তাঁরা দণ্ডিত। সমাজের অনুশাসন লঙ্ঘনের অপরাধে তাঁদের দণ্ড দিয়েছে আইন। সেই দণ্ডিত মানুষগুলিই অন্য রকম মুক্তি খুঁজছেন রবীন্দ্রনাথের নিয়ম ভাঙার তিন নাট্যের মঞ্চায়নে। এক দিনে রবি ঠাকুরের তিনটি নাটক ‘তাসের দেশ’, ‘রক্তকরবী’ আর ‘তোতা কাহিনী’ মঞ্চস্থ করবেন বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ২৩ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি। তাঁদের মধ্যে ১৮ জন পুরুষ এবং পাঁচ জন মহিলা।
রাজ্যের কারা দফতর এবং বহরমপুর রেপার্টরির যৌথ উদ্যোগে আজ, শনিবার কলকাতার রবীন্দ্র সদনে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রবীন্দ্রনাথের ওই তিনটি নাটক পরপর মঞ্চস্থ করবেন বন্দিরা। দিনভর এই অভিনব নাট্যোৎসবের সূত্রে কবির নোবেল জয়ের শতবর্ষকেও স্মরণ করতে চলেছেন তাঁরা।
এক কারাকর্তা বলেন, “সাংস্কৃতিক মাধ্যমের সাহায্যে বন্দিদের সংশোধনের প্রক্রিয়া নতুন নয়। তবে এই প্রয়াস অভিনব। কারণ, ২৩ জন বন্দি যে-তিনটি নাটকে অভিনয় করছেন, তার প্রতিটিরই বিষয় সমাজের অচলায়তন ভাঙার অঙ্গীকার। তার সঙ্গে যেন বন্দিদের মুক্তির স্বপ্নও একাকার হয়ে গিয়েছে।”
২০০৬ সাল থেকে বহরমপুর জেলের বন্দিদের নিয়ে নাটকের কাজ শুরু করে বহরমপুর রেপার্টরি। ওই নাটকের দলের অন্যতম কর্ণধার প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথায়, “বহরমপুর জেলের সঙ্গে ইতিহাস দারুণ ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এবং তার বেশির ভাগটাই দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস। আবার এই জেলে বসেই ১৯৩৫ সালে নাটকে মেতে ওঠেন উৎপল দত্ত। এই ধরনের একটি জেলে বন্দিদের নিয়ে নাটক করার সুযোগ পাওয়া গর্বের।”
বন্দিদের নিয়ে প্রদীপবাবুদের কাজ শুরু হয় রবীন্দ্রনাথের ‘তাসের দেশ’-কে ভিত্তি করেই। প্রদীপবাবু বলেন, “আমরা এমন কোনও নাটক করতে চেয়েছিলাম, যার সঙ্গে বন্দিরা নিজেদের জীবনের যোগসূত্র খুঁজে পেতে পারেন। বন্দিরা তো তাসের দেশের মতোই একটি অচল, অনড় নিয়মের বেড়াজালে বন্দি জগতের বাসিন্দা। আর আমরা যেন নাটকের হাত ধরে এসেছি সেই গানওয়ালার সুর পৌঁছে দিতে।” রবীন্দ্রনাটকের অংশ হয়ে বন্দিরা একই সঙ্গে মুক্তির বার্তাবাহক এবং নিজেরাও আশ্চর্য মুক্তির উড়ানে সামিল।
২০০৬-এর ২৬ নভেম্বর ‘তাসের দেশ’ প্রথম মঞ্চস্থ হয় বহরমপুরেই। ২০০৭-এ ফের ওই নাটক অভিনীত হয় কলকাতায়। সাফল্যও মেলে। তার পরে বন্দিদের ওই দলকে নিয়ে বহরমপুর রেপার্টরি একে একে প্রস্তুত করে ‘রক্তকরবী’ এবং ‘তোতা কাহিনী’ নাটক দু’টি। প্রদীপবাবু জানাচ্ছেন, এই দু’টি নাটকে উদ্দেশ্য সেই একই। একটিতে অন্ধকার থেকে মুক্তি পাওয়ার আকুতি এবং অন্যটিতে মুক্ত আকাশে উড়ে যাওয়ার বাসনা। বন্দিদের সংশোধনের প্রক্রিয়া নিয়ে তৈরি ছবি ‘মুক্তধারা’র অন্যতম পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বললেন, “কাজের সূত্রে বহরমপুর জেলের ওই সব বন্দির সঙ্গে আমার এক বার কথা হয়েছিল। ওঁরা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ কি কখনও জেলে ছিলেন? না-হলে উনি আমাদের জীবনের কথা এ ভাবে লিখলেন কী করে! বন্দিদের মুখে এই প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।”
বহরমপুর জেলের অধিকাংশ বন্দিই নিরক্ষর। নাটকের সুবাদে এখন তাঁদের অনেকেই পড়াশোনা শুরু করেছেন। উৎসাহ দেখাচ্ছেন অন্য ‘কালচারাল থেরাপি’ বা সাংস্কৃতিক শুশ্রূষাতেও। এক কারাকর্তার কথায়, “শিল্প সৃষ্টি হয় মনের বিকাশের জন্য। আর বহরমপুর রেপার্টরি বন্দিদের নিয়ে সেই কাজটাই করছে।”
|
সঞ্জয় দত্তকে ৩০ দিনের জন্য প্যারোলে ছুটি দিল পুণে পুলিশ। স্ত্রীর অসুস্থার কারণেই এই ছাড় মিলল ৯৩-এর বিস্ফোরণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত এই বলিউড অভিনেতার। তবে প্যারোলে ছুটির শর্ত, হল এই ৩০ দিন সপ্তাহে দু’বার খার থানায় হাজিরা দিতে হবে সঞ্জয়কে।
|
প্রবাসী শিল্পী গোপা ত্রিবেদীর একক গানের অনুষ্ঠান ‘ট্রিবিউটস ও
তারানা’-য় সাংসদ সৌগত রায় ও শিল্পী। সম্প্রতি রবীন্দ্র সদনে। |
|