বিরোধীদের ছেড়ে-যাওয়া আসনে বসে পড়ল শাসক দল! বিতর্ক বাধল বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে!
বিরোধী কংগ্রেসের আক্রমণের অস্ত্র, নৈতিকতা। আর সরকার পক্ষের ঢাল, আইন।
মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় দাঁড়িয়ে একতরফা ভাবে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছেন। অথচ তা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনার দাবি মানা হয়নি। এই কারণ সামনে রেখেই বিধানসভার চলতি শীতকালীন অধিবেশন বয়কট করছে কংগ্রেস। বিধানসভার ৭৫ বর্ষ উদযাপন সমাপ্তি উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনেও তারা অংশ নিচ্ছে না। সরকারের ‘স্বৈরতন্ত্রে’র অভিযোগ এনে বিশেষ অধিবেশন বয়কট করেছেন বাম বিধায়কেরাও। বামফ্রন্টের ৬১ এবং কংগ্রেসের ৩৯ দু’পক্ষ মিলে ১০০ জন বিধায়ক তাই অনুপস্থিত। স্পিকারের বাঁ দিকের তিনটি ব্লক তাই ফাঁকা থাকার কথা। কিন্তু বুধবার অধিবেশন শুরু হওয়ার পরে দেখা যায়, ওই আসনগুলিতেও বসে আছেন তৃণমূল বিধায়কেরা। তাতে আপাতদৃষ্টিতে বিধানসভার ফাঁকা ফাঁকা চেহারা ধরা পড়ছে না! |
বিধানসভার প্ল্যাটিনাম জুবিলির সমাপ্তি অনুষ্ঠানে
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: সুমন বল্লভ। |
এমন ঘটনাতেই ক্ষুব্ধ কংগ্রেস। পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবের বক্তব্য, “বিধানসভায় প্রত্যেকটি আসন বিধায়কের জন্য নির্দিষ্ট। আমরা যখন বয়কট করে এসেছি, সেই আসনে অন্য কারও বসা অত্যন্ত গর্হিত, অসৌজন্যমূলক কাজ!” সোহরাবের অভিযোগ, কেউ প্রতিবাদ জানিয়ে বয়কট করলে তার জায়গা অন্যের নেওয়া নৈতিক ভাবে ঠিক নয়। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ও সরকারি মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা যুক্তি, বিধানসভার সাধারণ কার্যপ্রণালী বিশেষ অধিবেশনের জন্য প্রয়োজ্য নয়। তাই এখানে আসন বদল নিয়ে প্রশ্ন তোলা অযৌক্তিক। শোভনদেবের কথায়, “সাধারণ অধিবেশন হলে বিধানসভার সদস্য নন, এমন কেউ সভাকক্ষে বসতেই পারেন না। এখানে বর্তমান ও প্রাক্তন সাংসদেরা ছিলেন। কেউ কেউ ছবিও তুলছিলেন।”
এই আইনি ব্যাখ্যার সঙ্গে সহমত বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম। তাঁরও যুক্তি, বিশেষ অধিবেশনে কোনও জায়গায় কাউকে বসতে দেওয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে তাঁর মত, “কাজটা বেআইনি নয়। কিন্তু অনৈতিক!” হালিমের ব্যাখ্যা, “কেউ সভা বয়কট করলে, তার আসন ছেড়ে রাখাই উচিত।” কংগ্রেসও বলতে চেয়েছে, তাদের প্রতিবাদ চোখে পড়ানোর জন্যই আসন ফাঁকা রাখা উচিত ছিল। তার বদলে বিশেষ অধিবেশনে সোহরাব, মানস ভুঁইয়াদের আসনে দেখা গিয়েছে তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল, গোবিন্দ নস্করদের। মনোজ চক্রবর্তীদের আসনে তৃণমূলের অন্য বিধায়কেরা। বামেরা অবশ্য এ দিন এই নিয়ে মুখ খোলেনি। তবে ক্ষুব্ধ কংগ্রেস আপাতত ঠিক করেছে, সরকারের তরফে ইতিবাচক সাড়া না এলে চলতি শীতকালীন অধিবেশনের শেষ কয়েক দিনের জন্য ডাকা আগামী সোমবারের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকেও তারা যাবে না।
|