গঙ্গাতীরের বিভিন্ন পুরসভার নিকাশি নালা নদীতে পড়ায় জলদূষণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তা নিয়ে মামলাও হয়েছে বিস্তর। এ বার জাতীয় পরিবেশ আদালত ওড়িশা সরকারের কাছে জানতে চাইল, পুরীর সমুদ্রতটের তলা দিয়ে ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালা নিয়ে যাওয়া হয়েছে কেন?
পুরীর সমুদ্রতটের তলা দিয়ে কী ভাবে নিকাশি নালা নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কী ভাবে সেই সব নালা থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে, তার বেশ কিছু ছবি বৃহস্পতিবার দিল্লির জাতীয় পরিবেশ আদালতে পেশ করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সওয়ালে সুভাষবাবু বলেন, বিশ্বে আর কোথাও সমুদ্রতটের তলা দিয়ে ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালা নিয়ে যাওয়া হয় না। এর ফলে পুরীর সমুদ্রতট দূষিত হচ্ছে।
কী ভাবে? সুভাষবাবু আদালতে বলেন, সমুদ্রে সব বর্জ্য গিয়ে পড়ায় তার জল এমনিতেই দূষিত হচ্ছে। তার উপরে নিকাশি নালার ম্যানহোলগুলির মুখ অধিকাংশই খোলা। সেখানকার বর্জ্য সমুদ্রতটের উপরে উপচে পড়ছে। কিন্তু সে-দিকে পুরী পুরসভার নজর নেই বলে সুভাষবাবুর অভিযোগ।
স্বর্গদ্বারের শ্মশানের ছাই এবং জগন্নাথ মন্দিরের কাঠের উনুনের ধোঁয়া বাতাসে মিশে যে-দূষণ ছড়াচ্ছে, তা আটকাতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, পরিবেশ আদালত এর আগেই ওড়িশা সরকারের কাছে তা জানতে চেয়েছিল। দেশের উপকূল অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী সমুদ্রতটের ৫০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণকাজ নিষিদ্ধ। কিন্তু পুরীতে সেই নিয়ম মানা হয় না বলে সুভাষবাবুর অভিযোগ। দূষণ রুখতে ওড়িশা সরকার আট সদস্যের কমিটি গড়েছে। কী ভাবে সমুদ্রতটের ৫০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণকাজ চালানো হল, সেই বিষয়ে ওই কমিটিকে বক্তব্য পেশ করতে বলেছে জাতীয় পরিবেশ আদালত।
জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে পুরীতে দূষণ রুখতে ওড়িশা সরকারের মুখ্যসচিবকে চেয়ারম্যান করে আট সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গড়ার নির্দেশ দেয় পরিবেশ আদালত। এ দিন শুনানির সময় ওড়িশা সরকারের আইনজীবী জানান, ইতিমধ্যে ওই কমিটি গড়া হয়েছে। পুরীর সমুদ্রের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, আদালতে তা জানানোর জন্য এ দিন আরও চার মাস সময় চায় ওড়িশা সরকার। আদালত ওড়িশা সরকারকে দু’মাস সময় দিয়েছে।
পুরীর পরিবেশের অবক্ষয় নিয়ে ওড়িশা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্টও বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে সুভাষবাবু জানান। তিনি বলেন, ওই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, পুরীর নিকাশি নালার জলে বিভিন্ন উপাদানের পরিমাণ সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েকশো গুণ বেশি। স্বর্গোদ্বারের বাতাস সহনীয় মাত্রার চেয়ে কোথাও পাঁচ গুণ, কোথাও সাত গুণ বেশি খারাপ। ওড়িশা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট বলছে, কঠিন বর্জ্য শোধন এবং নষ্ট করার জন্য পুরী পুরসভা যে-ব্যবস্থা নিয়েছে, তা সন্তোষজনক নয়। |