|
|
|
|
কর্মক্ষেত্রে যৌন নিগ্রহ, কমিটি চায় আইএলও
রোশনী মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে চারা রুইতে হয়। ফলে শাড়ি গাছকোমর করে বেঁধে হাঁটুর উপরে তুলে রাখতে হয় কাজের সময়। কখনওসখনও শাড়ি একটু সরে যায়। ফাঁকফোঁকর দিয়ে ঢুকে পড়ে পঞ্চায়েত প্রধানের ছেলের চোখ। প্রধানের ছেলে জুটিয়ে আনে এক পাল চ্যালা। তাদের কটূ মন্তব্যে গা গুলিয়ে ওঠে চাষি বউ শুভার (নাম পরিবর্তিত)। ওদের চোখ থেকে বাঁচতে কাজের চেয়ে শাড়ি সামলাতেই চলে যায় বেশি সময়।
এক দিন অতিষ্ঠ হয়ে শুভা যান প্রধানের কাছে নালিশ করতে। ফলে, বিপিএল কার্ডটা হাতছাড়া হয়ে যায় শুভার। তিনি ছাড়া অন্য যে মহিলারাও ওই প্রধানপুত্রের খপ্পরে পড়েছিলেন, তাঁরা অবশ্য নালিশ করার সময়ে শুভার পাশে থাকেননি। কারণ একটাই ওই বিপিএল কার্ড হারানো বা অন্য শাস্তির ভয়।
শিলিগুড়ির একটি সরকারি ব্যাঙ্কে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন এক তরুণী। কাজের ছুতোয় ঘরে ডেকে তাঁকে অবাঞ্ছিত স্পর্শ করেন ব্রাঞ্চ ম্যানেজার। প্রথমে ব্যাঙ্কেরই গ্রিভান্স সেলে অভিযোগ জানান তরুণী। সে জন্য অফিসে একঘরে হতে হয় তাঁকে। দাঁতে দাঁত চেপে থানায় যান। তদন্ত শুরু হয় বটে, কিন্তু অফিসে আরও কোণঠাসা হয়ে যান তিনি।
কাহিনি দু’টি কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। সরকারি, বেসরকারি, সংগঠিত, অসংগঠিত সমস্ত ধরনের কর্মক্ষেত্রেই মহিলাদের যৌন নিগ্রহের শিকার হতে হয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও বহু সংস্থাতেই এখনও ওই অভিযোগ জানানোর উপযুক্ত জায়গা (সেল) নেই। থাকলেও নেহাতই আইন রক্ষার জন্য। ফলে কর্মক্ষেত্রে যৌন নিগ্রহের শিকার হলেও মেয়েরা অভিযোগ জানাতে ভয় পান। ভয় চাকরি হারানোর। কোণঠাসা হওয়ার ভয়। যাঁরা অভিযোগ জানান, অনেককেই মাসুল দিতে হয় বাধ্যতামূলক ইস্তফাপত্র লিখে। আর ‘পৌরুষ’ দেখানোয় সাফল্যের জন্য অভিযুক্তের ইনাম জোটে।
এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় উদ্যোগী হয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। দেশের কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির সঙ্গে যৌথ ভাবে তারা রাজ্যে রাজ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি নিচ্ছে। কলকাতায় অ্যাকাডেমিতে শনিবার তারা একটি কর্মশালা করেছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে কমিটি গঠনের দাবি জানানো হবে। যে কমিটিতে রাজ্য ও ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধি থাকবেন। কমিটি প্রতি জেলায় কাজ করবে। জেলার সরকারি, বেসরকারি, সংগঠিত, অসংগঠিত ক্ষেত্রের মেয়েরা ওই কমিটির কাছে যৌন হেনস্থার অভিযোগ জানাবেন। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদেরও ওই রক্ষাকবচের আওতায় আনতে হবে। কর্মশালার আহ্বায়ক ইউটিইউসি-র নেতা অশোক ঘোষ বলেন, “কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা প্রতিরোধে দেশের যে আইন তা প্রচারে এনে কমিটি জনসচেতনতা তৈরি করুক।”
রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় অবশ্য ওই দাবির সঙ্গে সহমত নন। তাঁর বক্তব্য, অসুবিধা সত্ত্বেও নিজের নিজের কর্মক্ষেত্রেই মেয়েদের লড়াই গড়ে তোলা উচিত। তাঁদের হয়ে সরকারি কমিটি লড়াই করে দিতে পারে না। সুনন্দাদেবীর কথায়, “প্রথম লেখাপড়া শিখতে গিয়েও মেয়েদের অনেক আত্মত্যাগ করতে হয়েছে।
তা সত্ত্বেও তারা লড়াই করেছে, জিতেছে। এ ক্ষেত্রেও প্রয়োজনে ঝুঁকি নিয়ে, কষ্ট স্বীকার করেই মেয়েদের নিজেদের কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গসাম্য আদায় করতে হবে।” |
|
|
|
|
|