মোদী জাদুর ভূমিকা কতটা, প্রশ্ন দলেও
৫ ডিসেম্বর
টেস্ট পরীক্ষার ফল কী হতে পারে তার আভাস মিলেছে। ফাইনালের আগে এখন তাই নিয়ে অঙ্ক কষায় ব্যস্ত কংগ্রেস ও বিজেপি।
গত কাল দিল্লি এবং মধ্যপ্রদেশের আভাস দিয়েছিল এবিপি নিউজ-এসি নিয়েলসেনের বুথ-ফেরত সমীক্ষা। দুই রাজ্যেই বড় ব্যবধানে জয়ের সম্ভাবনা বিজেপি-র। আজ রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়ের সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে। বলা হচ্ছে, ২০০ আসনের রাজস্থান বিধানসভায় ১১০টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ হতে পারে বিজেপি। কংগ্রেস পেতে পারে ৭৩টি আসন।
কিন্তু বিজেপি-শাসিত ছত্তীসগঢ়ের ছবিটা জব্বর লড়াইয়ের। এবিপি নিউজের সমীক্ষা বলছে, সে রাজ্যে ৯০টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেতে পারে ৪৩টি আর কংগ্রেস ৪২টি। এমন ১৫টি আসন রয়েছে যেখানে জয়ের ব্যবধান হবে ৫০০ থেকে হাজার ভোট। ফলে মাত্র ২ শতাংশ ভোট এ দিক ও দিক হলেই বদলে যেতে পারে অঙ্ক। সমীক্ষা অবশ্য বলছে, ওই ভোট বিজেপি-র অনুকূলে গেলে তারা পেতে পারে ৪৮টি আসন। আর যদি কংগ্রেসের অনুকূলে যায়? তা হলে ৪৬টি আসন জিতে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যাবে।
অন্য দুই চ্যানেল সিএনএন-আইবিএন এবং আজ তক-এর সমীক্ষা অবশ্য গত কাল এমন কথা বলেনি। সিএনএন-আইবিএন-এর মতে, ছত্তীসগঢ়ে বিজেপি পেতে পারে ৪৫ থেকে ৫৫টি আসন। কংগ্রেস ৩২ থেকে ৪০টি। আর আজ তক বিজেপিকে ৫৩ এবং কংগ্রেসকে ৩৩টি আসন দিয়েছে।

রবিবার কী রায় দেবে পাঁচ রাজ্য? সেই চিন্তা নিয়ে বৃহস্পতিবার
শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।
এটা ঠিক যে জনমত সমীক্ষার এই ফলাফল বাস্তব ক্ষেত্রে সব সময় সত্যি হয়নি। কিন্তু তার পরেও ভোটারদের মানসিকতার আন্দাজ পেতে এই ধরনের সমীক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেন অনেক বিশেষজ্ঞই। ফলে চার রাজ্যের সমীক্ষা সামনে রেখেই চর্চা শুরু হয়েছে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের অন্দরে। বিজেপিতে স্বাভাবিক ভাবেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন নরেন্দ্রভাই মোদী। তাঁকে ঘিরেই দলীয় কর্মীদের যাবতীয় উচ্ছ্বাস। টানাপোড়েনও। মোটামুটি ভাবে বিজেপির আধিপত্যের ছবি স্পষ্ট হলেও লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজের মতো মোদী-বিরোধীরা ঘরোয়া আলোচনায় বলতে শুরু করেছেন, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী প্রচারে না-গেলে দলের ফল আরও ভাল হতে পারত। দলীয় সূত্রে পাওয়া খবর থেকে ওই নেতাদের দাবি, মূলত মোদী প্রচার করেছেন বলেই মধ্যপ্রদেশে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০টি আসনে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন সংখ্যালঘুরা। একই অবস্থা ছত্তীসগঢ়ে। বস্তুত, এ ব্যাপারে সঙ্ঘ পরিবারকে আগেই সতর্ক করেছিলেন শিবরাজ সিংহ চৌহান, রমন সিংহেরা। কিন্তু মোদীর ব্যাপারে সঙ্ঘ এতটাই উৎসাহী ছিল যে, বিধানসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসেবে মোদীর নাম ঘোষণা না করার যে দাবি আডবাণীরা তুলেছিলেন তা যেমন ধোপে টেকেনি তেমনই উপেক্ষিত হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীদের সতর্কবার্তা।
মোদী শিবির অবশ্য আডবাণীদের বিশ্লেষণ খারিজ করে দিচ্ছে। তাদের দাবি, ভোটাররা কংগ্রেসকে পুরোপুরি বাতিল করেছেন। মোদীর উপস্থিতিই ত্বরান্বিত করেছে সেই প্রক্রিয়া। এই টানাপোড়েনের পরিস্থিতিতে রবিবার মিজোরাম-সহ পাঁচ রাজ্যের ফল প্রকাশের পরে নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসবেন সঙ্ঘ পরিবারের নেতারা। সেখানে বিধানসভা ভোটে মোদীর প্রভাব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে।
বিজেপি শিবিরের এই ছবির বিপরীতে কংগ্রেস শিবির খানিকটা হলেও মনমরা। যদিও প্রকাশ্যে দলের কোনও নেতাই হার স্বীকার করছেন না। বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফল পুরোপুরি মিলবে না দাবি করেও তাঁরা বলছেন, ছত্তীসগঢ় এবং মধ্যপ্রদেশে গত বারের তুলনায় কংগ্রেসের আসন বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে সমীক্ষাই। কংগ্রেস যদি উড়েই গিয়ে থাকে, তা হলে এমনটা হয় কী করে! মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়ে মোদী-ম্যাজিক কাজ করেনি বলেই দাবি কংগ্রেস নেতাদের।
দিল্লিতে যে দলের অবস্থা ভাল নয়, সে কথা অবশ্য একান্ত আলোচনায় নেতারা স্বীকার করছেন। এবং তাঁদের ব্যাখ্যা, রাজধানীর ভোটাররা একেবারেই শহুরে মনস্ক। তাঁদের মত দেখে সামগ্রিক ভাবে দেশের ভোট সম্ভাবনা বিচার করলে ভুল হবে। কারণ, দেশ দাঁড়িয়ে রয়েছে গ্রামীণ ভোটারদের উপরে। আর কংগ্রেস এ বারে গ্রাম ও গরিব ভোটারদের প্রতি আলাদা ভাবে নজর দিচ্ছে। কোনও কোনও কংগ্রেস নেতা এ-ও বলছেন, এই চার রাজ্য মিলিয়ে লোকসভার আসন সংখ্যা মোটে ৭৩টি। যা মোট আসনের মাত্র ১৫ শতাংশ। এটুকু দেখেই গোটা দেশের মনোভাব কী, সেটা বুঝে নেওয়া ঠিক হবে না।
উদাহরণ হিসেবে তাঁরা ২০০৪ সালের ভোটের কথা বলছেন। সে বারে চারটির মধ্যে দিল্লি বাদে সব ক’টিতেই জিতেছিল বিজেপি। তাই দেখে লোকসভা ভোট ছ’মাস এগিয়ে এনেছিল অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকার। কিন্তু সেখানে বিজেপি অস্ত গিয়েছিল। বিজেপিকে কটাক্ষ করে এক কংগ্রেস নেতার মন্তব্য, “ওরা তো উত্তর-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু অনুকূলে পেয়ে খুশি হচ্ছে, কিন্তু দক্ষিণ-পূর্বে তাদের তো এখনও খরা!”
রাহুল গাঁধীর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলে কংগ্রেসকে পাল্টা কটাক্ষ করছেন বিজেপি নেতারা। বুথ-ফেরত সমীক্ষাকে অস্ত্র করে এ দিন থেকে রাহুলের বিরুদ্ধে পুরোদমে আক্রমণে নেমে পড়েছে বিজেপি। অরুণ জেটলির মতো নেতারা বলেছেন, “দীর্ঘমেয়াদি রাজনীতিতে পরিবারের ক্যারিশ্মার গুরুত্ব নেই। যখন কোনও দল, কোনও পরিবারের আশপাশে ঘুরপাক খায়, তখন সেই পরিবারের সদস্য ব্যর্থ হলে গোটা দলই মুখ থুবড়ে পড়ে। কংগ্রেসেরও তাই হয়েছে।”
কংগ্রেসের একাংশও বলছে, এ বারে নির্বাচনী কৌশল তৈরি থেকে প্রার্থী বাছাই, সবটাই করেছেন রাহুল। তাই দল বিপর্যয়ের মুখে পড়লে নতুন করে সনিয়া গাঁধীকে তুলে ধরার দাবি উঠতে পারে। অন্য অংশের অবশ্য বক্তব্য, রাহুলকে নিয়ে এত দূর এগিয়ে সনিয়াকে ফেরানোর দাবি তোলার কোনও মানে হয় না। তা ছাড়া, হঠাৎ ‘সনিয়া লাও’-ই বা কেন? তিনি তো আছেনই রাহুলের সঙ্গে।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.