|
|
|
|
বাংলাদেশে অশান্তির জেরে থমকে দীপ-উদ্ধারের কাজ
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি ও কলকাতা
৭ ডিসেম্বর |
বাংলাদেশে হিংসা, বিক্ষোভের জেরে মিজোরাম থেকে অপহৃত বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার দীপ মণ্ডলকে উদ্ধারের প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। দীপের সঙ্গে স্থানীয় এক গাড়ি চালক ও সংশ্লিষ্ট এক কর্মীও অপহৃত হয়েছে। গত ২৩ নভেম্বর ত্রিপুরার ধলাই সংলগ্ন মিজোরামের মামিত জেলা থেকে দীপ মণ্ডল নামে ওই ইঞ্জিনিয়ারকে ব্রু বা রিয়াং জঙ্গিরা অপহরণ করে। মিজোরাম পুলিশের খবর, ত্রিপুরা-বাংলাদেশ সীমান্ত পার করে অপহৃত তিনজনকে বাংলাদেশে নিজেদের কোনও ঘাঁটিতে আটকে রেখেছে জঙ্গিরা। ইতিমধ্যে দীপ যে সংস্থার কর্মী, সেই টেলিকম নেটওয়ার্ক সলিউশনের কাছে পাঁচ কোটি টাকা মুক্তিপণ বাবদ চেয়েছে জঙ্গিরা।
দীপ মণ্ডল।
—নিজস্ব চিত্র। |
বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও। মামিতের পুলিশ সুপার রোডিংলিয়ানা চাওংথু জানান, “রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশ পুলিশ আইন-শৃঙ্খলার কাজেই ব্যস্ত। ফোনেও সে দেশের প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে খুব সমস্যা হচ্ছে। জঙ্গিরা দীপবাবুর সংস্থায় ফোন করে ৫ কোটি টাকা মুক্তিপণ চাওয়ার পরই যৌথবাহিনী সীমান্তের জঙ্গলে অভিযান চালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশ পর্যাপ্ত সাহায্য দিতে না পারায় তা থমকে গিয়েছে।” চাওংথু জানিয়েছেন, অপহৃতরা অক্ষত রয়েছেন। গত কাল অপহৃত দুই মিজোকে তাঁদের বাড়িতে ফোন করে কথা বলিয়েছে জঙ্গিরা। তাঁরা জানান, ১৫-২০ জন সশস্ত্র জঙ্গি তাঁদের পাহারা দিচ্ছে। তবে তাঁদের সঙ্গে জঙ্গিরা কোনও খারাপ ব্যবহার করেনি। খাবারও মিলছে। তবে তাতে খুব ঝাল দেওয়ায় তাঁরা ভালোভাবে খেতে পারছেন না। পুলিশের দাবি, ব্রু জঙ্গিরা অপহৃতদের ত্রিপুরায় সক্রিয়, এনএলএফটি (বিশ্বমোহন) গোষ্ঠীর জঙ্গিদের হাতে তুলে দিয়েছে। এনএলএফটি ওই তিনজনকে বাংলাদেশের জোপুই গ্রামে নিয়ে যায়। পরে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় থংনাং এলাকায়। তাই বাংলাদেশ পুলিশের সাহায্য ছাড়া মিজোরাম এবং ত্রিপুরার পুলিশ অভিযান চালাতে পারছে না।
দীপ বাঁকুড়ার ইন্দাসের ছেলে। তাঁর উদ্বিগ্ন পরিজনরা বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শীর্ষ কর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছেন। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় মিজোরাম সরকারকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের অফিসার, বর্তমানে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সচিব লাইমা চোজাকে মিজোরাম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার দায়িত্ব দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব। লাইমা চোজা মিজোরামের বাসিন্দা। তিনি বেশ কিছুদিন মিজোরাম সরকারের অধীনে কাজও করেছেন।
শনিবারও রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দফতর ‘নবান্ন’-এ আসেন দীপের বাবা নিখিল মণ্ডল। তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্র সচিব যে চিঠি লিখেছেন সেই বিষয়ে মিজোরাম থেকে কিছু জানানো হয়েছে কিনা তা জানার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু ওখান থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।” বাসুদেববাবু বলেন, “আমরা মিজোরাম সরকারকে চিঠি দিয়েছি। মানবাধিকার কমিশনের সচিব লাইমা চোজাকে মিজোরাম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
অপহৃত দীপের বাবা নিখিল মণ্ডল বলেন, “দিল্লির একটি বেসরকারি টেলিকম সংস্থার কলকাতা অফিসে কাজ করেন দীপ। ভাইফোঁটার পরে অফিসের কাজে ও মিজোরামে যায়। ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ওর সঙ্গে আমাদের টেলিফোনে যোগাযোগ ছিল। ২৩ নভেম্বর থেকে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তার পরেই আমরা কলকাতার শ্যামপুকুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করি।” |
|
|
|
|
|