রাজ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বড্ড অভাব। পরিসংখ্যান বলছে, যা প্রয়োজন, তার তুলনায় রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা হাজার দেড়েক কম। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদের দাওয়াই, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অবসরের বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বা ৭০ বছর করলেই সমস্যা অনেকটা মিটে যাবে।
পশ্চিমবঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের আকাল নিয়ে আদালতও বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কারণ, যথেষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না-থাকায় মূলত দু’টি গভীর সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমত, জেলার বহু হাসপাতালে একাধিক বিশেষজ্ঞ বিভাগ পঙ্গু হয়ে রয়েছে। দ্বিতীয়ত, মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ধাক্কা খাচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্য, অবসরের বয়ঃসীমা বাড়িয়ে দিলে শিক্ষক-চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের আকাল অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে। |
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস বা এইমস-এর ধাঁচে পরিকাঠামো তৈরির কাজ কতটা এগোল, বুধবার তা পরিদর্শনে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। মেডিক্যালের অধ্যক্ষের ঘরে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি জানান, কেন্দ্র পরিচালিত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে এবং তা নিয়ে চিকিৎসকদের কোনও সংগঠনই ক্ষোভ প্রকাশ করেনি।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গ এ ক্ষেত্রে কেন কেন্দ্রের পথে হাঁটছে না, তা জানতে চান গুলাম নবি। জবাবে স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে জানান, এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে এখনও সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। শুনেই গুলাম নবি জানান, বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে তিনি বিষয়টি তুলবেন।
বাংলায় ক’জন শিক্ষক-চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দরকার?
স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব, রাজ্যে ২৭০০ থেকে ৩০০০ জন শিক্ষক-চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না-হলেই নয়। কিন্তু এই মুহূর্তে আছেন তার অর্ধেক, মাত্র দেড় হাজার। বস্তুত, অ্যানেসথেশিয়া, অর্থোপেডিক্স, পেডিয়াট্রিক্সের মতো বেশ কিছু বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পেতে হিমশিম খাচ্ছে রাজ্য সরকার।
এই অভাব মেটাতে রাজ্যের তরফে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
সরকারি সূত্রের খবর, যে-সব বিশেষজ্ঞ গত তিন বছরে স্বেচ্ছাবসরের দরখাস্ত করেছিলেন তাঁদের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। তা নিয়ে কোর্টকাছারিও হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অবসরের বয়স ৬২ থেকে ৬৫ করার চেষ্টা শুরু হয়েছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে সেই ফাইল ফেরত আসায় আপাতত বিষয়টি থমকে রয়েছে।
এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ দিন অবসরের বয়ঃসীমা বাড়ানোর কথা তোলেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, গুলাম নবি বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে পড়ুয়ার সংখ্যা এবং শিক্ষক-চিকিৎসকের সংখ্যা জানতে চান। একটি উদাহরণ দিয়ে তাঁকে জানানো হয়, আর জি করে এমবিবিএসে ২০০ জন ভর্তি হয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, সংখ্যাটা ২৫০ হচ্ছে না কেন? তাঁকে পরিকাঠামোর অভাবের কথা জানানো হয়। উল্লেখ করা হয় শিক্ষক-চিকিৎসকদের আবাসনের অভাবের কথাও। গুলাম নবি আশ্বাস দেন, কেন্দ্র আবাসন তৈরির টাকা দিতে পারে। কোন মেডিক্যাল কলেজে নতুন ভবন তৈরির কতটা জায়গা আছে, তা-ও জেনে নেন তিনি। |