দীর্ঘদিন ধরেই বাড়ি সারানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন কর্মীরা। অভিযোগ, সেই দাবিতে কর্ণপাত করেননি কারা এবং পূর্ত দফতরের তাবড় কর্তারা। বৃহস্পতিবার রাতে জেলের সেই কর্মী-আবাসনেরই একাংশ ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক মহিলার। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও এক প্রৌঢ়া।
পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের পিছনের দেওয়াল লাগোয়া জেলকর্মীদের আবাসনে একটি বাড়ির দোতলার বারান্দার ছাদ আচমকাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। ওই ফ্ল্যাটের দোতলার বাসিন্দা, জেলকর্মী তোতা শেখ জানিয়েছেন, সেই সময়ে ঘরে তিনি দুই ছেলে মুজিবর এবং মিজানুরকে পড়াচ্ছিলেন। তাঁর স্ত্রী রাবেয়া তুন্নেসা (৩৫) সেই সময়ে বারান্দায় ছিলেন। ছাদ ভেঙে পড়ায় ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়েন রাবেয়া। স্থানীয় বাসিন্দারা দৌড়ে এসে তোতা এবং তাঁর দুই ছেলেকে উদ্ধার করলেও রাবেয়াকে বার করে আনতে পারেননি। পরে দমকলকর্মীরা ভাঙা চাঙড় সরিয়ে রাবেয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
একই ভাবে ফ্ল্যাটের অন্য দিকে ভেঙে পড়া ছাদের নীচে আটকে পড়েন পারুল সর্দার (৫৫)। দমকলকর্মীরা পারুল এবং তাঁর স্বামীকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করেন। গুরুতর জখম অবস্থায় পারুলকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কল্যাণী দেবনাথ এবং গৌরী দাসেরা বলেন, “ঘটনার সময়ে আমি উল্টো দিকে বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। উপরে কড়কড় আওয়াজ শুনে পারুল টর্চ জ্বালিয়ে ছাদের দিকে দেখছিল। হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে ছাদটা পারুলের উপরে ভেঙে পড়ল। আমরা সবাই বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করে সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে যাই।” |
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দারাই জেল কর্তৃপক্ষ, দমকল এবং কলকাতা পুলিশকে খবর দেন। উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া এক স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বনাথ দাস বলেন, “বাসিন্দাদের আমরা বার করে এনেছিলাম। কিন্তু যাঁরা ধ্বংসস্তূপে আটকে গিয়েছিলেন, তাঁদের বার করতে পারিনি। পরে দমকল এসে তাঁদের উদ্ধারের কাজ শুরু করে।”
জেলকর্মীদের অভিযোগ, বহু দিন ধরেই আলিপুর সংশোধনাগার লাগোয়া কর্মী আবাসনগুলির জীর্ণ অবস্থা। বর্ষার সময়ে বাড়ির মধ্যে জল ঢুকে পড়ে। এখানে-ওখানে বহু বার চাঙড় খসে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। জেলকর্মীদের সংগঠনগুলিরও অভিযোগ, জীর্ণ অবস্থার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা যে ঘটতে পারে, তা একাধিক বার কারা দফতরকে জানিয়েছিল তারা। কিন্তু সুরাহা হয়নি।
কারা দফতরের কর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, জেল এবং কর্মী আবাসনগুলির সংস্কারের দায়িত্ব রাজ্য পূর্ত দফতরের হাতে। পূর্ত দফতরের কর্তাদের অনেক বার বিষয়টি জানানো হয়েছিল। এক কর্তা বলেন, “পূর্ত দফতরে অনেক বার চিঠিচাপাটি করা হয়েছে। কিন্তু সংস্কারের ব্যাপারে তাঁদের কোনও হেলদোলই নেই। দুর্ঘটনা ঘটার পরে এ বার যদি পূর্তকর্তারা নড়েচড়ে বসেন!” রাজ্য কারা দফতরের আইজি রণবীর কুমার অবশ্য বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “উদ্ধারকাজ চলছে। কী ভাবে এমন ঘটল, তা তদন্ত করে দেখা হবে।”
গভীর রাত পর্যন্ত পূর্ত দফতরের কাছেও এই দুর্ঘটনা নিয়ে কোনও খবর ছিল না। পূর্ত দফতরের শীর্ষ কর্তারাও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। রাজ্যের পূর্তসচিব ইন্দিবর পাণ্ডে বলেন, “খোঁজ নিয়ে তবেই বিস্তারিত বলতে পারব।”
|