেটের সার্টিফিকেট পাবেন বা ডক্টরাল ডিগ্রি পাবেন? বিশ্বভারতীর মতো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে এটা আশা করাও বাস্তবসম্মত নয় যে তা ‘ন্যাক’-এর মতো গতানুগতিক পরিধি মেনে চলবে। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের মনে হয় বিশ্বভারতীকে আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চিহ্নিত করা হোক।”
বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন, রাষ্ট্রপতি
প্রণব মুখোপাধ্যায়, উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
তাঁর বক্তব্যের অনুসরনেই বিশ্ববাভরতীয় আচার্য প্রণববাবুর মন্তব্য, “প্রশাসনিক বিষয়গুলিকে আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। তবুও বিশ্বভারতীকে আমাদের একটা স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান রূপেই দেখা উচিত। এবং তার ব্যবস্থাকে যথা সম্ভব প্রয়োজনীয় নমনীয়তা দিতে হবে।”
প্রবীণ আশ্রমিক তথা পাঠভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুপ্রিয় ঠাকুর আচার্যের এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে বলেন, “রাষ্ট্রপতি ঠিকই বলেছেন। বিশ্বভারতীর সঙ্গীতভবন ও কলাভবনের মতো শাখাগুলি গুরুমুখী বিদ্যার উপরে নির্ভর করে। বিশ্বভারতী ওই সব বিভাগে সেই রীতিই চালু রেখেছে। এ ক্ষেত্রে তথাকথিত ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা কোনও মাপকাঠি হতে পারে না।” রবীন্দ্রভবনের প্রাক্তন আধিকারিক সুপ্রিয়া রায়ও বলেন, “বিশ্বভারতীর চরিত্র দেশের যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় একেবারেই আলাদা। আর পাঁচটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো এখানে ডিগ্রি-ডিপ্লোমাকেই এক মাত্র মাপকাঠি ধরলে তা ঠিক হবে না।”
এ দিন শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর সমার্বতন অনুষ্ঠান সেরে রাষ্ট্রপতি উড়ে যান মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে। সেখানে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএড কলেজের উদ্বোধন করে তিনি মনে করিয়ে দেন, মুর্শিদাবাদে শিক্ষার হার উদ্বেগজনক ভাবে হ্রাস পাওয়ায় এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা প্রয়োজনীয় ছিল। তিনি বলেন, “আমেরিকায় ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষার হার যেখানে ৩৪ শতাংশ, ভারতে সে হার মাত্র ৭ শতাংশ। তাই দেশে শিক্ষার প্রসার জরুরি। দেশের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া গরিব জেলার মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মুর্শিদাবাদ। তাই সাংসদ হিসেবে চেয়েছি জঙ্গিপুরে একটি আধুনিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে।”
তিনি স্পষ্ট করে দেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তৈরির জন্য মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত আলিগড়কে বেছে নেওয়ার এটাই মূল কারণ। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, “ক্যাম্পাস গড়া নিয়ে কেউ কেউ এটাকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন। এটা ঠিক নয়। তাদের জেনে রাখা ভাল এই বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ কোনও সম্প্রদায়ের জন্য নয়। সেখানে সব সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েরাই পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে থাকেন।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.