বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মঞ্চে জয় হাসিলের কথা গতকালই (শুক্রবার) ঘোষণা করেছিল ভারত। তার চব্বিশ ঘণ্টা না-পেরোতেই ইন্দোনেশিয়ার এই দ্বীপ-শহরে মাইলফলক ছোঁয়ার কথা জানাল বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাও। তাদের দাবি, ‘জন্মের পর’ এই প্রথম সাফল্যের স্বাদ পেল তারা। কারণ, দর কষাকষির পর এই প্রথম বাণিজ্য-নীতি নিয়ে কিছুটা ঐকমত্যে পৌঁছতে পারল সদস্য দেশগুলি। যার দরুন আগামী দিনে পৃথিবী জুড়ে বাণিজ্যের পরিমাণ অন্তত এক লক্ষ কোটি ডলার বাড়বে বলে মনে করছে মার্কিন অর্থনৈতিক সমীক্ষা। এর হাত ধরে প্রায় ২ কোটি ১০ লক্ষ কাজের সুযোগ তৈরি হবে বলেও সমীক্ষাটির দাবি। ভারতের শিল্পমহল এবং রফতানিকারীরাও মনে করছেন, ফলে লাভবান হবেন তাঁরা।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ডিরেক্টর-জেনারেল রবার্তো আজেভেদো বলেন, “বালির মঞ্চে আক্ষরিক অর্থেই একজোট হয়েছে পৃথিবী।” এই সাফল্য থেকে অক্সিজেন নিয়েই নতুন দৌড় শুরু করবে ডব্লিউটিও। খোলা যাবে দোহা রাউন্ডের আলোচনার দরজা।
১৯৯৫ সালে তৈরি হওয়ার পর থেকেই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রধান লক্ষ্য পৃথিবীজুড়ে (বিশেষত ১৬০টি সদস্য দেশের মধ্যে) বাণিজ্য যথাসম্ভব অবাধ করা। এতে জোর দিতে ২০০১ সালে আলোচনাও শুরু হয়েছিল দোহাতে। কিন্তু তা সাফল্যের মুখ দেখেনি। কারণ, বাণিজ্য-নীতি নিয়ে মতান্তর থেকেই গিয়েছে আমেরিকা, ইউরোপের মতো উন্নত দুনিয়ার সঙ্গে ভারত, চিনের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির। কৃষিতে ভর্তুকি কমানো নিয়ে মতপার্থক্য আছে ইউরোপ আর মার্কিন মুলুকের মধ্যেও।
তাই অবাধ বাণিজ্য নিয়ে ডব্লিউটিও-র ছাতার তলায় যতবার বৈঠক বসেছে, ততবারই তা ভেস্তে গিয়েছে। কখনও বৈঠক চলাকালীনই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন মানুষ। মার্কিন মুলুকের সিয়াটল তো সাক্ষীই থেকেছে পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধের। সেই তুলনায় বরং শান্তিপূর্ণ ছিল বালির আলোচনা।
কূটনীতির দড়ি টানাটানি এ বারও ছিল। ছিল কেউ কারও আগে পলক ফেলতে না-চাওয়া স্নায়ুর লড়াই। যেমন ভারতই একরোখা ভাবে জানিয়ে দিয়েছিল খাদ্য সুরক্ষা বিল না-মানলে, নয়া বাণিজ্য চুক্তিও মানবে না তারা। ফলে ফের ভেস্তে যাবে আলোচনা। শুক্রবার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা জানায়, কোনও দেশ তার প্রধান খাদ্যশস্যে ভর্তুকি দিলে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। ফলে নিষ্কণ্টক হয় ইউপিএ সরকারের প্রস্তাবিত খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প। মেনে নেওয়া হয় ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে সরকারের খাদ্যশস্য কেনার বিষয়টিও। উজ্জ্বল হয় ঐকমত্যে পৌঁছনোর সম্ভাবনা। শেষ মুহূর্তেও তাদের উপর বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ আরোপ নিয়ে বেঁকে বসেছিল কিউবা। কিন্তু শনিবার সেই বাধা কেটে যাওয়ায় সাফল্যের খোঁজ পায় ডব্লিউটিও। যা না-পেলে বাণিজ্য-কূটনীতির মঞ্চে অপ্রাসঙ্গিকই হয়ে পড়তো তারা।
অবশ্য সংশয়ের মেঘ তবু থাকছে। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, এত সমঝোতার বিনিময়ে যে ঐকমত্য পাওয়া গেল, তাকে সত্যিই সাফল্য বলা যাবে কি? |