ক্ষমতায়ন বা এমপাওয়ারমেন্ট-এর থিম নিয়ে শুরু হয়েছিল ইনফোকম ২০১৩। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের এই রাজসূয় যজ্ঞের প্রথম দিনেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল আলোচনার অভিমুখ। ব্যাঙ্কিং থেকে তথ্যপ্রযুক্তি সব শিল্পের প্রতিনিধিরাই জানান, বৃদ্ধির চাকা যতই জোরে ঘুরুক না-কেন, সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়ন না-হলে, আর্থিক উন্নয়নের সুফল তাঁদের দরজায় পৌঁছয় না। অনুষ্ঠানের শেষ দিনেও সেই একই সুরে সুর মিলিয়ে দিল সরকার ও শিল্পমহল। আর, সেই ক্ষমতায়নের মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করল ছোট ও মাঝারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাকে।
শনিবার ইনফোকমে আলোচনাসভার শেষ দিনে এই ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গে ছোট-মাঝারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার গুরুত্বের কথা টেনে আনলেন সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক অফ ইন্ডিয়া (এসটিপিআই)-র প্রধান ওমকার রাই। তিনি জানান, শুধুই বড় সংস্থা নয়। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে ছোট ও মাঝারি সংস্থার বাড়বাড়ন্তও জরুরি। ঘরে-বাইরে প্রতিযোগিতার বাজারে এই সংস্থাগুলির উন্নতির দিকে নজর রেখেই কেন্দ্র তৈরি করছে পরবর্তী এসটিপি প্রকল্প।
ছোট ও মাঝারি শিল্পের জন্য সরকারি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বরাবরই বলে আসছে ন্যাসকম। কারণ এদের হাত ধরেই বিশ্ব বাজারে প্রথম পা রাখে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। তবে ওমকার রাই-এর দাবি, শুধু মাত্র আর্থিক সহায়তা নয়। এ ধরনের সংস্থার এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করে দিতে চাই যথাযথ পরিবেশ ও পরিকাঠামো। তিনি বলেন, “শুধুই আর্থিক সাহায্য নয়। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে বড় শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাই সুযোগ-সুবিধা। গ্রামাঞ্চলে এই শিল্পের সুবিধা ছড়িয়ে দিতেই বড়দের সঙ্গে প্রয়োজন ছোট ও মাঝারি সংস্থা।” তিনি জানান, এই পথেই শহরের বাইরে লগ্নি টানতে ও সেই লগ্নি বাস্তবায়িত করে ব্যবসা বৃদ্ধির দিকে নজর দিচ্ছে নয়া এসটিপি প্রকল্প। |
আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি ছোট-মাঝারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার প্রতি সঠিক মনোভাব তৈরির দিকেও যে নজর দিতে হবে, এই দাবি সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের তরফ থেকেও উঠে এল। দুর্গাপুরে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা পিন্যাক্ল ইনফোটেক সলিউশন্স-এর বিমল পাটোয়ারির দাবি, আগের তুলনায় বড় শহরের বাইরে সামাজিক ও অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নত হয়েছে। তবে তাঁর মতে, প্রশাসন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি। তাঁর অভিযোগ, “অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ে আমাদের আমন্ত্রণ জানান না। অথচ সঠিক কাজের পরিবেশ থাকায় আমাদের সংস্থায় চাকরি ছাড়ার প্রবণতা ১০ শতাংশেরও কম। যা তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে উল্লেখযোগ্য।”
একই সুরে আইক্সিয়া টেকনোলজিসের অনিরুদ্ধ মাথুরিয়া জানান, ছোট ও মাঝারি সংস্থায় অনেক উন্নত মানের কাজ হয়। সেই সব কাজের পরিমাণ বাড়াতে উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন। তিনি বলেন, “এই শিল্পে গবেষণা করতে ইচ্ছুক মানবসম্পদ রাজ্যে কম নেই। কিন্তু তাঁদের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাই ইনকিউবেশন সেন্টার। তার জন্য জরুরি সরকারি সহায়তা।” প্রসঙ্গত, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, মাইক্রোসফটের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রাজ্য এ ধরনের ইনকিউবেশন সেন্টার তৈরি করছে।
এ দিন এসটিপিআই-এর পক্ষ থেকে এ রাজ্যের ১৫টি সংস্থাকে পুরস্কার দেওয়া হয়। মূলত ছোট ও মাঝারি সংস্থার তকমা নিয়েই সর্বোচ্চ রফতানি, সবচেয়ে বেশি মহিলা কর্মী, মাথা পিছু সর্বাধিক রফতানি ইত্যাদি মানদণ্ডের নিরিখে পুরস্কার জিতেছে সংস্থাগুলি। এ রাজ্যে এসটিপিআই প্রথম এ ধরনের পদক্ষেপ করল।
|