বিদেশ থেকে চোরাপথে সোনা যাতে ঢুকতে না-পারে, সেই জন্য দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুল্ক দফতরকে সতর্ক করা হয়েছে। সেই সতর্কতার ফলে শুধু সোনা নয়, সম্প্রতি ধরা পড়েছে চন্দনকাঠও। শুল্ক দফতর সূত্রের খবর, দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাইয়ে অত্যধিক কড়াকড়ির ফলে কলকাতা দিয়ে চোরাচালানদারদের গতিবিধি বাড়ছে। সোনা ও চন্দনকাঠ চোরাচালান হচ্ছে মূলত চিন, ব্যাঙ্কক, দুবাইয়ে। চিন-ব্যাঙ্ককে চোরাচালানের ক্ষেত্রে কলকাতা বিমানবন্দরকে ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে বলে জানান শুল্ক অফিসারেরা।
কলকাতা বিমানবন্দরেই বুধবার রাতে ধরা পড়েছে ২৭০ কিলোগ্রাম চন্দনকাঠ। এই ঘটনায় ১১ জন চিনা যুবক-যুবতীকে গ্রেফতার করেছে শুল্ক দফতর। তাঁরা চন্দনকাঠ নিয়ে চিনের কুনমিং ও হংকং যাচ্ছিলেন। চলতি মাসে এই নিয়ে চোরাচালানের পথে দ্বিতীয় বার ধরা পড়ল চন্দনকাঠ। ১ ডিসেম্বর এক চিনা যুবকের কাছে প্রায় ৩০ কিলোগ্রাম রক্তচন্দন পায় শুল্ক দফতর। ১৪ নভেম্বর কলকাতায় প্রায় ৯৭ কেজি রক্তচন্দন কাঠ-সহ ধরা পড়েন অন্য এক চিনা নাগরিক।
পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সোনা বাজেয়াপ্ত করার ঘটনাও। বুধবারেই ধরা পড়েছে সোনা। তার আগে ৩ এবং ১৩ নভেম্বর দু’জন দক্ষিণী যুবক ব্যাঙ্কক থেকে টর্চের ব্যাটারিতে লুকিয়ে সোনা আনতে গিয়ে ধরা পড়েন। সাম্প্রতিক কালের সব চেয়ে বড় সোনা পাচারের ঘটনাটি ঘটেছে নভেম্বরেই। জেটের বিমানের শৌচাগারে সাত কোটি টাকার সোনা পায় শুল্ক দফতর। এক শুল্ক অফিসারের কথায়, “আমাদের নজর এড়িয়েও বেশ কিছু জিনিসের চোরাচালান চলছে। নির্দিষ্ট তথ্য পেলে ধরা সম্ভব হচ্ছে। কখনও কখনও অফিসারদের সতর্ক দৃষ্টিতে ধরা পড়ে যাচ্ছে চোরাচালানদার।”
কলকাতা বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফের কাছে চন্দনকাঠ পাচারের খবর আসে মঙ্গলবার বিকেলে। দিল্লি থেকে ইন্ডিগোর উড়ানে তিন চিনা যুবক ও তিন চিনা যুবতী সন্ধ্যায় কলকাতায় নামেন। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ওই ছ’জন এমন ভাব করেন, যেন পরস্পরে চেনেন না। বিমানবন্দরের লাউঞ্জে পরস্পরের থেকে অনেক দূরে বসেন। সিআইএসএফ ও শুল্ক অফিসারেরা তাঁদের উপরে নজর রাখছিলেন। ওই বিদেশিদের গন্তব্য ছিল হংকং। রাতে কলকাতা থেকে আরও তিন চিনা যুবক ও দুই যুবতী বিমানবন্দরে ঢোকেন। তাঁরাও আলাদা আলাদা ঢুকেছিলেন। তাঁদের গন্তব্য ছিল কুনমিং। দু’টি দলের মধ্যে যে ইশারায় এবং মোবাইলে কথোপকথন চলছে, তা খেয়াল করেন সিআইএসএফ অফিসারেরা।
চেক-ইন করে অভিবাসন দফতর পেরিয়ে শুল্ক এলাকায় ঢোকার পরে শুল্ক অফিসারেরা ওই ১১ জন চিনা যুবক-যুবতীকে আটক করেন। দেখা যায়, দিল্লি থেকে আসা দলটির কাছে ১১৪ কিলোগ্রাম শ্বেতচন্দন রয়েছে। কলকাতার দলটির কাছে ছিল ১৫৬ কিলোগ্রাম চন্দনকাঠ। তার মধ্যে শ্বেত ও রক্তচন্দন দুই-ই ছিল। রক্তচন্দন কাঠের বল বানিয়ে স্যুটকেটে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। সেগুলো অনেকটা রুদ্রাক্ষের মতো দেখতে। |