রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার শতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে ‘ট্রামযাত্রা’ হবে মহানগরে। এর পোশাকী নাম দেওয়া হয়েছে ‘টেগোর ট্রামযাত্রা’। ট্রামটির নামকরণ হচ্ছে পুরস্কার পাওয়া কাব্যগ্রন্থ ‘গীতাঞ্জলি’র নামে। ১০ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার যাত্রা শুরু করে ওই ট্রাম চলবে ১৫ ডিসেম্বর, রবিবার পর্যন্ত।
কলকাতা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি) সূত্রের খবর, বিশেষ নকশার ওই ট্রাম তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে। সিটিসি সূত্রের খবর, এই ট্রামযাত্রার উদ্যোক্তা চারটি সংগঠন। সিটিসি ছাড়া বাকি তিনটি সংগঠন হল, ‘কলকাতা-মেলবোর্ন ট্রামযাত্রা ফ্রেন্ডশিপ’, ‘মেলবোর্ন কনি’ এবং ‘রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়’।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ট্রামের প্রাক্তন কন্ডাক্টর-চালক রবার্তো দি আন্দ্রেয়া ১৯৯৬ সালে প্রথম কলকাতায় আসেন। তার পর থেকেই তিনি কলকাতায় পরিবেশবন্ধু ট্রাম সম্পর্কে জনপ্রিয়তা এবং সচেতনতা তৈরির কাজ করে আসছেন। এই কাজের অঙ্গ হিসেবেই দু’-এক বছর পর পর সিটিসি-র সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে কলকাতায় বিশেষ ট্রামযাত্রা সংগঠিত করেন তিনি। এ বার সেই ট্রামযাত্রারই বিষয় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার শতবর্ষকে।
ট্রামযাত্রার অন্যতম উদ্যোক্তা ‘কলকাতা-মেলবোর্ন ট্রামযাত্রা ফ্রেন্ডশিপ’-এর এক কর্তা মহাদেব শী বলেন, “ইতিহাসবিদদের একাংশ দাবি করেন, ১০ ডিসেম্বরই স্টকহল্মে রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার তাঁর প্রতিনিধির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া, ওই দিনই বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। মানবাধিকার নিয়ে রবীন্দ্রনাথ চিরদিন লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তাঁর সাহিত্যের মাধ্যমে। বিশ্বমানবতা নিয়েও কবিগুরু বরাবর সরব ছিলেন। তাই আমরা রবীন্দ্রনাথের নোবেল জয়ের শতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে ওই দিনটিই বেছে নিয়েছি।”
মহাদেববাবু জানান, মানবাধিকারের সঙ্গে ওই ট্রামযাত্রার অন্য উদ্দেশ্য হল পরিবেশ সচেতনতা। রবীন্দ্রনাথকে ‘থিম’ করে ট্রামযাত্রার পরিবেশবান্ধব দিকটিও আর এক বার কলকাতাবাসীর সামনে তুলে ধরতে চান তাঁরা।
সিটিসি-র তরফে জানানো হয়েছে, ১০ তারিখ ট্রামযাত্রা শুরু হয়ে চলবে ১৫ তারিখ পর্যন্ত। এই পাঁচ দিন ‘গীতাঞ্জলি’ ট্রামটি কলকাতার বিভিন্ন রুটে ঘুরবে। বিভিন্ন রুটে চলার সময়ে ট্রামের মধ্যেই হবে রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে গান-নাটকের অনুষ্ঠান। তার আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। থাকবে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটি প্রদর্শনীও। বিষয়বস্তু ‘পাশ্চাত্যে রবীন্দ্রনাথ’। থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সিটিসি-র সদ্য প্রাক্তন চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈন বলেন, “অস্ট্রেলীয় সংস্থা দু’টির সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। বিশেষ ওই ট্রাম তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে।” সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সিটিসি-র কর্মীরাও অংশগ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।
রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে এই ট্রামযাত্রা নিয়ে উত্সাহী মেলবোর্ন কনি-র অন্যতম সদস্য রবার্তো দি আন্দ্রেয়াও। তিনি বলেন, “পরিবেশবন্ধু হওয়ার কারণে মেলবোর্নে ইতিমধ্যেই ট্রামরুট বাড়ানো হচ্ছে। কলকাতায় পরিবেশ দূষণ বেশি। তাই এখানে ট্রামযাত্রা আরও বাড়ানো উচিত।সেই সচেতনতাই আমরা প্রচার করতে চাই।” বিশেষ ভাবে তৈরি ওই ট্রামকে সংরক্ষিত করে আগামী বছর অক্টোবর মাসে মেলবোর্নে ‘ইন্টারন্যাশনাল আর্ট ফেস্টিভ্যাল’-এ হাজির করতে চান রবার্তো। ইতিমধ্যেই সিটিসি-র কাছে সেই প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। রবার্তোর কথায়, “রবীন্দ্রনাথ জীবদ্দশায় কখনও মেলবোর্নে যাননি। ট্রামের হাত ধরে রবীন্দ্রনাথ মেলবোর্নে পা রাখুন, এটাই আমরা চাই।” |