স্পিকারের কাছে বয়কটের চিঠি জমা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন বাম বিধায়কেরা। কংগ্রেস পূর্বঘোষণা মতোই সভায় নেই। একমাত্র বিরোধী বিধায়ক হিসাবে থাকার কথা এসইউসি-র তরুণ নস্করের। পুলিশ ব্যান্ডের আবহ সঙ্গীতে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনকে স্বাগত জানানোর সময় হঠাৎই দেখা গেল, বিরোধী আসনে পরিপাটি হয়ে বসে বাম বিধায়ক চাঁদ মহম্মদ! ঘটনাচক্রে, চাঁদকে দেখা যাচ্ছে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের জন্য নির্দিষ্ট আসনেই!
বাম বয়কট ভেঙে কিরমণয় নন্দের সমাজবাদী পার্টির একমাত্র বিধায়ক চাঁদের আচরণ বুধবার চাঞ্চল্য ছড়াল বিধানসভায়। বয়কটের চিঠিতে সই করেও ভগবানগোলার বিধায়ক চাঁদ বিশেষ অনুষ্ঠানের আসরে ঢুকে পড়ায় স্তম্ভিত বিরোধী দলনেতা-সহ গোটা বাম শিবির! আর সুযোগ বুঝে মুখ্যমন্ত্রী মমতাও বিরোধী বিধায়ক হিসাবে তরুণবাবুর পাশে চাঁদকে বসে থাকতে দেখে দু’জনকেই অভিনন্দন জানিয়ে দিলেন! বিতর্ক হয়েছে বুঝেই সম্ভবত পরের অর্ধে লোকসভার স্পিকার মীরা কুমারের ভাষণের সময় চাঁদকে আর অধিবেশন কক্ষে দেখা যায়নি।
রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে যেন তেন প্রকারেণ আসন চান কিরণময়েরা। তাই বাম এবং তৃণমূল, দুই দরজা খুলে রেখেই ধোঁয়াশাপূর্ণ অবস্থান নিয়ে চলছেন! আর তৃণমূল সূত্রে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে, শীঘ্রই চাঁদ শাসক দলে যোগ দেবেন।
বিশেষ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে এ দিন সকালে বাম পরিষদীয় দলের বৈঠকে হাজির ছিলেন চাঁদ। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অধিবেশনে না থাকার ব্যাখ্যা-সংবলিত চিঠিতে অন্যান্য বাম দলের পরিষদীয় নেতাদের সঙ্গেই সই করেছেন। তার পরে সূর্যবাবুর সঙ্গে স্পিকারের কাছে সেই চিঠি জমা দিতেও গিয়েছেন। আবার তার অব্যবহিত পরেই তাঁকে দেখা গিয়েছে পরিষদীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘরে। তার পরেই সটান অধিবেশন কক্ষে!
কেন করলেন এমন? প্রথমার্ধের অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে চাঁদের ব্যাখ্যা, “বামফ্রন্টের সিদ্ধান্ত ছিল অনুষ্ঠানে না যাওয়ার। কিন্তু আমি কিরণদার সঙ্গে কথা বলে জেনেছিলাম, আমাদের দলের সিদ্ধান্ত অনুষ্ঠানে থাকা উচিত। এই বিশেষ অনুষ্ঠানের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। তাই ভিতরে গিয়েছিলাম।” তা হলে বয়কটের চিঠিতে সই করলেন কেন? দৃশ্যতই অপ্রস্তুত চাঁদের জবাব, “কেন যে সই করলাম, সেটাই তো বুঝতে পারছি না!” তৃণমূলে যাচ্ছেন কবে? চাঁদ বলে ফেলেন, “এখনও তো যাইনি!” একই সঙ্গে তাঁর অনুরোধ, এ সব বলে তাঁকে যেন আরও বিপদে ফেলা না হয়। পরে অবশ্য বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবুকে ফোন করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন চাঁদ। বলেছেন, চিঠিতে সই করা তাঁর ভুল হয়েছে। অর্থাৎ বয়কট ভাঙা নিয়ে তিনি অনুতপ্ত নন!
সমাজবাদী পার্টির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কিরণময়বাবুও জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলেই চাঁদ সভায় ঢুকেছিলেন। রাজ্যসভায় সমাজবাদী সাংসদ কিরণময়বাবুর বক্তব্য, “সংসদীয় গণতন্ত্রে লোকসভা ও বিধানসভার বিশেষ স্থান আছে। এটা রাজনীতির ঊর্ধ্বে। বিধানসভা বা লোকসভার মধ্যে কোনও বিষয়ে শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে মতপার্থক্য বা বিতণ্ডা হতেই পারে। কিন্তু বিধানসভার একটি বিশেষ অনুষ্ঠান, যেখানে রাষ্ট্রপতি ও লোকসভার স্পিকার আসছেন, তা কোনও মতেই বয়কট করা সমীচীন নয়।” পারস্পরিক নানা মতবিরোধ নিয়েও লোকসভার ৬০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে সব দলের প্রতিনিধি একসঙ্গে ছিলেন বলে কিরণময়বাবুর যুক্তি। তবে চাঁদ কেন বয়কটের চিঠিতে সই করতে গেলেন, তার কোনও ব্যাখ্যা সমাজবাদী সূত্রে পাওয়া যায়নি। বলা হচ্ছে, বিষয়টা কিরণময়বাবুও জানতেন না! |