ভবানীপুরের মহেন্দ্র রায় রোডে একটি বহুতল আবাসনের দোতলার ফ্ল্যাট থেকে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের হিরে উধাও হয়ে গিয়েছে বলে শনিবার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করল সুরাতের একটি সংস্থা। ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ তিন যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। পুলিশের দাবি, তিন জনের কথায় অসঙ্গতি রয়েছে। হিরে চুরি হয়েছে, নাকি সে সব আত্মসাৎ করে চুরির গল্প ফাঁদা হচ্ছে— তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
সুরাতের ওই সংস্থার এক কর্তা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান, ওই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে তাঁদের সংস্থার কর্মী সন্দীপকে রাখা হয়েছে। ফ্ল্যাটটি অফিস ও বাসস্থান দুই কাজেই ব্যবহৃত হয়। সন্দীপ আট মাস কাজে যোগ দিয়েছেন। তিনি সংস্থারই এক অংশীদারের আত্মীয়। মাস খানেক আগে তাঁর কাছে কিছু হিরে ক্যুরিয়র করে পাঠানো হয়। শুক্রবার সকালে তিনি সংস্থার এক কর্তাকে ফোন করে জানান, ফ্ল্যাটের ভিতরে বিছানার তোষকের তলায় হিরেগুলি রেখেছিলেন। সেগুলি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ জানায়, শুক্রবারই ভবানীপুর থানায় পৌঁছে মৌখিক ভাবে হিরে উধাও হওয়ার খবর দেন সন্দীপবাবু। সংস্থার ওই কর্তা সুরাত থেকে এ দিন কলকাতায় পৌঁছে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ জানায়, সন্দীপ এবং তাঁর বন্ধু বলে পরিচিত মণীশ ও হিতেশ নামে দুই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে সন্দীপ জানিয়েছেন, ২১ নভেম্বর ক্যুরিয়রের মাধ্যমে তাঁর কাছে হিরে আসে। বৃহস্পতিবার বড়বাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রির জন্য হিরেগুলি তিনি নিয়ে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মণীশ। সন্দীপ দাবি করেছেন, ওই ব্যবসায়ী হিরে না নেওয়ায় রাতে তিনি ও মণীশ ভবানীপুরের ফ্ল্যাটে ফিরে আসেন। হিরেগুলি তোষকের তলায় রেখে তাঁরা হিতেশ নামে অন্য এক বন্ধুর বাড়িতে যান। হিতেশের বাড়িও মহেন্দ্র রায় রোডে। সেখানে রাত কাটিয়ে পরের দিন বাড়িতে ফেরার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু শুক্রবার বাড়ি ফেরার আগেই ভাড়া-ফ্ল্যাটের মালিক ফোন করে জানান, তাঁদের ফ্ল্যাটের দরজা খোলা রয়েছে। তিনি ফিরে দেখেন, ফ্ল্যাটের তালা ভাঙা।
কিন্তু তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের দাবি, শুক্রবার ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে প্রাথমিক ভাবে তালা পরীক্ষা করে তাঁরা দেখেছেন সেটা ভাঙা ছিল না। চাবি দিয়েই খোলা হয়েছে। এ ছাড়া, বড়বাজার যাওয়া, সেখান থেকে তাঁর ফ্ল্যাটে ফেরা ও হিতেশের বাড়ি যাওয়ার যে সময় পুলিশকে জানিয়েছেন সন্দীপ, তার সঙ্গে দুই বন্ধুর জানানো বক্তব্যের মধ্যেও অসঙ্গতি রয়েছে।
বড়বাজারের যে ব্যবসায়ীর কাছে হিরে নিয়ে যাওয়ার দাবি করেছে মণীশ এবং হিতেশ, তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ কারা হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। হিরে বিক্রেতা সংস্থার তরফে পুলিশকে জানিয়েছেন কোনও হিরে ব্যবাসায়ীর কাছে হিরে যে দিন নিয়ে যাওয়া হয় সে দিনই ফেরত দেওয়া হয় না। হিরের গুণমাণ যাচাইয়ের জন্য ব্যবসায়ীরা কয়েক দিন রেখে দেন। গুণমান যাচাইয়ের পরেই হিরে ফেরত দেওয়া হিরে ব্যবসার একটা রেওয়াজ বলে পুলিশ জানতে পেরছে। সংস্থার কর্তারা পুলিশকে জানান, এই ক্ষেত্রে কেন ব্যবসায়ী সেই দিনই হিরে ফেরত দিলেন তা তারা বুঝতে পারছেন না। এই রহস্য উদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বিবেচনা করছেন গোয়ন্দারা। মণিশ এবং হিতেশে সেই দিনের মোবাইল ফোনের কললিস্টও বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। |