শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডে ধৃত দুই নাবালিকাকে অবিলম্বে জুভেনাইল বোর্ডে হাজির করানোর নির্দেশ দিলেন ব্যাঙ্কশাল আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট। শনিবার এই মামলায় অনধিকার প্রবেশ ও সংঘর্ষ বাধানোর মামলায় অভিযুক্ত ন’জনকে জেল হেফাজত থেকে আদালতে হাজির করানো হয়। মামলার প্রধান অভিযুক্ত পরাগ মজমুদারকে দু’দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ৯এ শর্ট স্ট্রিটের ওই বাড়ির অন্যতম বাসিন্দা রতনলাল নাহাটা। তাঁর লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিভলভারের হদিস পেতে পরাগকে নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল পুলিশ। আদালত তা মঞ্জুর করেছে। বাকিদের ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
অনধিকার প্রবেশ ও সংঘর্ষ বাধানোর এই মামলায় অভিযুক্ত ন’জনের মধ্যে মহিলা ৪ জন। তাঁদের এক জন আইনজীবী, দু’জন নাবালিকা। অভিযুক্তদের আইনজীবীরা বিচারককে জানান, এই দুই নাবালিকা স্কুলে পড়ে। অবসর সময়ে তারা বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থায় কাজ করে। ১১ নভেম্বর ৯এ শর্ট স্ট্রিটের বাড়িটি পাহারা দেওয়ার কাজে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারা কোনও ভাবেই অনধিকার প্রবেশ ও সংঘর্ষে জড়িত নয়। নাবালিকাদের জামিনে মুক্তির আবেদন জানানো হয়। এই মামলায় অন্য অভিযুক্তদের আইনজীবীরাও জামিনের আবেদন জানান। বিচারক জানান, নাবালিকা দুই অভিযুক্তকে অবিলম্বে জুভেনাইল বোর্ডে হাজির করাতে হবে।
পুলিশের অভিযোগ, বহিরাগতরা ওই বাড়ির দখল পেতে গত ১১ নভেম্বর হামলা চালালে যাঁদের দখলে বাড়িটি ছিল, তাঁরা বহিরাগতদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। গুলিতে দু’জন নিহত হন। জখম হন দু’জন। শনিবার অভিযুক্ত পরাগকে ব্যাঙ্কশাল আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করিয়ে সরকারি আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস বিচারককে জানান, কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বরও ৯এ শর্ট স্ট্রিটের বাড়িতে এক দল দুষ্কৃতী চড়াও হয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, দখলদারদের উৎখাত করা। পরাগ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দুষ্কৃতীদের দিয়ে ওই হামলা চালিয়েছিলেন বলে গোয়েন্দাদের অভিযোগ। আরও অভিযোগ, ওই বাড়ির চত্বরে যে
স্কুল রয়েছে, তার অফিস থেকে
বেশ কয়েক হাজার টাকা, তিনটি মোবাইল ফোন এবং বাড়ির অন্যতম বাসিন্দা রতনলাল নাহাটার লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিভলভার দুষ্কৃতীরা লুঠ করে পরাগের নির্দেশে।
সরকারি আইনজীবী বিচারককে জানান, জেরায় পরাগ গোয়েন্দাদের জানিয়েছিলেন, লুঠ হওয়া রিভলভার জগদ্দলের একটি জায়গায় রয়েছে। কিন্তু সেখানে তল্লাশি করে রিভলভার মেলেনি। পরে জেরার মুখে পরাগ জানান, লুঠ হওয়া রিভলভার, মোবাইল ফোন এবং টাকার হদিস পেতে তিনি গোয়েন্দাদের সাহায্য করবেন। সেই কারণেই ওই অভিযুক্তকে গোয়েন্দাদের হেফাজতে রাখার আবেদন জানানো হয়েছে।
পুলিশি হেফাজতে রাখার আবেদনের বিরোধিতা করে পরাগের আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা এ দিন আদালতে জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজের ইচ্ছায় বিচারকের কাছে শর্ট স্ট্রিট কাণ্ড নিয়ে গোপন জবানবন্দি দিতে চেয়ে আগেই আবেদন করেছেন। তাঁকে গোপন জবানবন্দি দিতে দেওয়া হবে কি না, সেই ব্যাপারে এ দিন আদালতে শুনানি হওয়ার কথা। বিচারক অভিযুক্তকে পুলিশি হেফজতে রাখার নির্দেশ দিলে পুলিশ তাঁকে প্রভাবিত করতে পারে। সেই কারণে অভিযুক্তকে জেল হেফাজতে রেখে তাঁকে গোপন জবানবন্দির মানসিক প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিক আদালত।
দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট রাজকুমার নাইয়া এ দিন জানান, লুঠের জিনিসপত্রের হদিস পেতে পরাগ মজমুদারকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখা হোক।
|