উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের রায়গঞ্জ ডিপোর ‘ওয়ার্কশপে’ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল। বৃহস্পতিবার সকালে ওই অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে যায় দু’টি সরকারি বাস। ওয়ার্কশপের কর্মীদের তৎপরতায় অবশ্য চারটি বাস আগুন থেকে রক্ষা পায়। ওয়ার্কশপের চালের একাংশ, একাধিক যন্ত্রপাতি ও বিদ্যুতের লাইন পুড়ে গিয়েছে। দমকল আসার আগে ওয়ার্কশপের কর্মীরাই জল ছড়িয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন কৃষ্ণ বর্মন নামে ডিপোর এক চালক। তাঁকে রায়গঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পরে দমকলের রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে দুটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রাথমিক তদন্তে দমকল জানিয়েছে, ওয়েল্ডিং (ঝালাই) বা সর্ট-সার্কিট থেকেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দমকলের অভিযোগ, ওয়ার্কশপে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা ছিল না। ডিপো কর্তৃপক্ষ দমকলের থেকে ফায়ার সেফটি সার্টিফিকেটও নেননি। রায়গঞ্জ দমকল কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক শঙ্কর সেন বলেন, “বাস মেরামতির সময় ওয়েল্ডিংয়ের আগুন বা ব্যাটারির শর্ট-সার্কিটের আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বিধি অমান্য করেই ওয়ার্কশপটি চলছিল। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিলে থানায় অভিযোগ জানানো হবে।” |
ডিপোর তরফে অবশ্য এ দিন দুপুরে রায়গঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। আগুনের কারণ হিসেবে দমকলের বক্তব্য মানতে রাজি হননি নিগমের রায়গঞ্জের ডিভিশনাল ম্যানেজার সুবীর সাহা। তিনি বলেন, “কী কারণে এই ঘটনা ঘটল তা জানতে ডিপোর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বা ফায়ার সেফটি সার্টিফিকেটের ব্যাপারে মন্তব্য করব না।” নিগমের বোর্ড সদস্য তিলক চৌধুরী জানান, সবমিলিয়ে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমি সব দেখে এসেছি। নিছকই দুর্ঘটনা না অন্য কোনও কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, তা দেখা হচ্ছে।” রায়গঞ্জ থানার আইসি দীনেশ প্রামাণিক জানান, ঘটনার কারণ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কারও কর্তব্যে গাফিলতির জেরে ঘটনাটি ঘটলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিপো সূত্রের খবর, এ দিন ঘটনার সময়ে ওয়ার্কশপে ১৫ জনেরও বেশি কর্মী ছিলেন। মেরামতির জন্য সেখানে ৬টি বাস পাশাপাশি ছিল। আচমকাই কর্মীরা বাঁদিক থেকে প্রথমে থাকা একটি বাসে আগুন জ্বলতে দেখেন। বাসটির চারটি চাকা খোলা থাকায় সেটিকে সরানো যায়নি। আগুন আরেকটি বাসে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। স্টার্ট না নেওয়ায় আগুন লাগা অবস্থাতেই বাসটিকে ঠেলে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে দেন কর্মীরা। দু’টি বাসই জ্বলতে থাকে। ওয়ার্কশপে বাস মেরামতির জন্য বিভিন্ন তরল দাহ্য পদার্থ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় আগুন ছড়িয়ে যায়। কোনওক্রমে বাকি চারটি বাসকে বার করে দেওয়া হয়।
নিগমের তৃণমূল চালক ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য কৌশিক দে বলেন, “দলমত নির্বিশেষে সমস্ত কর্মীদের তৎপরতায় চারটি বাস বাঁচানো গিয়েছে। আমাদের ধারণা শর্ট-সার্কিট থেকেই আগুন লাগে।” আইএনটিইউসি প্রভাবিত নিগমের ওয়ার্কাস ইউনিয়নের রায়গঞ্জ ডিপো সম্পাদক প্রণব বসাক বলেন, “শটসার্কিট থেকেই হয়ত এই ঘটনা।”
সিটু প্রভাবিত নিগমের এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের উপদেষ্টা পরিতোষ দেবনাথ জানান, ভবিষ্যতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এড়াতে নিগম কর্তৃপকক্ষের কাছে অগ্নিনির্বাপণ বিধি কার্যকরী করার দাবি জানানো হচ্ছে। আমাদের মনে হয় ওয়েল্ডিং থেকেই আগুন লেগেছে। অনেকে নিজেদের গাফিলতিকে ঢাকতে ওয়েল্ডিংকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন। নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই সবকিছু স্পষ্ট হবে। |