রীতিমতো ঝাঁ-চকচকে বিল্ডিং। রয়েছে ফুলের বাগান, পাওয়ার হাউস, আর বড় হল ঘর। সেই হল জুড়ে বসানো হয়েছে আধুনিক মেশিনপত্র। এ চেহারা শহরের প্রথম স্বয়ংক্রিয় কসাইখানার।
শুধু রাজ্য নয়, ভারতের পূর্বাঞ্চলে এমন কসাইখানা এখনও নেই বলে দাবি পুরকর্তাদের। কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে ট্যাংরায় ১.৮ একর জমির উপরে গড়ে উঠেছে এটি। জানা গিয়েছে, সেখানে স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে দৈনিক সাড়ে বারোশো গরু কাটা হবে। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে বর্তমান পুরবোর্ড মাত্র দু’বছরের মধ্যেই আন্তজার্তিক মানের এই কসাইখানা গড়ে তুলল। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা।”
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা মনে করেন, যেখানে সেখানে কাটা পশুর মাংস খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কোনও ক্ষেত্রে অসুস্থ পশু কাটা হচ্ছে। তা থেকে বাড়ছে রোগ। অতীনবাবু জানান, পশু কাটার আগে পরীক্ষা করে তার গায়ে এখন স্ট্যাম্প মারাও হয় না। তিনি আরও বলেন, “কাটার আগে পশুটি সুস্থ কি না, যাচাই করা জরুরি। আধুনিক কসাইখানায় সে দিকে নজর দেওয়া হবে। পরীক্ষা না করে পশু কাটার অনুমতি মিলবে না।” |
শহরের যত্র তত্র পশু কাটার প্রবণতা কমানোর লক্ষ্যে আরও চারটি আধুনিক কসাইখানা তৈরির প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান অতীনবাবু। তিনি বলেন, “প্রকাশ্যে ছাগল, ভেড়া-সহ অন্য পশু-পাখি কাটা রুখতে হবে। এ জন্য অবশ্য বিকল্প পরিকাঠামো গড়ে দেবে পুর-প্রশাসন।” ট্যাংরায় পুরসভার বর্তমান কসাইখানায় এখন দৈনিক গড়ে সাড়ে চারশো গরু কাটা হয়। কিন্তু সেখানকার পরিবেশ তত ভাল নয় বলে মনে করছে পুরসভা। সেই কারণেই নতুন কসাইখানা গড়াতে উদ্যোগী হয় পুরসভা। এ জন্য লখনউ ও সিমলায় স্বয়ংক্রিয় কসাইখানা দেখতেও যান পুরকর্তারা।
পুরসভা সূত্রের খবর, বেশ কয়েক বছর ধরে ট্যাংরায় আধুনিক কসাইখানা তৈরির দাবি উঠেছিল। কিন্তু জমি জটের কারণে তা হয়নি। তৃণমূল বোর্ড ক্ষমতায় আসার পরে তা কার্যকর করতে পদক্ষেপ করে স্বাস্থ্য দফতর। অতীনবাবু জানান, ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জীবন সাহা জমি জট খোলার ব্যাপারে উদ্যোগী হন। ২০১১ সালে জমি জট খুলতেই পুরসভা প্রকল্পের কাজে হাত দেয়।
পুরসভা সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিভাগ ও পুরসভার যৌথ আর্থিক সহায়তায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি গড়ে উঠেছে। কেন্দ্র দিয়েছে ১৬ কোটি। বাকিটা দিয়েছে পুরসভা। তবে প্রকল্প পরিচালনার ভার নিজের হাতে রাখতে চায় না পুরসভা। ঠিক হয়েছে বার্ষিক আর্থিক চুক্তিতে টেন্ডারের মাধ্যমে কোনও বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেও য়া হবে। অতীনবাবু জানান, বর্তমানে ট্যাংরায় কসাইখানা চালাতে পুরসভার ভাঁড়ার থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। নতুন কসাইখানা থেকে বছরে দু’কোটিরও বেশি টাকা আয় হবে। |