পাচার হওয়া কিশোরীকে
বাড়ি ফেরালেন গাড়িচালক
ছর খানেক আগে উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরের সাতবেড়িয়া এলাকার এক কিশোরী পাচার হয়ে গিয়েছিল হলদিয়ায়। ওই কিশোরী পাচারের অভিযোগ তুলেছে তারই খুড়তুতো দিদির বিরুদ্ধে। সে এখনও ধরা পড়েনি। তবে, দিন কয়েক আগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, কিশোরীকে অকথ্য অত্যাচার থেকে উদ্ধার করে বাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছেন হলদিয়ারই দিঘাসিপুর গ্রামের এক যুবক। তিনি পেশায় গাড়ি-চালক।
ওই কিশোরী ও তার বাড়ির লোকজনের পাশাপাশি বছর সাতাশের ওই যুবকের প্রশংসা এখন সাতবেড়িয়ার বহু মানুষের মুখে। ওই যুবক আপাতত ওই কিশোরীর বাড়িতেই রয়েছেন। তাঁর কথায়, “কী আর এমন করেছি? এক জনকে দুর্দশার হাত থেকে বাঁচিয়েছি শুধু। আমি চাই ও (কিশোরী) স্বাভাবিক জীবনে ফিরুক। আমিও বাড়ি ফিরব। বড় হলে ওর বাড়ির লোক যেখানে খুশি ওর বিয়ে দিতে পারেন। তাঁরা রাজি থাকলে আমারও বিয়ে করতে আপত্তি নেই।” ওই কিশোরী অবশ্য এখনই বিয়ের কথা ভাবছে না। সে শুধু বলে, “দিদি আমার সঙ্গে যা করল বলতে লজ্জা করছে। তবে, ওই যুবক আমার জন্য যা করেছেন, জীবনে ভুলব না। আবার আমাকে সব কিছু নতুন ভাবে শুরু করতে হবে। তবে, আমি চাই দোষীরা দ্রুত সাজা পাক।”
কিশোরীর ওই দিদি-সহ তিন আত্মীয় এবং এক দালালের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার গোপালনগর থানায় মেয়েকে পাচারের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তার বাবা। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তেরা পলাতক। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে স্কুলে পরীক্ষা দিতে না যাওয়ার কারণে অষ্টম শ্রেণির ওই কিশোরীকে তার বাবা বকেন। অভিমানে ওই কিশোরী সাতবেড়িয়া স্টেশনে চলে যায়। অভিযোগ, সেখান থেকেই ওই কিশোরীকে তার খুড়তুতো দিদি ভুলিয়ে হলদিয়ায় একটি লজে নিয়ে গিয়ে তোলেন। সেখানে তাকে জোর করে দেহ ব্যবসায় নামানো হয়। প্রতিবাদ করলে কিশোরীকে রড দিয়ে মারধর, খেতে না দেওয়া এবং খুনের হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
মাস ছয়েক পরে ওই লজেই কিশোরীর সঙ্গে দিঘাসিপুরের ওই গাড়ি-চালকের আলাপ হয়। ওই যুবকের কথায়, “মেয়েটি আমার কাছে কান্নাকাটি করত। বাড়ি ফিরতে চাইত। ওর মুখে সব ঘটনা শুনি। ওকে একটা মোবাইল ফোন দিয়েছিলাম। সেটা ওরা কেড়ে নেয়। তার পরে পালানোর পরিকল্পনা করি। এক দিন ভোররাতে লজের গুদামের দরজা খুলে ওকে নিয়ে পালিয়ে আসি। ধরা পড়লে ওরা আমাদের খুনও করে ফেলতে পারত।” ওই কিশোরী বলে, ‘‘ওখানে আমাকে ঠিকমতো খেতে দেওয়া হত না। বাংলাদেশ এবং নানা জায়গা থেকে আরও ১০-১৫টি মেয়েকে ওখানে রেখে তাদের দিয়ে একই কাজ করানো হত। কারও সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হত না। আমি চাই ওরাও মুক্তি পাক।’’
পুলিশকে ওই যুবক জানিয়েছেন, লজ থেকে বেরিয়ে আসার পরে প্রথমেই বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছিল ওই কিশোরী। তাই তাকে তিনি ‘বন্ধুর বোন’ পরিচয় দিয়ে কিছু দিন নিজের বাড়িতে রাখেন। তার পরে বনগাঁর হুদা গ্রামে মেয়েটির মামারবাড়িতে যান। কিন্তু সেখানে আশ্রয় না পেয়ে হলদিয়ায় ফিরে ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে কিছু দিন থাকেন। এর পরে মেয়েটি গ্রামে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। ২৪ নভেম্বর তিনি কিশোরীকে সাতবেড়িয়ায় ফিরিয়ে আনেন। হারানো মেয়েকে ফিরে পেয়ে খুশি বাবা-মা। কিশোরীর বাবা বলেন, “বছর খানেক ধরে মেয়েকে কত জায়গায় খুঁজেছি! আমারই ভাইয়ের মেয়ে যে এই কাজ করবে ভাবতেই পারছি না। আমিও চাই দোষীরা সাজা পাক।” ওই কিশোরী এবং যুবকের অভিযোগ, তারা হলদিয়া থেকে মাঝেমধ্যেই হুমকি-ফোন পাচ্ছে। কিশোরীর যে খুড়তুতো দিদির বিরুদ্ধে পাচারের অভিযোগ উঠেছে, তার বাড়ি ওই গ্রামেই। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে তার দেখা মেলেনি। বাড়ি ছিল তালাবন্ধ।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.