|
|
|
|
মহিলা পুলিশ কতটা সুরক্ষিত, তথ্য চায় কেন্দ্র
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি
৭ ডিসেম্বর |
সর্ষের মধ্যেই কতখানি ভূত লুকিয়ে, এ বার তার হিসেব রাখা হবে। যাঁদের হাতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ভার, সেই পুলিশ বাহিনীর মহিলা-কর্মীরা যৌন হেনস্থার শিকার হলে তার ঠিকমতো প্রতিকার হচ্ছে কি না, এ বার তা খতিয়ে দেখতে চাইছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চাইছে, প্রতিটি রাজ্যের পুলিশ বাহিনীতে মহিলা-কর্মীদের থেকে যৌন হেনস্থার কতগুলি অভিযোগ আসছে, তার কী প্রতিকার হচ্ছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তার হিসেব রাখতে। এ জন্য রাজ্যগুলির কাছে বার্তা পাঠানো হচ্ছে, যাতে সব তথ্য নথিভুক্ত করে তা নিয়মিত কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়।
তহেলকার প্রাক্তন সম্পাদক তরুণ তেজপালের বিরুদ্ধে সহকর্মীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তথা পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও উঠেছে ইনটার্নের সঙ্গে অবাঞ্ছিত আচরণের অভিযোগ। একের পর এক ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে, হেনস্থার শিকার মহিলারা যাঁদের কাছে ছুটে যাবেন, সেই পুলিশ-বাহিনীর মহিলা-কর্মীরা ঠিক কেমন অবস্থায় রয়েছেন? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অন্দরেও এ নিয়ে ভাবনা শুরু হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, কেন্দ্রের হাতে এ বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যই নেই। তাই এ বার রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীর কাছে সব তথ্য চাওয়া হচ্ছে। |
আরও চার দিন বাড়ল তেজপালের পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ। শনিবার দায়রা
আদালতের পথে তহেলকার প্রাক্তন সম্পাদক। ছবি: পিটিআই। |
শেষ হিসেব অনুযায়ী, সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে পুলিশের সংখ্যা ১৫ লক্ষ ৮৫ হাজার ১১৭। যার মধ্যে মহিলা রয়েছেন ৮৪ হাজার ৪৭৯ জন। যা মোট সংখ্যার মাত্র ৫.৩৩ %। এ ছাড়া, সিআরপিএফ, সিআইএসএফ-এর মতো কেন্দ্রীয় বাহিনীতে ১৫ হাজারের মতো মহিলা পুলিশ রয়েছেন। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে আরও বেশি মহিলা নিয়োগের দাবিও উঠতে শুরু করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা, সব জায়গাতেই মহিলাদের হেনস্থার অভিযোগ শোনার জন্য বিশেষ সেল তৈরির কথা। যার মাথায় থাকবেন এক জন পদস্থ মহিলা আধিকারিক। পুলিশ বাহিনীতেও এই ধরনের সেল থাকার কথা। চলতি বছর যৌন হেনস্থা প্রতিরোধ আইন পাশের পর এই ধরনের সেল তৈরি বাধ্যতামূলক। কিন্তু সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পুলিশ বাহিনীতে সেই ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে কি না, তা নিয়ে কেন্দ্রের কাছে কোনও তথ্য নেই। তাই রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির কাছে এ বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তবে প্রত্যেকটি কেন্দ্রীয় বাহিনীতে ইতিমধ্যেই সেই ব্যবস্থা রয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য। ওই সেলে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর মহিলা আধিকারিক ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরাও আছেন। যাতে অভিযোগ এলে তার নিরপেক্ষ বিচার হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, সিআইএসএফ-এ প্রায় পাঁচ হাজার মহিলা-কর্মী রয়েছেন। সেখানে যৌন হেনস্থার অভিযোগের সব নথি রাখা হয়। ২০১২ সালে অভিযোগ এসেছিল ১৯টি। তার মধ্যে ৫টি অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ২০০৭ থেকে যৌন হেনস্থার অভিযোগে সিআইএসএফ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন চার কর্মী। ২ জনকে অবসর নিতে হয়েছে। ২০ জনের বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যৌন হেনস্থার প্রতিকার কতটা হয়েছে, তা দেখিয়ে দিচ্ছে এই পরিসংখ্যানই। তবে একই ভাবে রাজ্য স্তরেও এই পরিসংখ্যান রাখা প্রয়োজন। |
|
|
|
|
|