সরকারি সাহায্যে টানা তিন মাস চিকিৎসার পর বাড়ি ফিরলেন চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের ধর্ষিতা যুবতী। তিন মাস ধরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। বুধবার দুপুরে ডুয়ার্সের বানারহাট থানা এলাকার মরাঘাট চা বাগানে ওই যুবতীকে শিলিগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ থেকে নিজের গাড়িতে করে বাড়িতে পৌঁছে দেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। ওই যুবতী পুরোপুরি সুস্থ হলে তাঁর কর্মসংস্থানের বিষয়টিও দেখা হবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। আপাতত এ দিনই পরিবারটির হাতে ব্যক্তিগত ভাবে পাঁচ হাজার সাহায্য তুলে দেন মন্ত্রী। গোটা ঘটনায় খুশি যুবতীর পরিবার সহ বাগানের শ্রমিক মহল। গৌতমবাবু বলেন, “এটা আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। উনিঅনেকটাই সুস্থ হয়েছেন। পুরোপুরি সুস্থ হলে ওঁর কর্ম সংস্থানের বিষয়টিও দেখব।”
পুলিশ-প্রশাসন সূত্রের খবর, গত কয়েক বছর আগে বছর পঁচিশের ওই যুবতী দিল্লির এক নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করতেন। ১৪ অগস্ট তিনি হবু স্বামীকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন। ক’দিন পরেই তাদের বিয়ের হওয়ার কথাবার্তা চলছিল। গত ২৭ অগস্ট বাগান থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বিন্নাগুড়িতে ওই যুবতী একাই বাজার করতে যান। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় বাড়ি ফেরার জন্য তিনি গাড়ি পাচ্ছিলেন না। সেই সময় বিন্নাগুড়ি চা বাগানের মোড়ে মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে তাঁকে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করে দেন। ওই অপরিচিত যুবক তাঁকে সাইকেলে করে মরাঘাট চা বাগানে নিয়ে যাওয়ার নাম করে রাস্তায় জাতীয় সড়কের ধারে প্রস্তাবিত হিন্দি কলেজের ঝোপে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধ করে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। ওই রাতেই স্থানীয় কয়েকজন যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় যুবতীকে উদ্ধার করে। পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে সিরাজ আনসারি নামে যুবককে গ্রেফতার করে।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, গুরুতর অসুস্থ যুবতীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। দশদিন বাদে জ্ঞান ফিরলেও তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। ঘাড়েও আঘাত ছিল। এখনও তাঁকে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হচ্ছে। গোটা ডুয়ার্স জুড়ে ঘটনাটি নিয়ে আলোড়ন পড়ে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন সরব হয়। সেই সময় আসরে নামের মন্ত্রী গৌতমবাবু। তিনি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের মেয়েটিকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসার নির্দেশ দেন। পরিবারটির পাশেও দাঁড়ান। যুবতীর বাবা বলেন, “মন্ত্রী গৌতমবাবু আমাদের পাশে না থাকলে আমার মেয়ে হয়তো বাঁচতো না। টানা তিন মাস ধরে মেয়ের সঙ্গে ছিলাম। মন্ত্রী সংসারের জন্য সাহায্য করেছেন। আমরা কৃতজ্ঞ।” ওই যুবতী বাগানে ফেরার পর এলাকার তাঁর বাড়িতে ভিড় করতে শুরু করেন। বিছানায় শুয়েই এ দিন ওই যুবতী বলেন, “ওইদিন যে আমার এতবড় সর্বনাশ করেছে তার কড়া শাস্তি চাই। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। উনি যা করেছেন তা ভাবাই যায় না।” যুবতীর সঙ্গে যাঁর বিয়ে হওয়ার কথা তিনিও দিল্লি’র পাচকের চাকরি ছেড়ে তিন মাস মেডিক্যাল কলেজেই কাটিয়েছেন। এ দিন ওই যুবক বলেন, “ও পুরোপুরি সুস্থ হলে আমরা বিয়ে করব। ওই ঘটনা দুর্ঘটনা বলে ভুলে যেতে চাই।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন বাগানের বাসিন্দা তথা আরএসপি’র বানারহাট লোকাল সম্পাদক শম্ভু ছেত্রী। |