মা শক্তি দুর্বল, নতুন শক্তি চায় মাদার ডেয়ারি
সে বার বাঁচিয়েছিল মা শক্তি। এখন সে নিজেই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। একার জোরে সংস্থাকে ঠেলে নিয়ে যাওয়ার সামর্থ আর নেই। পরিত্রাণ পেতে এ বার তাই নতুন কোনও শক্তিই ভরসা। মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলা করে যাতে টিকে থাকা যায়, সে জন্য আপাতত তারই খোঁজ চালাচ্ছে মাদার ডেয়ারি।
কাঁচামাল মহার্ঘ হলেও সরকার উৎপাদনের দাম বাড়াতে নারাজ। দেড় বছর আগে এমন একটা অবস্থায় পড়ে ব্যবসা যখন প্রায় ডুবতে বসেছে, তখন ‘মা শক্তি’ নামে নতুন দামি ব্র্যান্ডের দুধ বাজারে এনে মাদার ডেয়ারি আত্মরক্ষা করেছিল। কম দামি দুধের উৎপাদনও কমিয়ে দেওয়া হয়। দুইয়ে মিলে বাড়তি আয়ের রাস্তা খুলে দিয়েছিল। বলতে গেলে মা শক্তির হাত ধরেই লোকসানে চলা রাজ্য সরকারি দুগ্ধ সংস্থাটি গত দেড় বছরে প্রায় ১৯ কোটি টাকা লাভ করেছে। এখন ক্রেতারা মাদার ডেয়ারির দুধ বলতে মূলত ‘মা শক্তি’কেই বোঝেন।
দেড় বছর বাদে ফের ঘনীভূত হয়েছে একই সঙ্কট। দেখা যাচ্ছে, উৎপাদন ব্যয় ইদানীং যে হারে চড়ে গিয়েছে, তাতে নিছক মা শক্তির জোরে আর কারবার সামলানো যাচ্ছে না। অবিলম্বে দুধের দাম না-বাড়ালে আবার লোকসানের আবর্তে গিয়ে পড়তে হবে। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে এখনও সরকারের সায় মেলেনি। এ দিকে বেসরকারি দুধের দাম গত এক মাসে হু হু করে বেড়ে গিয়েছে। বেসরকারি সংস্থার দুধ এখন যেখানে লিটারপিছু ৩৪ টাকা, সেখানে মাদার ডেয়ারি পড়ে রয়েছে সেই তিরিশেই! সংস্থার চিফ জেনারেল ম্যানেজার উদয় গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “বিভিন্ন সময়ে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মাস দেড় আগেও বলা হয়েছে, লিটারে দু’টাকা দাম বাড়ানো জরুরি। উপরমহলের সবুজ সঙ্কেত আসেনি।”
আয়বৃদ্ধির পথ না-পেয়ে আপাতত খরচ ছাঁটতে বাধ্য হয়েছেন ডেয়ারি কর্তৃপক্ষ। প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার কোপ পড়েছে উৎপাদনে। সংস্থা-সূত্রের তথ্য, গত এক বছরে শুধু ‘মা শক্তি’ ব্র্যান্ডের দৈনিক উৎপাদনই প্রায় ৮০ হাজার লিটার কমেছে। এই মুহূর্তে দামের নিরিখে ‘শক্তিশালী’ কোনও ব্র্যান্ডই একমাত্র সংস্থার পরিত্রাতা হতে পারে বলে কর্তারা মনে করছেন। এ ব্যাপারে সরকারি অনুমোদন আদায়ের চেষ্টাও তাঁরা শুরু করেছেন।
প্রসঙ্গত, দেড় বছর আগে ‘মা শক্তি’ বাজারে নামানোর সময়ে প্রথমে রাজ্য সরকার তাতে রাজি হয়নি। পরে অনুমতি মেলে। ফলাফল দেখে প্রশাসনের কর্তারা স্বীকারও করেন, দাম না-বাড়ানোর সরকারি নীতির প্রেক্ষাপটে ‘ঘুরপথে’ মূল্যবৃদ্ধির এ হেন কৌশল নেওয়া ছাড়া প্রতিষ্ঠানের উপায় ছিল না। বস্তুত, বর্তমান পরিস্থিতি বহাল থাকলে মাদার ডেয়ারি ফের ভর্তুকি-নির্ভর হয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন তাঁদের অনেকে। সংস্থা-কর্তাদের একাংশেরও আশঙ্কা, বাসভাড়া না-বাড়ানোর জেরে সরকারি পরিবহণের যে দুর্দশা, দুধের দাম না-বাড়ালে মাদার ডেয়ারিরও একই হাল হবে। “এক দিকে সরকার চাইছে ভর্তুকি বন্ধ হোক। অন্য দিকে দাম বাড়াতে না-দিয়ে তারাই লাভজনক সংস্থাকে লোকসান ও ভর্তুকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে! এই পরস্পর-বিরোধিতার অর্থ কী?” প্রশ্ন তুলছেন ওঁরা।
সরকার কী বলছে?
রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের সচিব রাজীব কুমার বলেন, “প্রক্রিয়াজাত দুধের কাঁচামালের দর শীতের এই সময়টায় এমনিতেই একটু চড়ে থাকে। এ বার অত্যধিক চড়েছে। তাতেই সমস্যা। সুরাহার আপ্রাণ চেষ্টা হচ্ছে।” দাম বাড়িয়ে সঙ্কট মোকাবিলা করা হচ্ছে না কেন? সচিবের জবাব, “তার এক্তিয়ার আমাদের নেই।” তা হলে কি মা শক্তির কাহিনিরই পুনরাবৃত্তি হবে? চলতি ব্র্যান্ডের দাম না-বাড়িয়ে বেশি দামের নতুন কোনও ব্র্যান্ড বাজারে ছাড়বে মাদার ডেয়ারি?
সরকারি তরফে স্পষ্ট কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। তবে সংস্থার বিপণন ম্যানেজার সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় বলেন, “কর্তৃপক্ষ সব রকম সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন।”
কাঁচামালের এমন লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির কারণ কী?
সংস্থা-সূত্রের ব্যাখ্যা: দুধের মান বজায় রাখতে ডেয়ারিতে কাঁচা দুধের সঙ্গে মেশানো হয় স্কিমড মিল্ক পাউডার (এসএমপি) ও মাখন। দু’টোই আনতে হয় উত্তরপ্রদেশ-পঞ্জাব-হরিয়ানা-গুজরাত থেকে। উদয়বাবু জানাচ্ছেন, এক বছর আগে এসএমপি-র দর ছিল কেজিপিছু ১৬০ টাকা। এখন ২৫৫ টাকা। কেন্দ্রীয় সরকার রফতানির বাজার খুলে দেওয়ায় এসএমপি ও মাখন প্রস্তুতকারীরা উৎপাদনের সিংহভাগ বিদেশে পাঠাচ্ছেন। আর মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কাটা ‘মা শক্তি’র গায়েই লেগেছে বেশি। “কারণ, এতে ফ্যাট থাকে ৪%। অন্য দুধের তুলনায় এসএমপি ও মাখন লাগে বেশি ।” বলেন উদয়বাবু।
অতএব, মা শক্তির দৈনিক উৎপাদন তিন লক্ষ লিটার থেকে ২ লক্ষ ২০ হাজারে নামিয়ে আনতে হয়েছে। অথচ রাজ্য সরকারেরই যৌথ উদ্যোগের সংস্থা মেট্রো ডেয়ারি উৎপাদন স্বাভাবিক রাখার তাগিদে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গত পাঁচ মাসে দুধের দাম বাড়িয়েছে তিন-তিন বার। জুলাই, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে। যদিও মেট্রো ডেয়ারির এমডি সুমিতকুমার দেবের দাবি, “জুলাইয়ের আগে প্রায় ১৬ মাস আমরা দাম বাড়াইনি। সেই হিসেবে গত একুশ মাসে তিন বার দাম বেড়েছে।”
পাঁচ মাস হোক বা একুশ, মাদার ডেয়ারি যখন সরকারি অনুমোদনের অভাবে দাম বাড়াতে পারছে না, তখন মেট্রো ডেয়ারি পারছে কী ভাবে? তারা তো সরকারি যৌথ উদ্যোগেরই সংস্থা!
সুমিতবাবুর যুক্তি, “মেট্রো ডেয়ারির মালিকানার ৫৩% বেসরকারি হাতে। তাই দামের ব্যাপারে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.