দোষীদের ধরার দাবিতে সরব বন্ধুই গ্রেফতার ব্যবসায়ী খুনে
রাতে মোটরবাইক চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে ছিন্নমস্তা পুকুরের কাছে রাজেশ জায়সবালের রাস্তা আটকায় তাঁরই ব্যবসার অংশীদার, আট বছরের বন্ধু উত্তম যাদব। সে পাওনা টাকা চাইলে রাজেশ সাফ জানিয়ে দেন, এখন তা দিতে পারবেন না। এ নিয়ে শুরু কথা কাটাকাটি। আর তার পরেই কোমর থেকে পাইপগান বের করে সটান গুলি চালিয়ে দেয় উত্তম।
হিরাপুরের রাধানগর নিচুপাড়ার বছর পঁয়ত্রিশের ব্যবসায়ী রাজেশকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত উত্তম যাদব জেরায় ঘটনার এমনই বিবরণ দিয়েছে বলে দাবি করল পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে উত্তমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করে পুলিশ। খুনে যে পাইপগানটি ব্যবহার করা হয়েছিল, এ দিন সকালে সেটিও তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ধৃত উত্তম যাদব।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (পশ্চিম) গৌরব লালের দাবি, জেরার মুখে ওই অভিযুক্ত জানিয়েছে, রবিবার রাত সওয়া ৯টা নাগাদ সে প্রথমে রাজেশের বাড়ি যায়। সঙ্গে ছিল তার বন্ধু রাকেশ। রাজেশের সঙ্গে তাঁর বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়েই একপ্রস্ত তর্কাতর্কি হয় উত্তমের। সেখান থেকে বার্নপুর রোডে আসানসোল স্টেডিয়ামের কাছে চলে যায় তারা। সেখানেই আবার উত্তম হঠাৎ রাজেশকে দেখতে পায়। এর পরেই সে রাকেশকে নিয়ে মোটরবাইকে চড়ে সোজা ছিন্নমস্তা পুকুরের পাশের রাস্তায় পৌঁছে যায়। কারণ, উত্তম জানত, এই রাস্তা দিয়েই রাজেশ বাড়ি ফিরবেন। পৌনে ১০টা নাগাদ রাজেশ বাড়ি ফেরার সময়েই তাঁকে আটকায় উত্তমেরা, দাবি পুলিশের।
একটি মুদিখানার দোকান ছাড়াও পরিবহণ ব্যবসা ছিল রাজেশের।
খুনের ঘটনার রাতে তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ টেরই পায়নি, খুনটা আসলে উত্তম করেছে। কারণ, ওই রাতেই দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে থানায় সবচেয়ে বেশি সরব ছিল উত্তম। বাড়ির কাছে জনবহুল এলাকায় এই খুনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা যে বিক্ষোভ দেখান, তার নেতৃত্বেও ছিল সে। এমনকী, ওই রাতে যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়, তাদের হদিস উত্তমই দিয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পুলিশ জানায়, উত্তমের নামে আগে কোনও দুষ্কর্মের অভিযোগ নেই। জেরায় সে জানিয়েছে, বিহারের মুঙ্গেরের বাসিন্দা এক আত্মীয় সুধীর যাদবের কাছ থেকে পাইপগানটি নিয়েছিল সে। নানা দুষ্কর্মে অভিযুক্ত সুধীরকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ঘটনার পুনর্নির্মাণে ধৃতকে নিয়ে যেতেই তার দিকে তেড়ে গেলেন নিহতের পরিজনেরা।
রাজেশের ভাই রমেশ জায়সবাল বলেন, “আমাদের সঙ্গে উত্তমদের পুরনো পারিবারিক সম্পর্ক। আপদে-বিপদে কত বার পরস্পরের পাশে দাঁড়িয়েছি। সে এমন কাণ্ড ঘটাবে, ভাবিনি।”
রমেশের আবার দাবি, রাজেশের কাছে পাওনা চেয়ে কেউ পাননি, এমন হয়নি। তাই টাকার জন্য এই খুন, তা তিনি মনে করেন না। তবে অন্য কী কারণ থাকতে পারে, তা রমেশ জানাতে পারেননি। যদিও পুলিশের অনুমান, টাকা লেনদেন নিয়েই এই খুন। এসিপি (পশ্চিম) গৌরব লাল বলেন, “আমরা জেনেছি, উত্তমের আর্থিক অবস্থা ইদানীং ভাল ছিল না। সে রাজেশকে খুন করে লরির পুরো মালিকানা হাতাতে চেয়েছিল। সে হয়তো রাজেশের কাছে টাকাও পেত।”
বৃহস্পতিবার সকালে মূল অভিযুক্ত উত্তমকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যেতেই বিক্ষোভ শুরু হয়। উত্তম খুনের ঘটনার বিবরণ দেওয়ার সময়ে উপস্থিত ছিলেন নিহতের ভাই রমেশ। বিবরণ শেষ হতেই তিনি অভিযুক্তের দিকে তেড়ে যান। পুলিশকর্মীরা তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যান। খুনের দিন উত্তম যে সঙ্গীর মোটরবাইকে চেপে গিয়েছিলেন, সেই রাকেশকে পুলিশ গ্রেফতার করেনি। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তাকে রাজসাক্ষী করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবারের নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.