জঙ্গির পিস্তলের সামনে রুখে দাঁড়াল সাহসিনী দিদি গুঞ্জন
৫ ডিসেম্বর
শোরগোল ফেলে দিয়েছে গুঞ্জন!
সশস্ত্র জঙ্গির সামনে রুখে দাঁড়িয়ে গুঞ্জন যে ভাবে নিজের জীবন বিপন্ন করেছে তাতে অসমের শিবসাগরের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী গুঞ্জন শর্মাকে কুর্ণিশ করছেন মুখ্যমন্ত্রী থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই।
স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল গুঞ্জন ও আরও নয় ছাত্রছাত্রী। স্কুলগাড়ির বাকিরা সকলেই গুঞ্জনের ‘জুনিয়র’। আচমকাই এক সশস্ত্র জঙ্গি হাইজ্যাক করল তাদের স্কুল গাড়িটি। চালকের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে সে মর্জি মতো রাস্তায় তাদের নিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎই চালক, তাঁর উপস্থিত বুদ্ধিতে রাস্তার পাশের অগভীর খাতে গাড়িটি নামিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। কী করবে ওই জঙ্গি? স্কুল গাড়ির সব থেকে ছোট মেয়েটিকে ‘পণবন্দি’ হিসেবে নিয়ে যেতে চায় সে। আর তখনই রুখে দাড়ায় ‘দিদি’!
অন্যদের বাঁচাতে জঙ্গির পিস্তলের সামনে দাঁড়াল বছর চোদ্দোর স্কুলপড়ুয়া কিশোরীটি। বলল, “বাকিদের ছেড়ে দাও। নিতে হলে আমাকে নিয়ে যেতে পারো।” মেয়েটির সাহস দেখে উমানন্দ তো বটেই, এমনকী ওই জঙ্গিও অবাক। শেষে গুঞ্জনকে সঙ্গে নিয়েই অসম লাগোয়া নাগাল্যান্ডের জঙ্গলে ঢুকে যায় ওই জঙ্গি।
রাতভর পুলিশি অভিযানেও গুঞ্জনের সন্ধান মেলেনি। আজ ভোরে জঙ্গি যুবকটি মেয়েটিকে জঙ্গলে ছেড়ে রেখেই চলে যায়। ভোরের আলো ফুটতেই জঙ্গলের লাগোয়া রঙাজান গ্রামে হাজির হয় কিশোরী গুঞ্জন। খবর যায় পুলিশে। শুরু হয় সাহসী মেয়ে গুঞ্জনকে নিয়ে শোরগোল।

গুঞ্জন শর্মা। ছবি: উজ্জ্বল দেব।
নাটকের শুরু গত কাল দুপুর আড়াইটে নাগাদ। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শিবসাগর জেলার শিমুলগুড়ির মোড়ে, একটি হোটেলে এক যুবকের সঙ্গে দোকান মালিকের ঝগড়া হচ্ছিল। আচমকা ওই যুবক পিস্তল বের করে গুলি চালায়। আশপাশের লোকজন তাকে ঘিরে ধরতে গেলে কোমরে গোঁজা আরও একটি পিস্তল বের করে সে। শূন্যে গুলি চালাতে থাকা, উপজাতি ওই যুবককে ধরতে সাহস পাচ্ছিলেন না কেউ-ই। ওই সময় ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে একটি স্কুলগাড়ি ঘটনাস্থলে এসে পড়ে। গুলি চালিয়ে গাড়িটি থামায় ওই যুবক। চালকের পাশের আসনে উঠে একটি পিস্তল চালকের পেটে, অন্যটি এক ছাত্রীর মাথায় ঠেকিয়ে গাড়ি চালাতে বলে সে।
চালক উমানন্দ জানান, জঙ্গির নির্দেশমতো তিনি বড়কলা, মাহুতগাঁও হয়ে রাজগড় যান। ইতিমধ্যে গাড়ি ‘হাইজ্যাক’-এর খবর রটে যায়। পথে বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় মানুষ গাড়ি থামানোর চেষ্টা করলে ওই জঙ্গি গুলি চালাতে থাকে। পিছিয়ে যায় সকলেই। শিলসাঁকো হয়ে গাড়ি নিয়ে নাগাল্যান্ডের দিকে যেতে নির্দেশ দেয় জঙ্গি যুবকটি। নাগাল্যান্ডের সান্তাক লেংগিবর এলাকায় উমানন্দ গাড়ি রাস্তার পাশের অগভীর খাদে নামিয়ে দেন। তখন সন্ধ্যা নামছে। গাড়ি থেমে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত জঙ্গি এক শিশু-ছাত্রীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চায়। তখনই রুখে দাঁড়ায় গুঞ্জন।
আজ কিশোরী গুঞ্জন বলে, “আমি গাড়িতে সবার চেয়ে বড় ছিলাম। তাই মনে হল, ছোটদের বাঁচানোর দায়িত্ব তো আমারই। পিস্তল হাতে লোকটাকে বারবার বলি— আমাকে নিয়ে চলো, বাকিদের ছেড়ে দাও।” গুঞ্জন জানায়, পাহাড়-জঙ্গল দিয়ে অন্ধকারে হাঁটতে হচ্ছিল। হাত-পা কেটে যায়। অনেক রাত পর্যন্ত হেঁটে শেষে জঙ্গলের একটি বাঁশের জঙ্গলে থামে তারা। খাবার জোটেনি। ভোর পৌনে চারটে নাগাদ গুঞ্জনকে জঙ্গলে রেখেই চলে যায় ওই জঙ্গি।
ভোরের আলো ফুটতেই জঙ্গলে হাঁটতে থাকে গুঞ্জন। পৌঁছয় রঙাজান গ্রামে। একটি বাড়ির দরজায় ধাক্কা সে। ক্ষতবিক্ষত, ক্লান্ত মেয়েটিকে দেখে বাড়ির লোকজন প্রতিবেশীদের ডেকে তোলে। সবাই মিলে খবর দেয় পুলিশে। নাজিরার এসডিপিও আসিফ আহমেদ জানান, “সকাল ৬টা নাগাদ ওই কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়।”
গুঞ্জনের উদ্ধারের দাবিতে গত রাতে থানা ঘেরাও, পথ অবরোধ করেন বাসিন্দারা। এখন স্থানীয় মানুষ, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, রাজনৈতিক সংগঠন মেয়েটির সাহসের প্রশংসায় মুখর। স্থানীয় বিধায়ক দেবব্রত শইকিয়া জানান, সাহসিকতার পুরস্কারের জন্য তাঁরা গুঞ্জনের নাম দিল্লি পাঠাবেন। শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, সাহসিকতার জন্য গুঞ্জনকে ২৫ হাজার টাকা এবং বুদ্ধি করে ১০ ছাত্রছাত্রীকে বাঁচানোর জন্য গাড়ির চালক উমানন্দবাবুকে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ঘোষণা করেছেন দু’লক্ষ টাকার পুরস্কার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.