রায়গঞ্জে এইমস হবে না কল্যাণীতে, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাপান-উতোর চলছে। বুধবার কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদের আলোচনার পরে বিষয়টির সমাধান হতে চলেছে বলে মনে করছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ।
বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, কেউই অবশ্য রাজ্যে প্রস্তাবিত এইমস বা অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস গড়ার ব্যাপারে মুখ খোলেননি। তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বৈঠকের পরে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় আমি খুশি।” গুলাম নবির এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ মনে করছেন, রায়গঞ্জের বদলে কল্যাণীতেই এইমস গড়ার ব্যাপারে রাজ্য তার স্পষ্ট সিদ্ধান্ত কেন্দ্রকে জানিয়ে বিষয়টিতে কার্যত ইতি টেনে দিল। তবে স্বাস্থ্য দফতরের একটি অংশের ধারণা, সৌজন্যের খাতিরেই গুলাম নবি এ ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি।
বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টা থেকে প্রায় ৭টা পর্যন্ত নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বৈঠক হয়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই আলোচনায় এইমস প্রসঙ্গ ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী সেখানে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকার রায়গঞ্জের বদলে কল্যাণীতে এইমস গড়ার সিদ্ধান্তেই অনড় রয়েছে। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে এসেছেন, রায়গঞ্জ এবং ইসলামপুরে মাল্টিসুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে। কিন্তু রায়গঞ্জে এইমস গড়া নিয়ে তিনি উচ্চবাচ্য করেননি।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরে এইমস নিয়ে মুখ না-খুললেও গুলাম নবি বলেন, “ক্যানসার হাসপাতাল, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এবং আরও কিছু নতুন হাসপাতাল তৈরির ব্যাপারে আমাদের কথা হয়েছে। এতে পশ্চিমবঙ্গের লাভ হবে।”
অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ‘প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনা’য় দেশের ১৬টি জায়গায় এইমসের ধাঁচে পরিকাঠামো গড়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে ছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজও। ইতিমধ্যে মেডিক্যালের জন্য ১৬০ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। তাদের বাছাই করা সংস্থাই সেখানে নির্মাণকাজ করছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, মেডিক্যাল-কর্তৃপক্ষ ওই সংস্থাকে সময়মতো জায়গা ও অন্য পরিকাঠামো দিতে পারেননি বলেই এই কাজে দেরি হয়েছে। যে-কাজ ২০০৯ সালে হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, ২০১৩-তেও তা শেষ হয়নি। এ দিন ওই কাজের অগ্রগতিও দেখে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
কাজে এত দেরি হচ্ছে কেন?
গুলাম নবি বলেন, “ওখানে একটি ওপিডি (আউটডোর বা বহির্বিভাগ), একটি অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং (পঠনপাঠন ভবন) এবং একটি সুপার স্পেশ্যালিটি উইং তৈরি করার কথা। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, পুরনো ভবনগুলি ভেঙে কাজ করতে হচ্ছে। তাই সময় লাগছে।” কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, মাস দুয়েকের মধ্যে ওখানে ২০০ শয্যার সুপার স্পেশ্যালিটি উইং বানানোর কাজ শুরু হয়ে যাবে। তাতে কার্ডিওলজি-সহ সব গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাই পাওয়া যাবে।
মেডিক্যালে যাওয়ার আগে বিমানবন্দর থেকেই গুলাম নবি যান রাজারহাটের কোচপুকুরে চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ দেখতে। সেখানে তিনি বৃক্ষরোপণ করেন। জানান, ৩০ মাসের মধ্যে ১০ একর জমিতে ওই হাসপাতাল তৈরি হয়ে যাবে। বিপিএল কার্ডধারীদের জন্য চিকিৎসার বিশেষ সুবিধা থাকবে সেখানে।” |