স্বচ্ছ (দু’দিকে দেখা যায়) পলিথিনের হঠাৎই চাহিদা বেড়ে গিয়েছে বসিরহাটের বাদুড়িয়া থানার বাগজোলা, কলসুর প্রভৃতি এলাকায়। বর্ষা শেষ, তবু ওই সব এলাকায় পলিথিনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণ শুনলে চমকেই উঠতে হয়। বেহাল রাস্তাই নাকি পলিথিনের চাহিদা বাড়ার কারণ।
দীর্ঘদিন ধরে বাদুড়িয়া থানার বাগজোলা, কলসুর এলাকার মধ্যে দিয়ে যাওয়া মছলন্দপুর-বাদুড়িয়া রাস্তার সংস্কার হয়নি। এমনই অবস্থা যে পিচ ছিল কি না কষ্ট করে তা মালুম করতে হয়। অন্যতম ব্যস্ত এই রাস্তায় যানবাহনের চাপও যথেষ্ট। আর সেটাই আরও সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাড়ি গেলেই পিচ ওঠা ইটের রাস্তায় ধুলোর ঝড়ে নাকাল হতে হচ্ছে রাস্তার দু’পাশের দোকানদার থেকে আশপাশের বাসিন্দাদের। একে তো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সারাক্ষণই নাক, মুখ ঢেকে রাখতে হচ্ছে। তার উপর বাড়ি-ঘরের আসবাবপত্র থেকে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি যেমন টিভি, ফ্রিজের অবস্থাও সঙ্গীন। দোকানদারদের বক্তব্য, “কত আর মোছামুছি করা যায়। তা ছাড়া দোকানে খদ্দের সামলাব, না ধুলো আটকাবো। যতদিন বর্ষা ছিল ততদিন তাও বৃষ্টিতে ধুলোর ঝড় কিছুটা সামাল দেওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এখন শীত পড়েছে। শুকনো রাস্তায় ওড়া ধুলোয় প্রাণ ওষ্ঠাগত। ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসারও।” |
তাঁদের অভিযোগ, রাস্তা সারানোর জন্য বার বার দাবি জানানো হয়েছে। পথ অবরোধ থেকে শুরু করে নানা ভাবে বিক্ষোভও দেখানো হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের কারও কোনও তাগিদ নেই।” কলসুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “বর্ষার সময়ে খানাখন্দে ভরা রাস্তা মেরামতিতে ইট ব্যবহার করা হয়েছিল। এখন সেই ইট গুঁড়ো হয়ে উড়ে এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। ধুলোর ঠেলায় রাস্তার ধারে দোকানদারি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। বাড়ি-দোকান সর্বত্র ধুলোয় ভরা। বারে বারে পূর্ত দফতরকে জানিয়েও সুরাহা হচ্ছে না।” বাধ্য হয়ে ধুলোর অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে নিজেরাই উপায় বের করেছেন তাঁরা। আর তা হল দোকানের সামনেটা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন তাঁরা। দোকান খোলার পর বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সারাক্ষণ তা টাঙানো থাকছে। পাশাপাশি গাড়ি গেলে ধুলো ওড়া বন্ধ করতে জল ছেটানোরও ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। কলসুরের এক দোকানদারের কথায়, “কী করব, দোকান তো আর বন্ধ রাখতে পারি না। তাই বাধ্য হয়েই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।” বাগজোলা, কলসুর এলাকার প্রায় প্রতিটি দোকানেই চোখে পড়বে এই দৃশ্য।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যে ভাবে ধুলো উড়ছে তাতে বড়রা তো বটেই বাচ্চাদেরও শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বড়রা অনেকে সবসময় নাক-মুখ ঢেকে রাখলেও ছোটদের কী সেভাবে সামলানো যায়? তবু অনেকে বাচ্চাদের মুখে মাস্ক বেঁধে দিচ্ছেন।
বসিরহাট মহকুমার স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত পান্ডে বলেন, “নাক-মুখের মধ্য দিয়ে ঢোকা ধুলো-বালি ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কাশি, হাঁপানি, অ্যাজমা এমন অনেক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”
কিন্তু রাস্তা সারানোর বিষয়ে প্রশাসনের কী ভূমিকা?
বসিরহাটের পূর্ত দফতরের সহকারী বাস্তুকার তপন নস্কর বলেন, “দু-একটা জায়গা ছাড়া সর্বত্র রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। বাকি রাস্তাগুলিতে খুব শীঘ্রই মেরামতির কাজ শুরু হবে।” কিন্তু কত দিন অপেক্ষার পর রাস্তার দুর্ভোগ ঘুচবে তা অবশ্য নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না প্রশাসন।
স্থানীয় বাসিন্দা আসিফ ইকবাল, মনিরুজ্জামান, কমল মণ্ডল বলেন, “ছোটবেলায় ‘রামগরুড়ের ছানা, হাসতে তাদের মানা’ ছড়া পড়েছিলাম। এখন আমাদের যে ভাবে সব সময় নাক-মুখ ঢেকে চলতে হচ্ছে, তাতে কারও সঙ্গে হাসাহাসি তো দূর, কথা বলাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” |