এমু পাখির চাষ করে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা বাদুড়িয়ায়
জাল দিয়ে ঘেরা জায়গায় খেলে বেড়াচ্ছে এমুর দল। কখনও দৌড়চ্ছে, কখনও বা লাফাচ্ছে। শীতের দুপুরে একসঙ্গে এক ঝাঁক এমু পাখির এমন দাপাদাপি দেখতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি ভিড় করছেন আশপাশের গ্রামের মানুষও। উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার দ্বীপমেদিয়া গ্রামের বাসিন্দা শ্রীমন্ত দত্ত-র এমুর খামার এখন রীতিমত দ্রষ্টব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মোবাইল সারানোর ব্যবসা রয়েছে শ্রীমন্তর। হঠাৎ এমু পাখি চাষের কারণ জানতে চাইলে শ্রীমন্ত জানান, বছর ছয়েক আগে সংবাদপত্রে এই সংক্রান্ত খবর দেখে উৎসাহিত হন তিনি। সেই সূত্র ধরে যোগাযোগ হয় হিমাচলপ্রদেশের একটি সংস্থার সঙ্গে। সেখানে চলে যান তিনি। হিমাচলপ্রদেশের সোলাং জেলায় এ ব্যাপারে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ নেন শ্রীমন্ত। ন্যূনতম কতটা জায়গায় এমু চাষ করা যায়, কী ভাবে তাদের খাবার দিতে হয়, রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থাই বা কী, কী ভাবে ডিম ফুটিয়ে এমুর বাচ্চা করা হয় সব বিষয়েই প্রশিক্ষণ নিয়েই এই চাষে নেমেছেন। কারণ এমু চাষ লাভজনক। আপাতত ২৯টি এমু নিয়ে চাষ শুরু করেছেন শ্রীমন্ত।
এক বিঘা জমির চারপাশটা জাল দিয়ে ঘেরা। তার মধ্যে ইতস্তত ছুটে বেড়াচ্ছে এমুর দল। জমির একপাশে তৈরি তিনটি ঘরের সামনে বিচালির চাল দেওয়া জায়গায় এমুদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। সামনে জাল ঘেরা জায়গাটা তাঁদের খেলার মাঠ। এমু চাষের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছেন শ্রীমন্ত।
এমুর পরিচর্যায় ব্যস্ত শ্রীমন্ত। ছবি: নির্মল বসু।
জানালেন, “ছ’মাস বয়সের মোট ৩০টি এমু হুগলির তারকেশ্বরের একটি ফার্ম থেকে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। প্রতি জোড়া কিনেছিলেন ১৪ হাজার টাকায়। আনার সময় রাস্তায় ধকলে একটি মারা যায়। এক-একটি এমু পাখির ডিম হাজার টাকায় এবং মাংস প্রতি কিলো পাঁচশো টাকায় বিক্রি হয়।”
চাষের জন্য অস্ট্রেলিয়ান এই এমু নিয়ে নানা তথ্যও সংগ্রহ করেছেন শ্রীমন্ত। তাঁর কাছেই জানা গেল, ডিম ফোটাতে এমুরা ৫২ দিন সময় নেয়। তাই দ্রুত ডিম ফোটানোর জন্য দরকার ইনকিউবেটার মেশিন। এক সঙ্গে এক হাজার ডিম ফোটানো যায়, এমন মেশিনের দাম ৩ লাখ টাকা। ভালভাবে চাষ করতে পারলে ইনকিউবেটর কেনার জন্য তাঁকে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ঋণ দেওয়ারও প্রুতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানান তিনি। এক-একটি এমুর দিনে খাবার লাগে ৪০০ গ্রাম। আর লাগে ১০-১২ লিটার জল। কলমি শাক, পেয়ারা পাতা এবং বিশেষ করে টমেটো এমুদের প্রিয় খাদ্য। দেড় বছরে তাঁরা প্রথম একসঙ্গে ১০-১২টি ডিম দেয়। পরের বছরে দেয় একসঙ্গে ২০-২২টি। এই ভাবে প্রতি বছরে ডিমের সংখ্যা বাড়ে। সাধারণত এমু ৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। দাঁত না থাকায় ঠোঁট দিয়েই খেতে অভ্যস্ত এরা। ঘন্টায় ৫০ কিলোমিটার গতিতে দৌড়তে সক্ষম। এদের মাংস সুস্বাদু এবং ফ্যাটবিহীন। এমুর তেল, চামড়া, হাড় সমস্ত কিছুই কাজে লাগে।
তবে এমু চাষ নিয়ে অন্য আশঙ্কাও রয়েছে শ্রীমন্তর। তাঁর কথায়, “এমু চাষ নিয়ে এই সব এলাকার মানুষ তেমন কিছু জানেন না। যে ভাবে এমু পাখি দেখতে খামারে ভিড় হচ্ছে তাতে আশঙ্কা কেউ কিছু খাবার দিয়ে দিলে তা ওদের পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে যেতে পারে।” তবে একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, এই চাষ লাভজনক। বেকাররা ব্যাঙ্কঋণের মাধ্যমে এমুর চাষ করে স্বনির্ভর হতে পারেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.