চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া তো দূরের কথা, দিনের পর দিন নিজেই রুগ্ণ হয়ে পড়েছে কান্দির খোরজুনা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। দু’জন স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া আর কেউই নেই এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। অথচ বছর পনেরো আগেও এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরেই নির্ভর করে থাকতেন আশপাশের প্রায় পনেরোটি গ্রামের মানুষ। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তখন একজন চিকিৎসক, দু’জন নার্স, একজন ফার্মাসিস্ট ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী থাকতেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্র লাগোয়া এলাকাতে তাঁদের থাকার জন্য আবাসনও ছিল। এখন সেগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দু’জন স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া আর কারও দেখা মেলে না। গ্রামে কারও অসুখ বিসুখ হলে দশ কিলোমিটার দূরে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে ছুটতে হয়। অথচ হাতের কাছে এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেও নেই। দেড় দশক আগে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসক অন্যত্র চলে যাওয়ার পর আবাসনগুলো ফাঁকাই পড়ে ছিল। তারপর এক এক করে চুরি হয়ে যায় আসবাবের দরজা, জানালা। রাতের অন্ধকারে প্রাচীর থেকে ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা।
স্থানীয় বাসিন্দা চরণ দে, সঙ্গীতা রায়রা সমস্বরে বলছেন, “খোরজুনা ছাড়াও কুনিয়া, আন্দি, কল্যাণপুরের মতো প্রায় দশটি গ্রামের বাসিন্দারা সকাল থেকে চিকিৎসার জন্য এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতেন। এখন আমাদের সকলকেই সামান্য অসুখ বিসুখেও ছুটতে হয় কান্দিতে।”
এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা তো মেলেই না বরং রাতের অন্ধকারে এখানে নানা অসামাজিক কাজকর্মও চলে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। গত জুন মাসে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিত্যক্ত আবাসনে খোরজুনার এক মহিলার দেহ মেলে। তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। প্রতিবেশী প্রকাশ দাশ নামে এক যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে খোরজুনার মানুষ গ্রামে একটি প্রতিবাদী মঞ্চ তৈরি করেছেন। ওই মঞ্চের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য নন্দকিশোর মণ্ডল বলেন, “গ্রামের একমাত্র এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেটি যাতে তার রুগ্ণ দশা কাটিয়ে পুনরায় আগের মতো হয় তার জন্যও আমরা আন্দোলন শুরু করেছি।”
শুধু খোরজুনা নয়, বড়ঞা ব্লকের সুন্দরপুর, পাঁচথুপি, কুলি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে কুলি ও পাঁচথুপি স্বাস্থ্যকেন্দ্র দু’টি কোনওমতে চলছে। বাকি দু’টির অবস্থা তথৈবচ। কান্দি মহকুমার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভাস্কর বৈষ্ণব বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই স্বাস্থ্য দফতরে কোনও নিয়োগ না হওয়ায় চিকিৎসকের পাশাপাশি নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ঘাটতি রয়েছে। বিষয়টি আমরা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ভবনকেও জানিয়েছি।” |