|
|
|
|
|
একুশ দিনেই অনুমতি, বিনিয়োগ
টানতে এ বার ঘোষণা শিল্পমন্ত্রীর
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
নতুন শিল্প তৈরির জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়ে হাপিত্যেশ করে বসে থাকার দিন শেষ। এ বার থেকে আবেদনপত্র পাওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে নতুন শিল্পের ছাড়পত্র দেবে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার ইনফোকমের মঞ্চ থেকে এ কথা ঘোষণা করলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এক জানলা ব্যবস্থা, বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন এবং সমন্বয় অফিসার নিয়োগের পরে ছাড়পত্রের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে লগ্নি টানার পথে আরও এক কদম এগোনোর চেষ্টা করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
এ রাজ্যে লগ্নি করার ক্ষেত্রে লাল ফিতের ফাঁস অন্যতম বড় বাধা বলে শিল্প মহলের দীর্ঘদিনের অভিযোগ। জমি থেকে শুরু করে পরিবেশের ছাড়পত্র সব কিছু পেতেই বিস্তর সময় লাগে। মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসে শিল্পপতিদের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই এই ফাঁস কাটানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন মমতা। বণিকসভার প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন দফতরের সচিবদের নিয়ে সে দিনই একটি কোর গ্রুপ গঠন করে দিয়েছিলেন তিনি। তার পর গত আড়াই বছরে বেশ কিছু প্রশাসনিক পদক্ষেপ করেছে তাঁর সরকার। শিল্প স্থাপনের জন্য আবেদনপত্রের বহর ৯৯ পাতা থেকে কমিয়ে আনা হয়েছে ১৫ পাতায়। অতি সম্প্রতি প্রকল্প রূপায়ণের পথে বাধা কাটাতে শিল্প দফতরের এক জন যুগ্মসচিবের অধীনে টাস্ক ফোর্স গড়ার কথা এবং প্রতিটি প্রকল্পের জন্য কর্পোরেট ধাঁচে রিলেশনশিপ ম্যানেজার নিয়োগের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পার্থবাবু এ দিন বলেন, “এ ধরনের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার একটাই লক্ষ্য সময় কমিয়ে আনা। এবং তা কার্যকর করতে এ বার ২১ দিনের মধ্যেই যাবতীয় ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হবে।” তিনি জানান, ইতিমধ্যেই এক গুচ্ছ প্রকল্প মঞ্জুর হয়েছে। যার মোট জমির পরিমাণ ১০ হাজার একর। |
|
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইনফোকমের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে (বাঁ দিক থেকে)
প্রমোদ ভাসিন,
অভীক সরকার, লক্ষ্মী নারায়ণন, আর চন্দ্রশেখর, অশোক সুটা, রাজেশ হুক্কু,
সর্দার যোধ সিংহ, জয়তীর্থ ‘জেরি’রাও এবং রাজেন্দ্র এস পওয়ার। — নিজস্ব চিত্র। |
টাস্ক ফোর্স এবং রিলেশনশিপ ম্যানেজারের পরে তিন সপ্তাহে ছাড়পত্র দেওয়া ঘোষণাকে বাড়তি পাওনা হিসেবেই দেখছেন লগ্নিকারীরা। তাঁদের মতে, নীতির খুঁটিনাটি বুঝে তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক স্তরে কিছু সমস্যা থাকেই। এই ধরনের উদ্যোগ সেই সমস্যা কাটাতে সাহায্য করবে। শিল্প মহলের বক্তব্য, প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দেওয়ার পরে বিভিন্ন ছাড়পত্র পেতে দফতরে দফতরে ঘুরতে হয়। সুনির্দিষ্ট রিলেশনশিপ ম্যানেজার থাকলে সেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যেমন কমবে, তেমনই ছাড়পত্র দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়ায় হয়রানির হাত থেকেও মুক্তি মিলবে।
ইনফোকমের মঞ্চ কাজে লাগিয়ে রাজ্যের ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেন পার্থবাবু। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের এই চাঁদের হাটে তিনি জানান, এই শিল্পে লগ্নি ও মেধা টানতে নয়া নীতি তৈরি করেছে রাজ্য। এখানে ৫০০টি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা সব মিলিয়ে দেড় লক্ষ কর্মী নিয়োগ করেছে। পরোক্ষে আরও ৬ লক্ষ মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। ২০১১-’১২ আর্থিক বছরে পশ্চিমবঙ্গে এই শিল্পের আয় ছিল ৯৫০০ কোটি টাকা। পরের বছর সেই অঙ্ক ১১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে বলে দাবি শিল্পমন্ত্রীর।
এ বারের ইনফোকমের থিম এমপাওয়ারমেন্ট বা ক্ষমতায়ন। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পার্থবাবু জানান, শুধু লগ্নি বা কর্মসংস্থান নয়, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে উদ্ভাবনী শক্তিকে তুলে ধরতে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধছে রাজ্য। বিল গেটসের সংস্থা মাইক্রোসফট্-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে গড়ে উঠছে ইনকিউবেশন সেন্টার।
এমপাওয়ারমেন্ট সংক্রান্ত আলোচনাসভায় হ্যাপিয়েস্ট মাইন্ডস-এর অশোক সুটা (যিনি মাইন্ডশেয়ারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন কর্ণধার), এনআইআইটি-র রাজেন্দ্র পওয়ার, রিং টোন-এর র্যাল্ফ সাইমন, স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পি কে মলহোত্র, প্রত্যেকেই বলেন, ক্ষমতায়ন আসলে উন্নয়নেরই অন্য পিঠ। কারণ, ক্ষমতায়ন না-হলে, আর্থিক উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছয় না। তা সে বৃদ্ধির চাকা যতই জোরে ঘুরুক না কেন। তেমনই আবার উন্নয়নের সুফল বাড়িতে এলে তবেই ক্ষমতা আসতে পারে আমজনতার হাতে। শিল্প মহলের মতে, এই ক্ষমতায়নের জন্য চাই নয়া উদ্যোগপতি তৈরির প্রচেষ্টা। সমাজের সমস্ত স্তর থেকেই উঠে আসতে পারেন উদ্যোগপতি। আর তাঁদের হাত ধরেই তৈরি হবে আরও বহু মানুষের উন্নয়ন।
|
পুরনো খবর: ইনফোকম শুরু আজ, লক্ষ্য তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন |
|
|
|
|
|