জনা তিরিশ প্রাণের বিনিময়ে বিরোধী বিএনপি-জামাত জোটের এক দফা অবরোধ মিটেছে আজই। তার পরেই অজ্ঞাত জায়গা থেকে ভিডিও-বার্তায় শনিবার থেকে ফের ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিএনপি-র মুখপাত্র সালাউদ্দিন আহমেদ। নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী পক্ষকে সহমতে এনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে শুক্রবারই ঢাকা আসছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্ডেজ তারানকো। তার আগে বিরোধীরা ফের অবরোধ কর্মসূচি ডেকে দেশ অচল করার হুমকি দেওয়ায় তারানকোর সফরের আগেই তার সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল।
দু’দিনের সফর সেরে আজ দিল্লি ফিরে গিয়েছেন ভারতের বিদেশসচিব সুজাতা সিংহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া ও হুসেইন মহম্মদ এরশাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। কিন্তু সুজাতার বক্তব্য হিসেবে এরশাদ প্রকাশ্যে যা বলেছেন, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কাল বৈঠকের পরে এরশাদ দাবি করেন, সুজাতা সিংহ তাঁকে বলেছেন, আওয়ামি লিগ ছাড়া অন্য কেউ ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশে জামাত-শিবিরের বাড়বাড়ন্ত হবে, যা ভারতের কাম্য নয়। জামাতে ইসলামি আজই বিবৃতি দিয়ে সুজাতা সিংহের এই তথ্যকথিত বিবৃতির কড়া নিন্দা করে বলেছে, “এই অবাঞ্ছিত বক্তব্য বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ।” ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন এরশাদের আচরণে অসন্তুষ্ট। হাইকমিশনের এক কর্তার মতে, প্রাক্তন এই সেনাশাসক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই বিদেশসচিবের বক্তব্য বিকৃত করেছেন। ওই কর্তার দাবি সুজাতা সিংহ এরশাদকে এ কথাই বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না-হলে অগণতান্ত্রিক শক্তি বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করতে পারে, প্রতিবেশী হিসেবে যা ভারতের কাম্য নয়। নির্বাচনে কে ক্ষমতায় আসবে, তা বাংলাদেশের মানুষ ঠিক করবেন, নয়াদিল্লির এ বিষয়ে কিছুই বলার থাকতে পারে না। ভারতের এই অবস্থান সাংবাদিকদের কাছেও খোলসা করেছেন সুজাতা। নিরপেক্ষ অবস্থানের জন্যই ঢাকা এসে বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গেও বৈঠক বসেছেন সুজাতা। কিন্তু এরশাদের বক্তব্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে।
এ দিকে জাতীয় পার্টির নেতা এরশাদ অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভা থেকে তাঁর দলের ৭ মন্ত্রীকে ইস্তফা দিতে নির্দেশ দিলেও তাঁরা তা করেননি। জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরা আজ দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দফতরে গিয়ে আলোচনা করলেও পদত্যাগপত্র জমা দেননি। সেখান থেকে তাঁরা এরশাদের বাড়িতে যান। রাতে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার দাবি করেছেন, মন্ত্রীরা এরশাদের হাতেই তাঁদের পদত্যাগপত্র দিয়ে রেখেছেন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সিঙ্গাপুর থেকে শুক্রবার দেশে ফিরলে এরশাদ তাঁর হাতে এগুলি তুলে দেবেন। মহাসচিব এ কথা বললেও সূত্রের খবর, জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরা পদত্যাগে রাজি নন। এ জন্যই তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর হাতে পদত্যাগপত্র দেননি। হাসিনাকে তাঁরা জানিয়েছেন, এরশাদের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানতেন না। সরকারের এক মন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, বাড়তি আসন পেতেই এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেছেন। আসন সমঝোতা নিয়ে আওয়ামি লিগ ও এরশাদের দলের মধ্যে আলোচনা এখনও বন্ধ হয়নি।
|