আলু উত্পাদনে পশ্চিমবঙ্গ ভারতে দ্বিতীয় স্থানে। কিন্তু আলুর বীজ আনতে হয় ভিনরাজ্য থেকে। আলুর বীজ উত্পাদন বাড়িয়ে এ বিষয়ে রাজ্যকে স্বনির্ভর করার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। তা মাথায় রেখে পরের মরসুমে ৩০০ টন জ্যোতি আলুর বীজ উত্পাদন করার পরিকল্পনা নিল উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এতে বাজারে আলুবীজের চাহিদা কতটা মিটবে, সে বিষয়ে অবশ্য সন্দিহান কোচবিহারের আলুচাষিরা।
গত মরসুমে পুন্ডিবাড়িতে পরীক্ষা মূলক ভাবে জ্যোতি আলুর বীজ তৈরি করা হয়েছিল। এক একর জমি থেকে বীজ মিলেছে প্রায় ৬ টন। এই সাফল্যও বাড়তি উত্সাহ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাজারের চাহিদা দেখেই জ্যোতি আলুর বীজ উত্পাদনে এ বার বাড়তি জোর দেওয়া হয়। আগামী মরসুমের জন্য ৩০০ টন বীজ উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষামূলক উদ্যোগ সফল হয়ে উত্সাহ বেড়েছে।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু কোচবিহার জেলাতেই প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে ফি বছর আলু চাষ হয়। এ জন্য গড়ে প্রায় ২০ হাজার টন আলু বীজ দরকার হয়। পঞ্জাব থেকে আসা আলু বীজেই মূলত জেলায় চাষ হয়। এ বার খোলা বাজারে বীজের অভাব দেখা দিয়েছে। গতবার কুইন্টাল-প্রতি বীজের দাম ছিল ১২০০ টাকা। এ বার ৪২০০ টাকা হয়েছে।
|
কম দামে চাষিদের কাছে বীজ পৌঁছে দিতে এ বার ৫০ একর এলাকায় ওই আলুর বীজ তৈরির পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। তাতে অন্তত তিনশো টন বীজের উত্পাদন হতে পারে বলে আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের। পুন্ডিবাড়ির পাশাপাশি চোপড়া, মাঝিয়ান ও খড়িবাড়ি এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্রগুলিতে এ জন্য জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই জমিগুলিকে বীজ তৈরির উপযোগী করে তোলার কাজও ইতিমধ্যে শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি গবেষকরা। প্রত্যাশা অনুসারে বীজ তৈরি করা গেলে তা বীজ নিগমের মাধ্যমে কম দামে চাষিদের হাতে তুলে দেওয়া যেতে পারে। উপাচার্য বিশ্বনাথবাবু বলেন, “প্রাথমিক হিসেব করে দেখা গিয়েছে, উত্পাদন খরচ তুলতে ১৮-২০ টাকা কিলোগ্রাম দরে ওই কৃষকদের জ্যোতি আলুর বীজ দেওয়া সম্ভব হবে।”
কিন্তু কম দামে বীজ পাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে খুব একটা আশান্বিত হতে পারছেন না চাষিরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্রে তিনশো টন বীজ উত্পাদন হলেও তা তাঁদের প্রয়োজনের তুলনায় সামান্যই। তাই খোলা বাজারে দামের হেরফের কতটা হবে তা নিয়ে সন্দিহান চাষিদের একাংশ। দিনহাটার এনামুল হক, আনোয়ার হোসেনরা বলেন, “গতবার তুলনায় আলু বীজের দাম অনেকটাই বেড়েছে। শুধু ৩০০ টন বীজ উত্পাদন করে সমস্যা মিটবে না। সহভাগি প্রথায় আলু বীজ করা গেলে সমস্যা মিটতে পারে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দরকার। আগে সেটা হোক।” বক্সিরহাটের জয় সাহা বলেন, “বীজ উত্পাদন বাড়ানোর ওই উদ্যোগ মন্দের ভাল। এতে অবশ্য বাইরের বীজের বাজারে কোনও প্রভাব পড়বে না। তাই আমাদের উদ্বেগ থাকছেই।”
বীজের পরিমাণ যে চাহিদার তুলনায় কম, তা মানছেন উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি কৃষি অধিকর্তা মৃগেন্দ্র ঘোষও। তিনি বলেন, “পরীক্ষামূলক ভাবে এ বারই প্রথম আলু বীজ তৈরিতে আমরা সফল হয়েছি। এই প্রক্রিয়াকে সামনে রেখে চাষি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে সহভাগি খামারের মাধ্যমে বীজ তৈরি করা গেলে কোচবিহার আলু বীজ উত্পাদনে স্বনির্ভরতার স্বপ্ন দেখতে পারে।” তবে এই আশ্বাস মানছেন না কোচবিহার জেলা আলু-পাট-ধান চাষি সংগ্রাম সমিতির সম্পাদক নৃপেন কার্জি। তিনি বলেন, “সরকার ভর্তুকি দিয়েও পর্যাপ্ত আলু বীজ বিক্রি করতে পারছে না। আলুর বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করতেই হিমসিম খাচ্ছে। সেখানে সহভাগি প্রথার আলু বীজ তৈরি করা বাস্তবে সম্ভব নয়।” |