ভিন রাজ্যের খনিতে শ্রমিক অশান্তি। তার জেরে বিদ্যুৎ-সমস্যার আশঙ্কা ছায়া ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের বিভিন্ন তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার অন্যতম জোগানদার যারা, ওড়িশার সেই মহানদী কোলফিল্ডসে শ্রমিক বিক্ষোভ চলছে। কয়লা উত্তোলন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে এ রাজ্যের তাপ-বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় মহানদীর কয়লা আসা প্রায় বন্ধের জোগাড় বলে খবর। নিগম-কর্তাদের আশঙ্কা, কাল শুক্রবারের মধ্যে কয়লা না-এলে পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ উৎপাদন সঙ্কটে পড়তে পারে।
নিগমের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় যদিও দেড় লক্ষ টন কয়লা রয়েছে। সিইএসসি যে হেতু মহানদী কোলফিল্ডসের কয়লা খুব কম কেনে, তাই তাদের তেমন সমস্যা নেই বলে সংস্থার দাবি। অর্থাৎ, মহানদী-সঙ্কটের জেরে কলকাতা মহানগর ও লাগোয়া এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে বিশেষ সমস্যার আশঙ্কা না-থাকলেও ওখানে শ্রমিক অশান্তি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে রাজ্যের অন্যত্র যে অসুবিধে হতে পারে, নিগম-কর্তাদের কথায় তার ইঙ্গিত মিলেছে। কী রকম?
কর্তারা জানাচ্ছেন, নিগমের তাপ-বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু রাখতে রোজ ১২-১৩ রেক কয়লা লাগে, যার অর্ধেকই জোগায় মহানদী কোলফিল্ডসের তালচের ও আইবি-ভ্যালি খনি। রেলের একটা রেকে সাধারণত সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা ধরে। মহানদী থেকে দৈনিক আসে গড়ে ৭ রেক, মানে মোটামুটি সাড়ে ২৪ হাজার মেট্রিক টন। তালচেরের কয়লা বেশি নেওয়া হয়, কেননা তার মান ভাল। কিন্তু গত ক’দিনে আইবি ভ্যালির কয়লা সামান্য কিছু এলেও তালচের থেকে এক রেকও আসেনি। সে ঘাটতি মেটাতে আপাতত কোল ইন্ডিয়ার অন্যান্য খনির ভরসায় বসে নিগম ।
কোল ইন্ডিয়া সূত্রের খবর: স্থানীয়রা ও ঠিকা শ্রমিকদের বিক্ষোভে ২৯ নভেম্বর থেকে মহানদী কোলফিল্ডসের প্রায় প্রতিটি খনিতে উৎপাদন কার্যত স্তব্ধ। বিক্ষিপ্ত হিংসা চলছে। কিছু খনি-এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। এই ক’দিনে মহানদী কোলফিল্ডসে কম-বেশি ১০ লক্ষ টন উৎপাদন মার খেয়েছে, কোল ইন্ডিয়ার হিসেবে যার মূল্য প্রায় ২৬১ কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু-সহ বিভিন্ন রাজ্যে কয়লা পাঠানো যায়নি।
উৎপাদন স্বাভাবিক হবে কবে? কলকাতায় কোল ইন্ডিয়ার এক কর্তার দাবি, সেখানকার পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। দু’-তিন দিনের মধ্যে প্রতিটি তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা ঢুকতে শুরু করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
শুনে আশ্বস্ত রাজ্যের বিদ্যুৎ-কর্তারাও। “শীতকাল হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা এখন কম। কয়লা কম লাগছে। গ্রীষ্ম হলে বিপদ হতো।” মন্তব্য এক কর্তার। নিগম-সূত্রের বক্তব্য: এখনও বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক। বুধবার কলকাতা-সহ রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪,৬৫০ মেগাওয়াটের মতো। নিজস্ব উৎপাদন ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় উৎপাদক সংস্থার থেকে বিদ্যুৎ কিনে তা মেটানো গিয়েছে।
|