সামনের বছরেই পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হবে সংস্থার। কিন্তু এখনও নিজস্ব কোনও মাঠ নেই দুর্গাপুর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার। অন্য নানা সংস্থা বা ক্লাবের মাঠেই চলে ক্রীড়া সংস্থার নানা প্রতিযোগিতা। পড়তে হয় নানা সমস্যার মধ্যেও।
দুর্গাপুর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা চালু হয় ১৯৬৪ সালে। তখন নাম ছিল দুর্গাপুর ব্লক ক্রীড়া সংস্থা। কয়েক মাস পরেই নাম বদলে হয় দুর্গাপুর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, নব্বইটিরও বেশি ক্লাব তাদের সঙ্গে যুক্ত। গত কয়েক দশকে এই সংস্থার অধীনে খেলে যাওয়া বহু খেলোয়াড় রাজ্য থেকে শুরু করে জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তাপস সরকার জানান, বর্তমানে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল মিলিয়ে প্রায় সাত রকমের খেলা সারা বছর ধরে। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ, “এত কিছুর পরেও সংস্থার নিজস্ব মাঠ নেই। বছর তিনেক আগে দুর্গাপুর পুরসভা থেকে এমএএমসি-র মাঠটি আমাদের ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। কিন্তু একটি মাত্র মাঠে সব প্রয়োজন মেটে না।” তাপসবাবু আরও দাবি করেছেন, রাজ্যের আর সব মহকুমা ক্রীড়া সংস্থারই নিজস্ব মাঠ আছে। ব্যতিক্রম দুর্গাপুর। অথচ, সারা বছর ধরে চলতে থাকা বিভিন্ন খেলা চালাতে তাঁদের নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। |
অন্য নানা সংস্থার মাঠেই আয়োজন করতে হয় খেলার। ছবি: বিশ্বনাথ মশান। |
ঠিক কী ধরনের সমস্যা হয়, তা জানতে চাওয়া হলে সাধারণ সম্পাদক তাপসবাবু জানান, তাঁরা বিভিন্ন সংস্থার মাঠগুলিতে খেলার আয়োজন করেন। কিন্তু যে সব সংস্থার মাঠে খেলা হয়, তাদের নিজস্ব কোনও অনুষ্ঠান থাকলে মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার খেলা বাতিলও করতে হয়। এ ছাড়া নিজেদের মতো করে মাঠ পরিচর্যা করা যায় না বলে জানান তাপসবাবু। তিনি আরও জানান, সামনেই ক্রিকেটের মরসুম। এখনও তাঁরা পিচের উপরে ‘ম্যাট’ পেতে খেলার আয়োজন করেন। দু’একটি সংস্থা ছাড়া আরও কোথাও ‘টার্ফ’ পিচ পাওয়া যায় না। পিচে ‘ম্যাট’ পেতে খেলার ফলে বলের বাউন্স যখন-তখন কম-বেশি হয়। ফলে, খেলোয়াড়দের খুবই অসুবিধা হয়।
মহকুমার এক ফুটবলার সুমন পতি বলেন, “যে সংস্থার মাঠ, তাদের কোনও অনুষ্ঠান থাকলে আমাদের খেলা বাতিল হয়। ফলে, মাঠে গিয়েও আমাদের ফিরে আসতে হয়।” ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সভাপতি তথা দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র পারিষদ প্রভাত চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রায় ৫০ বছরের পুরনো একটি ক্রীড়া সংস্থার খেলার মাঠ না থাকা দুঃখজনক। তিনি বলেন, “আমরা পুরসভার তরফে এডিডিএ-র কাছে সংস্থার নিজস্ব মাঠের জমির জন্য আবেদন করব।”
ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮৬ সালে তৎকালীন ডিডিএ মারফত তারা রাজ্য সরকারের কাছে নিজস্ব মাঠের জন্য আবেদন করেছিলেন। তখনও দুর্গাপুর পুরসভা এলাকা হয়নি। ‘দুর্গাপুর নোটিফায়েড এরিয়া’র তরফে তারা একটি মাঠও পেয়েছিলেন। পরবর্তী কালে সেখানেই ভগৎ সিংহ স্টেডিয়ামটি গড়ে দুর্গাপুর পুরসভা। তাপসবাবু জানান, তাঁদের অর্থ না থাকার জন্য তাঁরা এই স্টেডিয়াম তৈরি করতে পারেননি। তবে তিনি বলেন, “পুরসভার কাছে আবেদন করেই আমরা এখানে বিভিন্ন খেলার আয়োজন করতে পারি।” তাপসবাবু আরও জানান, সরকারের তরফে তাঁদের সংস্থাকে নিজস্ব মাঠের ব্যবস্থা করে দেওয়া হলে আরও ভাল ভাবে খেলাধুলোর আয়োজন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আর কয়েক মাস পরেই তাদের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ পালন করতে চলেছে সংস্থা। বিভিন্ন কর্মসূচিও গ্রহণের ইচ্ছা রয়েছে তাদের। কিন্তু নিজস্ব মাঠ না থাকায় তা কতটা বাস্তবায়িত হবে, সংশয়ে সংস্থার কর্তারাই। |